বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের হয়রানির বিষয়টি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি লজ্জার ঘৃণার এবং দেশের মর্যাদাহানিকর বলেও মনে করা হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে এই লজ্জাজনক ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না জনপ্রতিনিধি,কক্সবাজার জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী নেতারা। বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহল গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সাপ্তাহিক দুইদিন ছুটি সাথে বিজয় দিবসের অতিরিক্ত ছুটিতে কক্সবাজারসহ দেশের বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে ছুটে যান করোনাকালীন দুই বছর ঘরবন্দী মানুষ। এই ছুটিতে শুধু কক্সবাজার
ভ্রমণে আসেন দেশ-বিদেশের ৫ লক্ষের অধিক পর্যটক। এ সময় বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সহ কক্সবাজারের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল পর্যটকের ঢল। মিডিয়ার বদৌলতে ব্যাপক পর্যটক আগমনের এই দৃশ্য সরাসরি দেখেছেন দেশ-বিদেশের মানুষ। এতে নতুন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে কক্সবাজারের প্রতি। এতেকরে বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজার ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরী করেছে দেশের পর্যটন অর্থনীতি।
স্বভাবতই কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা অর্থ ব্যায় করতেই কক্সবাজার এসেছিলেন। এই সময়ে কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেস্ট হাউজ, রেষ্টুরেন্ট ও পরিবহন সংস্থাগুলোতে টার্নওভার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। তারপরেও অতিলোভী এবং অতি মুনাফাখোর কিছু ব্যবসায়ী পর্যটকদের কাছ থেকে গলাকাটা ব্যবসা করে পর্যটক হয়রানি বিষয়টিও বিশ্ববাসী অবলোকন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনদিনের বাজেট নিয়ে পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে এলেও অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া খাওয়া-দাওয়া যানবাহন ভাড়া সহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের অপরিণামদর্শী গলাকাটা ব্যবসার কারণে খরচের বাজেট শেষ হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দুই দিনের মাথায় কক্সবাজার ছাড়তে বাধ্য হন।
কয়েকজন পর্যটক এ প্রসঙ্গে বলেন, তিন দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ করে বিমান ভাড়া হোটেলে থাকা খাওয়ায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় সে টাকা দিয়ে ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সহজে ভ্রমণ করা যায়। তাদের প্রশ্ন তা হলে মানুষ কেন কক্সবাজার ভ্রমণ করবে। তারা বলেন, পর্যটকদের সাথে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের দুর্ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য। এটি শুধু কক্সবাজারবাসীর নয়
দেশ ও দেশের মানুষের জন্যও অপমানজনক। এর দায় এড়াতে পারেন না জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরাও।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির হিসাব মতে দুই লক্ষাধিক পর্যটকদের জন্য একসাথে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে কক্সবাজারে। বিজয় দিবসের ছুটিতে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় অনেকেই হোটেলে থাকতে পারেননি। হাজারো পর্যটককে রাত যাপন করতে হয়েছে গাড়িতে, রাস্তায় অথবা আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়িতে। এই অতিরিক্ত পর্যটক এর চাপে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
এই সুযোগে কিছু অতীলোভী ব্যবসায়ী হোটেল রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন সংস্থায় পর্যটকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে এবং পর্যটকদের হয়রানী করেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে টুরিস্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষ কলাতলী বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে কিছু কিছু পর্যটকদের কে তাদের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত ও দিয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, অতিরিক্ত পর্যটক আগমনের সুযোগে কিছু কিছু হোটেল রেষ্টুরেন্টে গলাকাটা ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত টাকা সংশ্লিষ্ট পর্যটককে ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে এপর্যন্ত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এপ্রসঙ্গে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সাপ্তাহিক দুইদিনের ছুটির সাথে অতিরিক্ত সুবর্ণজয়ন্তীর ছুটিতে কক্সবাজারে আশানুরূপ পর্যটক এসেছেন। তবে কিছু কিছু মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। এতে করে কক্সবাজার সম্পর্কে কিছু ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। যা কাম্য নয়। তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার একদিন পর্যটক এর অতিরিক্ত চাপ থাকলেও শুক্রবার শনিবার তা কমে গেছে এবং অনেক রুম খালি ছিল। অতিরিক্ত রুম ভাড়া নেয়া এবং পর্যটক হয়রানীর
বিষয়টি দুঃখ জনক বলে জানিয়ে
বিষয়টি তারা তদারকি করছেন বলেও জানান আবুল কাশেম সিকদার।
এদিকে বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর ছুটিতে কক্সবাজারে আগত পর্যটক হয়রানি বিষয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারের উচ্চ মহল থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
পর্যটক হয়রানীর বিষয়ে
সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে নড়েচড়ে বসেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে পর্যটক হয়রানি বিষয়টি তদন্ত ও বন্ধ করার বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড, সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, হোটল মালিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে পর্যটক হয়রানী বন্ধে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পর্যটক হয়রানি বিষয়ে কক্সবাজার সদরের সংসদ সদস্য, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, আমাদের দেশে পর্যটনে বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পার্শবর্তী দেশসমুহে পর্যটন খাত ডেভলাপ করছে। তাই আমাদের দেশের পর্যটন খাতে সেবার মানটা উন্নত হওয়া উচিত। শুধু ব্যবসা করলে হবে না, এই বিশাল সম্ভাবনা কে ধরে রাখার জন্য পর্যটন খাতে সেবার মানও বাড়াতে হবে।
তা নাহলে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হবে, বাংলাদেশ বিমুখ হবে। এতে করে আমাদের পর্যটন খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি বলেন, পর্যটক হয়রানির সুনির্দিষ্ট যে কোন অভিযোগ থাকলে এগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।