বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘ইয়াওমুল বা’ছ’ বা পুনরুত্থান দিবসে বান্দাহদের আমলসমূহ দু’বার ওজন করা হবে। প্রথমবার মু’মিন ও কাফিরকে পৃথক করার জন্য আমলসমূহ পরিমাপ হবে।
এই পরিমাপে কালিমায়ে ত্বাইয়্যিবাতে’ বিশ্বাসীদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে এবং তারা মুমিনদের মধ্যে পরিগণিত হবে এবং কাফিরদের বদীর’ পাল্লা ভারী হবে এবং তারা জাহান্নামী বলে গণ্য হবে। আর দ্বিতীয়বার মুমিনদের মধ্যে কে সৎ এবং কে অসৎ পার্থক্য করার জন্য শুধু মুসলমানদের আমল ওজন করা হবে। এ পরিমাপে যাদের নেকীর পাল্লা ঝুঁকে যাবে বা ভারী হবে, তারা সফলকাম বলে বিবেচিত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি লাভ করবে। আর যাদের বদ আমলের পাল্লা ঝুঁকে যাবে, তারা ব্যর্থ বলে বিবেচিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নির্ধারিত মেয়াদে শাস্তি ভোগ করে মুক্তিপাবে আবার কেউ কেউ সাফায়াতের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করবে।
এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআন ও আল হাদীসে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। যেমন (ক) আল্লাহ ফরমান : যার মানদন্ড ভারী হবে সে আনন্দময় জীবন লাভ করবে। আর যার মানদন্ড হালকা হবে, সে ‘হাভীয়ার’ অধিবাসী হবে। আপনি কি জানেন তা’কী? তা’হলো উত্তপ্ত অগ্নি। (সূরা আল ক্বারিয়াহ : আয়াত ৬-১১)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : যাদের পরিমাপ যন্ত্র ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পরিমাপ যন্ত্র হালকা হবে, তারা নিজেদেরকে ধ্বংস করেছে। তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। (সূরা আল মুমিনুন : আয়াত ১০২-১০৩)।
(গ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : হযরত নূহ (আ.)-এর ওফাত লাভের সময় নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর দু’পুত্রকে আহ্বান করে বললেন আমি তোমাদের দু’জনকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ধারণ করতে নির্দেশ দিচ্ছি। নিশ্চয়ই আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সকল কিছু যদি মীযানের এক পাল্লায় রাখা হয়, আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্য পাল্লায় রাখা হয়, তবে কালেমার পাল্লাটি অপর পাল্লা হতে ভারী হবে। (কানজুল উম্মাল: ১৬/১০৭)।
(ঘ) হযরত খাইছামা বিন সুলাইমান স্বীয় সনদে হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) হতে রেওয়ায়েত করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : পুনরুত্থানের দিন পরিমাপ যন্ত্রসমূহ স্থাপন করা হবে। নেকী ও বদীসমূহ ওজন করা হবে। অনন্তর যার নেকীসমূহ বদীসমূহের ওপর সামান্য পরিমাণও প্রাধান্য পাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যার মন্দ আমলসমূহ ভালো আমলসমূহের ওপর প্রাধান্য লাভ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (আত্ তাসকিরাহ : লিলকুরতুবী-পৃষ্ঠা-২৭৭)।
বান্দাহর আমলসমূহকে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করে শ্রেণি বিন্যাস করতে পারি। যথা : (ক) উক্তি বাচক আমল, (খ) কর্মবাচক আমল (গ) দেহিক আমল ও (ঘ) আর্থিক আমল। এই সকল প্রকার আমলই পুনরুত্থান দিবসে ওজন করা হবে। আমল ওজন করা বলতে আমলনামা ওজন করা অথবা আমেল বা আমলকারীকে ওজন করা মোটেই বুঝায় না। মোটকথা, আমল ওজন করা হবে। অন্য কিছু নয়। হাদীসে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে।
যথা (ক) আল্লাহপাক ফরমান : সরিষা পরিমাণ আমল হলেও আমি তা হাশরের ময়দানে আনয়ন করব। হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আল আম্বিয়া : আয়াত-৪৭)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : সে দিন সকলেই তার আমল উপস্থাপিত পাবে, তা ভালো হোক বা মন্দ হোক। (মন্দ আমলকারী নফস) কামনা করবে, হায়! যদি তার ও এদিনের মধ্যে দূরতম ব্যবধান সূচিত হতো! (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৩০)।
(গ) আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে, অধিকতর সঠিক কথা হলো এই যে, আখিরাতে আমলসমূহকে দৈহিক রূপ প্রদান করা হবে। অথবা কোনো দেহে সেগুলোকে প্রবিষ্ট করানো হবে। অনুগত ও বাধ্য বান্দাহদের আমলসমূহ সুন্দর ও সুশ্রী রূপে এবং অবাধ্য ও অপরাধী বান্দাহদের আমলসমূহ কুশ্রী ও বিশ্রী রূপে পরিদৃশ্য হবে। অনন্তর তা’ ওজন করা হবে। (ফাতহুলবারী শরহে বুখারী : ১৩/৬৫৯)
(ঘ) একদল উলামায়ে কেরাম বলেন : বান্দাহর কর্ম, উক্তি, দৈহিক ও আর্থিক সকল প্রকার আমলই সে দিন আল্লাহর নির্দেশ মতো দেহ ধারণ করবে। অনন্তর তা পরিমাপ করা হবে। (উমদাতুল ক্বারী: শরহে বুখারী; ১৬/৭৩৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।