বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমলনামা বণ্টনের পর তা পাঠ করার নির্দেশ দেয়া হবে। প্রত্যেকের আমলনামা দেখা ও পড়া হয়ে গেলে হিসাব কিতাব শুরু হবে। কিরামান ও কাতেবীন ফিরিশতাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থিত করা হবে। সাক্ষীগণের আগমন হবে।
পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূল আখেরী নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর উম্মতগণকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করা হবে। মানব দেহের অঙ্গ সমূহ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সে দিন হাত, পা, ও দেহের যে কোনো অঙ্গকে ইচ্ছা করলে আল্লাহপাক বাকশক্তি দান করে তার নিকট হতে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। যাতে অপরাধীর অপরাধ প্রমাণে কোনোরকম অসম্পূর্ণতা বা দুর্বলতা না থাকে। আল কোরআনে মহান রাব্বুল আলামীন এ সকল বিষয়াদি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
যথা (ক) ইরশাদ হয়েছে : নবী ও শহীদগণকে আনয়ন করা হবে এবং তাদের মাঝে হক ও সত্যের সাথে ফায়সালা ও মীমাংসা করা হবে। (সূরা যুমার : আয়াত-৬৯)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : ওই সময় কেমন অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে সাক্ষী উপস্থাপন করব। আর আপনাকে তাদের সকলের ওপর সাক্ষী হিসাবে হাজির করব। (সূরা আননিসা : আয়াত-৪১)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : সে দিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন মানুষের জিহ্বা, হাত এবং পাসমূহ তাদের আমল সম্পর্কে সাক্ষ্য দান করবে। (সূরা আন্ নূর : আয়াত-২৪)।
(ঘ) ইরশাদ হয়েছে : সে দিন আমি মানুষের মুখসমূহে মোহর করে দেব, তাদের অন্তরসমূহ আমার সাথে কথা বলবে, তাদের পাসমূহ সাক্ষ্য দিবে, ওই সকল কাজের ব্যাপারে যা তারা কামাই করেছে। (সূরা ইয়াসীন : আয়াত-৬৫)। (ঙ) (সে দিন) প্রত্যেক প্রাণী উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে একজন পরিচালক ও একজন সাক্ষী। (সূরা ক্বাফ : আয়াত-২১)।
প্রসঙ্গত স্মর্তব্য যে, পুনরুত্থান দিবসে আমলসমূহের পরিমাপ করা নিশ্চিত সত্য। এ সত্য চিরায়ত ও অবিনশ্বর। পুনরুত্থানের দিন গণনার পদ্ধতিতে হিসাব কিতাব হবে না। সুতরাং সেদিন কার কতটা বদী আছে, বা কার কতটা নেকী আছে তা’ গুনে গুনে দেখা হবে না। বরং নেক আমল ও বদ আমল দাড়ি-পাল্লায় ওজন করা হবে।
এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআন ও আল হাদীসে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি বিদ্যমান আছে। যথা (ক) আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : সেদিন আমলসমূহের পরিমাপ করা হবে নিশ্চিত। যাদের (নেকের) ওজনের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত-৮)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : আমি পুনরুত্থানের দিন ন্যায় বিচারের তারাজু (দাঁড়িপাল্লা) স্থাপন করব। সুতরাং কোনো প্রাণীর ওপর সামান্যতম অবিচার করা হবে না। কারো সরিষার দানার পরিমাণ আমল থাকলেও তা আনয়ন ও উপস্থাপন করব। হিসাবের জন্য আমিই যথেষ্ট। (সূরা আল আম্বিয়া. আয়াত-৪৭)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমাণ নেক আমল করেছে সে তা উপস্থিত দেখতে পাবে। আর যে বিন্দু পরিমাণ মন্দ আমল করেছে সে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল : আয়াত-৭-৮)।
(ঘ) হযরত সালমান আল ফারেসী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : পুনরুত্থান দিবসে পরিমাপ যন্ত্র স্থাপন করা হবে। সেই পাল্লাতে আসমান ও জমিনকে ওজন করলেও তাতে স্থান সঙ্কুলান হবে। ফিরিশতাগণ বলবেন : হে আমাদের পরোয়ারদিগার! ওই পাল্লা দ্বারা কার আমল ওজন করবেন? আল্লাহপাক বলবেন : আমার মাখলুক হতে যার আমলের ইচ্ছা করি। ফিরিশতাগণ বলবেন : হে আল্লাহ! আপনি মহা পবিত্র। আমরা আপনার ইবাদত যথা-যথভাবে করতে পারিনি। (মোস্তদরাকে হাকেম: খন্ড-৪, পৃষ্ঠা ৫৮৬)।
(ঙ) মীযান এমন এক পরিমাপ যন্ত্রের নাম যার দ্বারা আমলসমূহের পরিমাপ করা ও পরিমাণ জানা যাবে। তবে, মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি, বিজ্ঞান ও গবেষণা তার প্রকৃত স্বরূপ অনুধাবনে পুরাপুরী অক্ষম। বহু হাদীসে এর সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। হাদীস শরীফে আছে, উক্ত মীযানের একটি দন্ড ও দুটি পাল্লা থাকবে। দুটি পাল্লার একটিতে নেক আমল এবং অন্যটিতে বদ বা মন্দ আমল স্থাপন করা হবে। বান্দাহর নেক আমলসমূহের পাল্লা যদি ভারী হয়, তবে বান্দহ মুক্তি পাবে। আর যদি উক্ত পাল্লা হালকা হয় তবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মীযানের দন্ডটির দৈর্ঘ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের রাস্তা। তার একটি পাল্লা হবে নূরের এবং অপর পাল্লাটি হবে অন্ধকারের। এ বর্ণনার সনদ যদি বিশুদ্ধ হয়, তবে হাশর বাসীর সামনে, উক্ত মীযানের পাল্লা প্রকাশ পাওয়া ও তা’ দৃশ্যায়ন হওয়া আদৌ অসম্ভব হবে না। কারণ, পুনরুত্থান দিবসের সব কিছুই হবে অভিনব পদ্ধতিতে। (আততাযকিরাহলিল কুরতুবী : পৃষ্ঠা-২৭৭-২৭৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।