পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটি ট্রেড লাইসেন্স। এক লাইসেন্সের নম্বর ব্যবহার করে একই ব্যক্তি খুলেছেন ৭টি প্রতিষ্ঠান। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই কাগুজে। এসব ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ ব্যবহার করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ফাইলেরিয়া হাসপাতাল প্রকল্প’ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। কথিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক আবার ফাইলেরিয়া হাসপাতালেরই সাবেক চেয়ারম্যান। আদালতে দায়েরকৃত এক মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে এসব তথ্য। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তফসিলভুক্ত হওয়ায় এটি তদন্ত করছেন সংস্থার উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ।
এজাহারের তথ্য মতে, চলতি বছর ৩মে ঢাকার আদালতে একটি সিআর মামলা (নং-৪৩৩/২০২১) দায়ের হয়। মামলাটিতে ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩৪/১০৯/১২০খ/৪০৬/৪১৭/৪২০/৪২৩/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/
৪৭৪/৫০৬ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন ‘ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলজি অব বাংলাদেশ’ (আইএসিআইবি)র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মোয়াজ্জেম হোসেন। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার, তার স্বামী মো. হাবিবুর রহমান, মো: হেলালউদ্দিন, মো. জহিরুল হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল জলিল মজুমদার, কাজী বোরহান সাদেক মামুন, মো: খাজা আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, মো: জিয়াউর হক, মো: নাজমুল ইসলাম এবং আছিয়া আক্তারকে আসামি করা হয়।
এজাহারে উল্লেখিত তথ্য এবং রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বিবেচনায় ঢাকার শহরতী সাভারের জিঞ্জিরায় সরকার ‘৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফাইলেরিয়া হাসপাতাল উইথ অ্যানসিল্যারি ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়। ‘আইএসিআইবি’ এবং সরকার যৌথ মালিকানায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। এতে ব্যয়যোগ্য অর্থের মধ্যে ৮০% সরকার এবং ২০% আইএসিআইবি’র বহন করার কথা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন ৬৭.৭০ শতাংশ জমির ওপর ২০১০-২০২১ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পে ১০ তলা ফাউন্ডেশন এবং বেইজমেন্ট্সহ ৪র্থ তলা ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য অনুমোদিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি ২৭ লাখ লাখ টাকা (জিওবি অংশ) বাদী প্রতিষ্ঠানেও এর অংশ ২.৬৭ কোটি টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটির ভূমির ওপর ৪ তলা ভবন নির্মাণ এবং ভবনের ভেতর যাবতীয় হাসপাতাল সরঞ্জামাদি সরবরাহের জন্য ২০১১ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর করা হয় ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনকে। তিনি ২০১১ সালের ৮ এপ্রিল দরপত্র বিজ্ঞপ্তি (স্মারক নং-IACIB/MOS W/FH-Savar,Dhaka/2011/94) । এ টেন্ডারে ‘মেসার্স রাকাব ট্রেডার্স করপোরেশন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ‘ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলজি অব বাংলাদেশ’র তৎকালিন চেয়ারম্যান মোসা. নাছিমা আক্তারের স্বামী মো. হাবিবুর রহমান। ওই টেন্ডারে আরো ৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এগুলো হচ্ছে- মেসার্স উপকূল ট্রেডার্স, মেসার্স তাহিয়া এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সারা ট্রেড করপোরেশন, মেসার্স সাব্বির অ্যান্ড অর্ক কনস্ট্রাকশন, মেসার্স এম. এ. কে. ট্রেডার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন এবং মেসার্স আর. আর. এন্টারপ্রাইজ। নাছিমা আক্তারের স্বামী, ভাই, ভাগিনা, দেবর, অফিস সহকারী এসব প্রতিষ্ঠানের একক এবং যৌথ মালিক। অর্থাৎ সবগুলো প্রতিষ্ঠানই নাছিমা আক্তারেরই বেনামী প্রতিষ্ঠান।
টেন্ডারে ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিরা সুপরিকল্পিতভাবে চাতুর্যের সঙ্গে ভবন নির্মাণের টেন্ডার বাগিয়ে নেন। একই ট্রেড লাইসেন্সর নম্বর একাধিকবার ব্যবহার করে রাতারাতি তৈরি করেন এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠান। কথিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের ছবি ও ঠিকানা পরিবর্তন করে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয়। জাল কাগজে ৭টি প্রতিষ্ঠানই অংশ নেয় টেন্ডারে। এজাহারে উল্লেখিত ১ নম্বর আসামি নাছিমা আক্তার মেসার্স রাকাব ট্রেডার্স করপোরেশন ও স্বত্বাধিকারী হিসেবে এ টেন্ডারে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা হন। ১ নম্বর আসামি নাছিমা আক্তার ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ফাইলেরিয়া হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলেন। নিজে চেয়ারম্যান হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ১ ও ২ নম্বর আসামি অন্যান্য আসামিদের সাথে যোগসাজশ করে ‘ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল’ ভবন নির্মাণের টেন্ডার পান।
এজাহারের তথ্য মতে, আসামিদের যোগসাজশে প্রতিটি টেন্ডারে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবে পঞ্চম তলা ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু টেন্ডারের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবের কভার পৃষ্ঠায় লেখা হয় ৪র্থ তলা। প্রকল্প পরিচালকসহ কারিগরী মূল্যায়ণ কমিটির (টিইসি) সকলকে ধোঁকা দিয়ে ৪র্থ তলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ নেন। পরবর্তীতে ৯ ও ১০ নম্বর আসারা প্রকল্প পরিচালককে ম্যানেজ করে ‘পঞ্চম তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে’-মর্মে এজি অফিস থেকে পুরো বিল উঠিয়ে নেন।
এজাহার মতে, ভবনের জন্য লিলেন ও তৈজস সামগ্রির জন্য ২০১১ সালের ৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেয় চারটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে- এটলাস ট্রেডিং করপোরেশন, জীবন আফরোজ এন্টারপ্রাইজ, দি ওয়ার্ল্ড বিজনেস সেন্টার এবং মেসার্স এ. এম. এন্টাপ্রাইজ।
এখানে ‘জীবন আফরোজ এন্টারপ্রাইজ’ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায়। একইভাবে প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০১১ সালের ৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতেও অংশ নেয় চারটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে- জীবন আফরোজ এন্টারপ্রাইজ, তাহিয়া এন্টারপ্রাইজ, মোস্তফা সার্জিক্যাল এবং মেসার্স বায়োগিয়ার্স। এখানে বায়োগিয়ার্স ‘সর্বনিম্ন দরদাতা’ হিসেবে কার্যাদেশ পায়। ভবনের আসবাব-সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ২০১১ সালের ৮ আগস্ট টেন্ডার করা হয়। এতে ৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এগুলো হচ্ছে- সারা ট্রেড করপোরেশন, নকশী বাংলা এবং ম্যাক ট্রেডার্স। এখানে ‘সারা ট্রেডার্স’ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায়। একই তারিখ অফিস সরঞ্জাম সরবারের জন্য বাদী টেন্ডার আহ্বান করলে ৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এগুলো হচ্ছে- মাল্টি লিংক এন্টারপ্রাইজ, দি ওয়ার্ল্ড বিজনেস সেন্টার, তাহিয়া এন্টারপ্রাইজ এবং সারা এন্টারপ্রাইজ। ‘তাহিয়া এন্টারপ্রাইজ’ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায়। টেন্ডারে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে দেখানো হলেও সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মালিক একজন। প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স এক। ঠিকানাও ব্যবহার করা হয়েছে ঘুরে-ফিরে কয়েকটি। যেমন-রাকাব ট্রেড করপোরেশন, ২৮/এফ, টয়নবী সার্কুলার রোড, ৩য় তলা, ঢাকা। এটি শেয়ার হোল্ডার ‘রাকাব ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’, সিলিকন আনোয়ার, এপার্টমেন্ট ৫-বি, ১৪২, মধ্য বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা। মালিক- এন. কে এন্টারপ্রাইজ, ৪৪২, উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকা। বর্তমানে গ্রীণ সিটি এইজ, লেভেল ১০, এ-২, ৮৯, কাকরাইল, রমনা, ঢাকা। বর্তমানে বাড়ি-১৮ এফ, ফ্ল্যাট নং-০৪-বি, রোড নং-০৩, থানা-ধানমন্ডি, ঢাকা।
বায়োগিয়ার্স’র মালিক দেখানো হয়েছে, হাবিবুর রহমান, পিতা-আব্দুল গোফরান, মাতা-জীবন আরা বেগম। ঠিকানা-৫০, নয়াপল্টন, ডিআইটি এক্স, স্যুট-১১/৩, ইস্টার্ন ভিউ, ঢাকা। বর্তমান-গ্রিণ সিটি এইজ, লেভেল-১০, এ-২, ৮৯, কাকরাইল, রমনা, ঢাকা। একই ব্যক্তি ‘আর্ক কনস্ট্রাকশন’র মালিক। এটির ঠিকানা-২০৫/৩, ফকিরাপুল কালভার্ট রোড, ঢাকা।
মাল্টি লিংক ইন্টারন্যাশনাল’র ঠিকানা-৯৩/ক, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। এটির ম্যানেজিং পার্টনার ‘রাকাব ট্রেড করপোরেশন’। যার ঠিকানা-২৮/এফ, টয়নবি সার্কুলার রোড, ৩য় তলা, ঢাকা। বর্তমান- গ্রিন সিটি এইজ, লেভেল-১০, এ-২, ৮৯, কাকরাইল, রমনা, ঢাকা। একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং পার্টনার ‘ম্যাক ট্রেডার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন’। ঠিকানা-৮২০, মামুন টাওয়ার, পশ্চিম শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা। হাবিবুর রহমান ‘রাকাব ডেভেলপমেন্ট লি:’রও পরিচালক। ঠিকানা- সিলিকন আনোয়ার, এপার্টমেন্ট ৫-বি, ১৪২, মধ্যবাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা। বর্তমান ঠিকানা- বাড়ি-১৮ এফ, ফ্ল্যাট নং-০৪বি, রোড-০৩, ধানমন্ডি, ঢাকা।
আব্দুল জলিল মজুমদার ‘ম্যাক ট্রেডার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন’র মালিক। কাজী বোরহান সাদেক মামুন ‘জীবন আফরোজ এন্টারপ্রাইজ’র মালিক। মো. খাজা আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ ‘নকশী বাংলা’র মালিক। প্রকৌশলী জিয়াউল হক, প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলামকে দেখানো হয়েছে রাকাব ট্রেড করপোরেশনের কর্মকর্তা হিসেবে। আসামি আছিয়া আক্তারকে দেখানো হয়েছে রাকাব ট্রেড করপোরেশনের ফাইন্যান্স ম্যানেজার।
মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, জাল-জালিয়াতির বিষয় থাকায় মামলাটি প্রথম সিআইডি তদন্ত করছিল। কিন্তু সরকারি অর্থ আত্মসাৎ হওয়ায় আদালত পরে তদন্তের জন্য মামলাটি দুদকে পাঠায়। তদন্ত চলছে। কার কি সংশ্লিষ্টতা, তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।