Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপর্যয়ে বেড়েছে সুন্দরবনের নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৫ পিএম | আপডেট : ৮:৩১ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১

বেড়ে চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নোনা পানিতে কাজ করে জটিল স্ত্রী রোগে ভুগছেন সুন্দরবন অঞ্চলের নারীরা৷ এই সমস্যা সমাধানে তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উপর জোর দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা৷

“নোনা পানির দৌরাত্ম্যে চাষবাস প্রায় উঠে গেছে৷ ফলে জীবিকার জন্য মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হয়েছে৷ মীন ধরা ছাড়া আর তেমন বিকল্প কোথায়?” বলছিলেন রেবা বিশ্বাস৷ দীর্ঘদিন সুন্দরবন অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেছেন তিনি৷

বাস্তবিকই একের পর এক বিপর্যয়ে সংকট বেড়েছে সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবী মানুষের৷ এর মধ্য চাপা পড়ে থাকছে নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যার কথা৷ নোনা নদীতে বাগদা চিংড়ি ধরা নয় শুধু, নোনা পুকুরে গোসল করে, বন্যায় ভেসে যাওয়া ঘরে কোমরপানিতে দিনের পর দিন কাটে মেয়েদের৷ যার কারণে দেখা দিচ্ছে নানা জটিল স্ত্রী রোগের প্রকোপ৷ মেডিকেল ক্যাম্প করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷

হাজার হাজার নারীরা দিনে প্রায় সাত-আট ঘণ্টা কাটান নোনা পানির নদী ও ভেড়িতে৷ পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখায় রোগাক্রান্ত হচ্ছেন তারা৷ সরবেড়িয়ার স্বাস্থ্যকর্মী সুভদ্রা মন্ডল বলেন, “এদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রতি মাসে পয়সা দিয়ে কিনে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন না৷ কাপড়ের ওপরে নির্ভর করেই মাসিকের দিন চলে৷ চর্মরোগ আর সাদা স্রাবের সমস্যা এখানে ৬০ শতাংশ মহিলার৷”

কোভিড পরিস্থিতিতে নারী স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ ব্যাহত হয়েছে অন্যান্য পরিষেবার মতো৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শ্যামল চক্রবর্তী নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্প করেন সুন্দরবনের বানভাসি গ্রামগুলিতে৷ তিনি বলেন, “জনস্বাস্থ্যের সমস্যা রয়েছে অনেকটাই৷ আমরা প্রেগনেন্ট মহিলাদের নুন কম খেতে বলি, কিন্তু লিটারে প্রায় ২০ গ্রাম নুন রয়েছে এখানকার পানিতে৷ নোনাপানিতে যোনিপথ স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে৷ গর্ভপাতের কেসও পাচ্ছি৷ বাংলাদেশেও নোনা পানির জন্য প্রি-অ্যাক্লেমসিয়া পাওয়া গিয়েছে৷” চিকিৎসকেরা বলছেন, বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্য ভারতের তুলনায় উন্নত৷

চিকিৎসকেরা দেখেছেন, এইসব প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের অযথা রক্তক্ষরণ এবং ইন্টারকোর্সে ব্যথা, ইউরিনারি ট্র্যাকে সংক্রমণের জন্য প্রস্রাবের জ্বালা ভোগ করতে হয়৷ যোনি, গর্ভাশয়ে সংক্রমণ ও পিআইডির সমস্যা এখানে প্রচুর৷ নোনাপানিতে কাজ করে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের মতো রোগের প্রকোপও বাড়ছে৷ আমপান থেকে ইয়াস, সবক্ষেত্রেই এই সমস্যাগুলি বেড়েছে৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী মনে করেন, “বিষয়টা শুধু পরিচ্ছন্নতা বা সচেতনতার নয়৷ মানুষের কাছে বিকল্প কাজ নেই বলেই মহিলারা মাছ ধরতে নোনা পানিতে থাকছেন৷ এ জন্য সরকারকে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে৷”

সুন্দরবনে নিকটতম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বলতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র৷ বহির্বিভাগের চিকিৎসা মিললেও মেলে না ইনডোর চিকিৎসা৷ পয়সা খরচ করে শহরে আসা ছাড়া উপায় নেই৷ ফলে রোগ চেপে চেপে বেড়ে যাওয়াটা এ অঞ্চলের বড় সমস্যা৷ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে পদ্মশ্রী চিকিৎসক, ‘সুন্দরবনের সুজন’ ডাঃ অরুণোদয় মণ্ডল বলেন, “সরকারের সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল৷ দুয়ারে সরকার নয়, দুয়ারে চিকিৎসা পৌঁছতে হবে৷ মহিলারা সাংঘাতিকভাবে অবহেলিত৷ রেগুলার চেক- আপ যদি করা যেত, তাহলে অনেক রোগই ধরা পড়ত৷” সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুন্দরবন

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ