Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্থাপত্য হিসেবে নজর কাড়ছে কারখানার ক্যান্টিন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২১ পিএম

ব্রাজিলের প্রবাদপ্রতীম স্থপতির শেষ সৃষ্টি কিনা এক কারখানার ক্যান্টিন! কিন্তু একাধিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সেই স্থাপনা অবহেলা করার কোনো জো নেই৷ ক্যান্টিনের বাসনপত্রও স্থাপত্যকে অনুযায়ী বাছাই করা হয়৷

লাইপসিশ শহরের শিল্প এলাকার মাঝে একটি ভবনের দিকে নজর দিলে মনে হতে পারে যে, অপার্থিব জগতের কোনো বস্তু সেটির গায়ে আটকে গেছে৷ লুডভিশ ক্যোনে নামের এক উদ্যোক্তা এমন অপ্রচলিত ভবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই গোলক অনেকটা মহাকাশযানের মতো দেখতে৷ সেটি কি সবে এখানে নেমেছে, নাকি এখনই উড়ে যাবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই৷ আকাশের সঙ্গে যেন সংলাপ চালাচ্ছে৷ আকাশ পুরোপুরি নীল থাকলে গোলকের রং একঘেয়ে লাগে৷ মেঘে ঢাকা আকাশের নীচে রংয়ের খেলা দেখা যায়, মনে হয় যেন মেঘের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে৷''

স্থাপনার ডিজাইনার অস্কার নিমায়ারের নামে এই গোলকের নাম নিমায়ার-স্ফিয়ার রাখা হয়েছে৷ ২০১১ সালে লুডভিশ ক্যোনে ব্রাজিলের এই তারকাকে এই ব্যতিক্রমী আইডিয়া দিয়েছিলেন৷ কারখানার নিজস্ব ক্যান্টিনটিকে ইভেন্ট লোকেশন হিসেবে ব্যবহারের জন্য আলাদা স্থাপনা চেয়েছিলেন তিনি৷ ১০৩ বছর বয়স সত্ত্বেও নিমায়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্যোনে বলেন, ‘‘তার মতো ব্যক্তিত্বকে কারখানা নির্মাণের কাজে শামিল করার আইডিয়াটি নিমায়ারের বেশ উদ্ভট লেগেছিল৷ কারণ কাব্যিক, সুন্দর ও কেজো স্থাপত্যের মধ্যে জোরালো বৈপরিত্য সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ প্রথম মুহূর্ত থেকে আমাদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল৷ আমি নিজের প্রয়োজনের কথা বলেছিলাম এবং তিনি প্রবল উৎসাহ নিয়ে জার্মানিতে আবার নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন৷''

অস্কার নিমায়ার বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দূরদর্শী স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত৷ তার হাতে তৈরি ১৯৫০-এর দশকের শেষে ব্রাজিলের রাজধানী শহর ইউনেক্সোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ তার মধ্যে ব্রাসিলিয়া শহরের ক্যাথিড্রাল ও ব্রাজিলের জাতীয় সংসদ ভবনও রয়েছে৷ ১৯৫৭ সালে বার্লিনে অস্কার নিমায়ার ভবনের উদ্বোধন হয়েছিল৷ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সেই আধুনিক বসতি সবার নজর কেড়েছিল৷ স্পেনের আভিলেস শহরে ‘সেন্ট্রো নিমায়ার' নামে এ সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে৷ নিমায়ারের সৃষ্টি সম্পর্কে লুডভিশ ক্যোনে বলেন, ‘‘সবকিছু কিছুটা ভাসমান মনে হয়৷ সবাই জানে, তার অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিলো আকাশ৷ তিনি সবসময়ে আকাশের আকার-আকৃতির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ আকাশের আরও কাছাকাছি আসতে এই ভবনের তুলনা মেলা ভার৷''

লুডভিশ ক্যোনের কোম্পানি রেলের ক্রেন ও ট্রামের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ৷ কারখানার ক্যান্টিন ভবনের জন্য তিনি বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলেন৷ তার রাঁধুনী হিসেবে টিবর হ্যারৎসিশকাইট নিজস্ব রেস্তোরাঁর দৌলতে খ্যাতি অর্জন করেছেন৷ তা সত্ত্বেও ক্যান্টিনের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করতে চান না তিনি৷ রোদের তাপে গোলকটি যাতে বাড়াবাড়ি রকম গরম না হয়ে ওঠে, সেটা নিশ্চিত করতে ট্যাবলেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে স্তরগুলি আলাদা করে অন্ধকার করা যায়৷ একটি ক্লিকের মাধ্যমে কাচের স্তরগুলির মাঝে তরল ক্রিস্ট্যাল চার্জ করা যায়৷ ফলে সানগ্লাসের মতো মনোরম সুরক্ষা সৃষ্টি করা যায়৷

স্ফিয়ার ছিল অস্কার নিমায়ারের শেষ আইডিয়া৷ ২০১২ সালে তার মৃত্যুর পরেও ব্রাজিলে তার দফতর ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করে চলেছে৷ জার্মানির স্থপতি হারাল্ড ক্যার্ন সেই সব পরিকল্পনা কার্যকর করার দায়িত্ব পেয়েছেন৷ প্রায় ৩০ লাখ ইউরো মূল্যের স্থাপনাটির কাজ শেষ করতে আট বছর সময় লেগেছে৷ এমন দায়িত্ব নেওয়া সহজ না হওয়ায় অনেক নির্মাণ কোম্পানি পিছিয়ে এসেছিল৷ ক্যার্ন বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৌণিক এবং বর্গক্ষেত্রের কথা ভাবে৷ এমন আকার-আকৃতিতে তারা অভ্যস্ত নয়৷ প্রথমত সিমেন্টের মান খুব উঁচু হতে হবে, অন্যদিকে কাচের এফেক্ট ক্রিস্ট্যালের মতো হতে হবে৷''

সপ্তাহে একটি সন্ধ্যায় সেই গোলক দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়৷ রেস্তোরাঁর নাম ‘সেউ'৷ ব্রাজিলীয় পোর্তুগিজ ভাষায় যার অর্থ আকাশ৷ দশ কোর্সের পদগুলি সচেতন ভাবেই ছোট প্লেটে পরিবেশন করা হয়৷ কারণ কাচের গম্বুজের নীচে বড় বাসনের বেশি প্রতিফলন ঘটতো৷ শেফ হিসেবে টিবর হ্যারৎসিশকাইট বলেন, ‘‘বড় প্লেটে পরিবেশন করতে শুরু করলে বাইরের কোনো দৃশ্য আর চোখে পড়বে না৷ মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এমন সব ব্যবস্থা করতে হয়৷ কোথায় প্রতিফলন ঘটবে, কোথায় তা কাম্য নয় সেটা স্থির করতে হয়৷ সম্ভব হলে মানুষ যাতে খাবারের প্লেট নিয়ে ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করতে পারে, সেই সুযোগও দিতে চাই৷'' অস্কার নিমায়ারের শেষ ডিজাইনের সাফল্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রাজিল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ