বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কিয়ামত কায়েম হওয়ার পর চল্লিশ বছর কেটে যাবে। তারপর দ্বিতীয় বার শিংগায় ফুৎকার ধ্বনিত হবে। প্রথম ফুৎকারের পর সকল সৃষ্টজীব ধ্বংস হয়ে যাবে। ফিরিশতাকুল মৃত্যুবরণ করবে। এমন কি ইসরাফিল (আ.)ও ইন্তিকাল করবেন।
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জীবিত করে পুনরায় শিংগায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ করবেন। ফলে সকল সৃষ্টজীব পুনরায় জীবন লাভ করবে। এই ভূমন্ডল অন্য এক ভূমন্ডলে রূপান্তরিত হবে। মৃত ব্যক্তিরা কবর হতে নির্গত হয়ে হাশর ময়দানে সমবেত হতে থাকবে। কেউ দৌড়ে, কেউ ধীরগতিতে কেউ বা পা হ্যাঁচরাতে হ্যাঁচরাতে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। সকলে বিবস্ত্র অবস্থায় আল্লাহর সমীপে হাজির হবে। সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকলেই সমবেত হবে। সে দিনের হাজিরা থেকে কেউ বাদ পড়বে না। তারপরেও সকলেই হবে একা। প্রত্যেকেই আপনাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে।
তখনকার একদিন পৃথিবীর হিসাবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমপরিমাণ হবে। সূর্য অতি নিকটবর্তী হবে। যার উষ্ণতায় ও উত্তাপে মানুষের মাথার মগজ গলে যাবে। প্রত্যেক গুনাহগার নিজের গোনাহের পরিমাণে ঘামের সাগরে ডুবে থাকবে। সেদিন সকলেই ক্ষুর্ধাত, তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দন্ডায়মান হবে। সে দিনের অবস্থার কথা আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে।
যথা. (ক) সেদিন শিংগায় ফুৎকার ধ্বনিত হবে। আসমান ও জমিনের সকল প্রাণী বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সে নয়। অতঃপর দ্বিতীয় ধ্বনি ফুৎকার হলে সকলেই এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে দাঁড়িয়ে যাবে। (সূরা আয যুমার : আয়াত ৬৮)।
(খ) সে দিন আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। সকলেই নিজের চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে। আল্লাহ তায়ালার অত্যন্ত রাগ ও ক্ষোভের অবস্থায় থাকবেন। হিসাব কিতাব শুরু হতে দীর্ঘ বিলম্ব হবে। হাশরের ময়দানের তীব্র গরম, ক্ষুধা, পিপাসা সহ্যের সীমা অতিক্রম করবে। মানুষ পালানোর চেষ্টা করবে, কিন্তু পালানোর কোনো পথ পাবে না। কিছু লোকের মুখমন্ডলে সজীবতা, উজ্জলতা বিরাজ করবে। তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে। কিছু লোকের চেহারা ঝিমিয়ে পড়া ও কৃষ্ণকায় দেখাবে। তাদের ওপর পতিত হবে আল্লাহ পাকের গজব ও অসন্তুষ্টি।
সে দিন সকলের ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব বিদায় নিবে। অবশ্য নেককার লোকদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক অটুট থাকবে। সে দিনের ভয়াবহতা শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিবে। সেই ভীত বিহবল অবস্থায় দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর সুপারিশের আশায় মানুষ হযরত আদম (আ.)-এর নিকট হাজির হয়ে সুপারিসের দরখাস্ত পেশ করবে যেন আল্লাহপাক অতিদ্রুত হিসাব কিতাব শুরু করেন। তিনি হযরত নূহ (আ.)-এর নিকট পাঠাবেন। তিনি হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর নিকট। তিনি হযরত মূসা (আ.)-এর নিকট। তিনি হযরত ঈসা (আ.)-এর নিকট পাঠাবেন। তিনি বলবেন, এ কাজের জন্য তোমরা বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট গমন কর।
অর্থাৎ কেউ আল্লাহর দরবারে এ সুপারিশের সাহস পাবে না। সকলে একত্রিত হয়ে এবার মহানবী (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে সুপারিশ করার আবেদন পেশ করবে। তিনি উম্মতগণের দরখাস্ত মঞ্জুর করে সুপারিশের জন্য গমন করবেন এবং আরশে আজীমের নিচে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হবেন। আল্লাহপাক তার অন্তরকে সুপ্রশস্ত করে দেবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। তারপর আল্লাহ পাক বলবেন, হে মোহাম্মাদ (সা.)! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন। আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
অনন্তর তিনি মাথা উত্তোলন করবেন এবং বলবেন-হে আমার পরওয়ার উম্মাতী, উম্মাতী, আমার উম্মত! আমার উম্মত! এদেরকে মুক্তি দান করুন। আল্লাহ পাক বলবেন : হে মোহাম্মাদ (সা.)! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের ওপর কোনো হিসাব নেই তাদেরকে জান্নাতের ডানদিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : শপথ সেই সত্তার! যাঁর হাতে মোহাম্মাদের প্রাণ! জান্নাতের দু’ চৌখাটের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজর প্রদেশের দূরত্বের সমান। অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের সমান। (সহীহ মুসলিম-১/১১১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।