Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপরাধপ্রবণতা রোধে বাস্তব ফর্মুলা-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইবলিশ শয়তান তার হাজারো ডানা মেলে দুনিয়াময় বিচরণ করে আসছে। তার খপ্পর হতে বাঁচার রক্ষাকবচ হচ্ছে কোরআনের আশ্রয়ে থাকা। কেননা কোরআনে শয়তানি প্ররোচনা-প্রতারণার বিবরণ যেমন রয়েছে তেমনি তার কুমন্ত্রণা হতে রক্ষা পাওয়ার সঠিক নোসখাও রয়েছে। এ কোরআনি নোসখার অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোনো কার্যকর পন্থা নেই। অদৃশ্য শয়তান সুকৌশলে মানবক‚ল হতে তার দোসর প্রস্তুত করে রেখেছে। এরা শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অপরাধের প্রসার ঘটিয়ে থাকে।

শয়তানের এ দৃশ্যমান দোসর শয়তানি মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে এমন সব অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে, যা দেখে হয়তো শয়তানও অবাক বিস্মিত হয়। আমাদের সামাজিক ও জাতীয় জীবনের নানাস্তরে শয়তানের দোসররা এমন সব কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকে, যার ফিরিস্তি সুদীর্ঘ। বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে ওরা যেসব অপরাধ ঘটিয়ে থাকে, পর্যালোচনা করলে সেগুলোর ভয়াবহতা আঁচ করা যায়। সুতরাং অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতা রোধ করতে হলে কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা অনুসরণ করার বিকল্প নেই ।

কোরআন ও হাদীসে অপরাধ প্রবণতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। কোরআনে ‘সূরাতুল মায়েদাহ’ এ কয়েক প্রকারের বস্তু হারাম করার কথা বলা হয়েছে। এসব হারাম বস্তুর ব্যবহারে পাপাচার ও অপরাধপ্রবণতা জন্ম নেয়। আয়াতটির অর্থ হচ্ছে: ‘তোমাদের জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে, মৃতজীব, রক্ত, শূকরের মাংস, যে সব বস্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিংয়ের আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে যাকে তোমরা যবেহ করেছ, যে জন্তু যজ্ঞ বেদিতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বণ্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। (আয়াত : ৩)।

এ আয়াতাংশে অনেক মূলনীতি এবং শাখাগত বিধি-বিধান ও মাস্আলা বর্ণিত হয়েছে : (১) প্রথম মাসআলাটি হলো হালাল ও হারাম জন্তু সম্পর্কিত। আলোচ্য আয়াতে ‘মৃত’ বলে ওই জন্তুকে বুঝানো হয়েছে যা যবেহ ব্যতীত কোনো রোগে অথবা স্বাভাবিকভাবে মরে যায়। এ ধরণের মৃত জন্তুর মাংস চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও। তবে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) দুটি মৃতকে বিধানের বাইরে রেখেছেন, একটি মৃত মাছ ও অপরটি মৃত টিড্ডি।

(২) আয়াতে বর্ণিত দ্বিতীয় হারাম বস্তু রক্ত। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাই হারাম। সুতরাং ‘কলিজা’ ও প্লীহা রক্ত হওয়া সত্তে¡ও হারাম নয়। হাদীসে যে মাছ ও টিড্ডির কথা বলা হয়েছে তাতেই কলিজা ও প্লীহা হালাল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৩. তৃতীয় বস্তু শুকরের মাংস। একেও হারাম করা হয়েছে। মাংস বলতে তার সম্পূর্ণ দেহটাকে বুঝানো হয়েছে। চর্বি ইত্যাদিও এর অর্ন্তভুক্ত।

(৪) ওই জন্তু যা আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। (৫) ওই জন্তু হারাম, যাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে অথবা নিজেও কোলো জাল ইত্যাদিতে আবদ্ধ হয়ে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। (৬) ওই জন্তু হারাম, যা লাঠি, পাথর ইত্যাদির আঘাতে নিহত হয়। (৭) ওই জন্তু, যা কোনো পাহাড়-টিলা, উঁচু দালানের উপর থেকে অথবা ক‚পে পড়ে মারা যায়।

(৮) ওই জন্তু হারাম, যা কোনো সংঘর্ষে নিহত হয় যেমন রেলগাড়ি, মোটর গাড়ি নিচে এসে মারা যায় অথবা কোনো জন্তুর শিং এর আঘাতে মারা যায়। (৯) ওই জন্তু, যেটি কোনো হিংস্র জন্তুর কামড়ে মরে যায়।
(১০) ওই জন্তু, যাকে ‘নুছুবের’ উপর যবেহ করা হয়, নূছব ওই প্রস্তরকে বলা হয় যা কাবা গৃহে আগে স্থাপিত ছিল। জাহেলিয়া যুগে আরবরা এদের উপাসনা করত এবং এদের কাছে এদের উদ্দেশ্যে জন্তু কোরবানি করত। একে তারা ইবাদত বলে গণ্য করত। সেকালের আরবরা বর্ণিত সব প্রকারের জন্তুর মাংস ভক্ষণে অভ্যস্ত ছিল। কোরআন পাক এগুলোকে হারাম করেছে।

(১১) ‘এসতেক সামুল আয্লাম’ হারাম। এর অর্থ ওই তীর যা জাহেলিয়াত যুগে ভাগ্য পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ছিল। এ কাজের জন্যে সাতটি তীর ছিল।
তফসীর মা’আরেফুল কোরআন (বাংলা সংস্করণ) হতে আলোচ্য আয়াতে ব্যাখ্যার সংক্ষিপ্তসার উপরে তুলে ধরা হয়েছে। এতে আলেমগণের অভিমত ব্যক্ত করে প্রচলিত এবং বর্ণিত সব বিষয়কে হারাম বলা হয়েছে এবং বণ্টন পদ্ধতিকে ‘ফিসকুন’ বা পাপাচার ও পথভ্রষ্টতা বলা হয়েছে।

তফসীর ‘মাযহারী’র বরাতে এতে আরো বলা হয়েছে, শব্দটি (এসতেকসামুল বিল আযলাম) কখনো জুয়া অর্থেও ব্যবহৃত হয় যাতে গুটিকা নিক্ষেপ অথবা লটারীর নিয়েমে অধিকার নির্ধারণ করা হয়। কোরআন পাক একে ‘মায়সির’ নাম দিয়েও হারাম নিষিদ্ধ করেছে। এ কারণে হযরত ছায়ীদ ইবনে জুবাইর, মুজাহিদ ও শাবী (রহ.) বলেন, আরবে যেমন ভাগ্য নির্ধারকের সাহায্যে অংশ বের করা হয়, পারস্য এবং রোমেও তেমনি আবার ছক, চওসর ইত্যাদি গুটির দ্বারা অংশ বের করা হতো। সুতরাং তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে অংশ নির্ধারণের ন্যায় এগুলোও হারাম।

 



 

Show all comments
  • Mulla Tashfin ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০০ এএম says : 0
    সৃষ্টির শুরুলগ্ন থেকে অদ্যাবধি আদর্শবান যুবসমাজ দ্বারাই পৃথিবী উপকৃত হয়েছে। তাদেরকে দ্বারা সুশৃঙ্খল হয়েছে পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা। মানুষ নিজেদের অধিকার ফিরে পেয়েছে। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধে যুবসমাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
    Total Reply(0) Reply
  • Kafi Akond ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০০ এএম says : 0
    তারা সঠিক পথে থাকলে ভালো থাকবে বাংলাদেশ। গড়ে উঠবে সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ। তারা খারাপ হলে নষ্ট হয়ে যাবে সমাজের চিত্র। ভেঙে পড়বে সামাজিক শৃঙ্খল। এজন্য আগে মানুষকে পরিশুদ্ধ হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nagir Ahmed ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০১ এএম says : 0
    চরিত্র ঠিক করতে হবে। আর মানুষের চরিত্র ঠিক করতে বেশিকিছুর প্রয়োজন হয় না। ভেতরের অন্তরটা ঠিক হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mashudur Rahaman ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০১ এএম says : 0
    দোষ-গুণের চিরাচরিত নিয়মে মানুষের সৃষ্টি। তাদের দ্বারা ভুল-ত্রুটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর তাতে ঢেলে দিলেন অপরাধপ্রবণতা ও তাকওয়া। অবশ্যই সফল হলো সে যে তা পবিত্র করল; আর বিপদগ্রস্ত হলো সে যে তা ছেড়ে দিল।’ - সুরা শামছ, আয়াত নং ৮-১০।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Suzon ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০১ এএম says : 0
    এইজন্য যুবসমাজকে অপরাধ থেকে বের করে আনতে হবে। তাদের নীতিনৈতিকতা শিখাতে হবে। ইসলামের শ্বাশত চেতনা তাদের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। তবেই সমাজ আদর্শিক সমাজে রূপান্তরিত হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন