Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আলমে বারযাখ বা কবরের জগত

এ. কে . এম . ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আরবি বারযাখ শব্দের অর্থ হলো পর্দা, বেড়া, ঢাকনা, আবরণ। আর বারযাখের জগত বলতে ঐ জগতকে বুঝায়, সেখানে মানুষ মৃত্যুর পর হতে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করবে।

যেহেতু সে জগতটি চলমান পৃথিবীর জগত হতে অন্তরালে রয়েছে বা আড়ালে আছে, সেহেতু তাকে বারযাখের জগত বা কবরের জগত বলা হয়। আরবি অভিধান অনুসারে দু’টি বস্তুর মাঝের বস্তুকে বারযাখ বলে। অথবা দুটি বস্তুর মাঝে ব্যবধানকারী পর্দা বা আড়াল। সুতরাং দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝের জগত অর্থাৎ মৃত্যু হতে নিয়ে হাশরের ময়দানে উঠার পূর্ব পর্যন্ত জগতটিই হলো বারযাখ। সুতরাং যে মৃত্যুবরণ করল সে বারযাখের জগতে প্রবেশ করল। ব্যাকরণবিদ ইমাম ফাররা বলেছেন : মরণের দিন হতে পুনরুত্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত হলো বারযাখ। (লিসানুল আরব : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৯০৮)। আল কোরআনে বারযাখ শব্দটি সর্বমোট তিনবার এসেছে।

যথা (ক) সূরা আল মুমিনুনের ১০০ নং আয়াতে। (খ) সূরা আর রাহমানের ২০ নং আয়াতে। এবং (গ) সূরা আল ফুরকানের ৫২ নং আয়াতে। সর্বত্রই উল্লিখিত অর্থ ও মর্মকে তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, বারযাখ কোনো বিশেষ স্থানের নাম নয়। বরং মৃত্যুর পর মানবদেহ বা দেহের অংশসমূহ একত্রিতভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে সেখানে থাকবে কিংবা অবস্থান করবে, সেই স্থানই তার জন্য বারযাখ বা কবর।

মোট কথা, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্যবর্তী সময়টি হলো বারযাখ। একবার ইমাম শাবীকে বলা হলো, অমুকে মারা গেছে। তিনি বললেন, সে এখন দুনিয়াতেও নেই, আখিরাতেও নেই। সে এখন বারযাখের জগতে আছে। (তাসকিরাহ : পৃষ্ঠা ১৫৮)। বিজ্ঞ উলামাগণ বলেন, সকল মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়া হোক বা না হোক, কিংবা শুলিতে চড়ানো হোক, অথবা সমুদ্রে ডুবে যাক কিংবা ছিন্নভিন্ন বা ভস্ম হয়ে উড়ে যাক, সকলের স্থানই বারযাখে। (শারহুস সূদুর : পৃষ্ঠা ১৬৪)।

বস্তুত : কবরের মূল ও প্রকৃত অর্থ মাটির ঐ গর্ত যেখানে সবদেহকে প্রোথিত করা হয়। তবুও কবর শব্দটি শুধু মাটির গর্তের অর্থেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং সেখানেই মানুষের মরদেহ বা তার অংশসমূহ থাকবে তাই তার কবর। চাই তা মাটির গর্ত হোক, অথবা সমুদ্রের জলাধার হোক, কিংবা হিংস্র প্রাণীর উদর হোক, রূপক অর্থ সর্বাবস্থায় ঐ স্থানকে কবর বলে নামকরণ করা হবে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সদস্যগণ বলেন, মৃত্যুর সময় দেহ হতে রূহ বের করা হয়। রূহ ধ্বংস হয় না। এর উপযুক্ত ঠিকানা ও স্থিতিস্থানের প্রয়োজন হয়। সবদেহকে কবরস্থ করার পর সাওয়াল-জওয়ারের জন্য উক্ত দেহে রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর দেহের সাথে রূহের এতটুকু সম্পর্ক অবশ্যই স্থায়ী হয়, যার দ্বারা শান্তি ও শাস্তি অনুভব করতে পারে। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১০১)।

হযরত বারা বিন আযিব (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : মুমিন বান্দার যখন মরণ ক্ষণ ঘনীভূত হয়ে যায়, ফিরিশতা তার নিকট উত্তম আকৃতিতে সুগন্ধিতে সুরভিত হয়ে আগমন করে। মুমিনের রূহ কবজের জন্য তার পার্শ্বে বসে। আর দু’জন ফিরিশতা বেহেশ্ত হতে সুগন্ধিপাত্র নিয়ে তার কাছে উপস্থিত হয়। তারপর উক্ত ফিরিশতাদ্বয় রূহ সমভিব্যাহারে জান্নাতপানে গমন করে। তাদের জন্য আরশের দরজা খুলে দেয়া হয়। তাদের জন্য আকাশের দরজাও খুলে দেয়া হয়।

ফিরিশতামন্ডলি তার আগমনে আনন্দিত হয় আর বলে এ পবিত্র রূহটি কার, যার আগমনে আকাশের প্রবেশদ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে, তখন তার সুন্দরতম নাম উল্লেখ করা হবে, যে নামে তাকে পৃথিবীতে নামকরণ করা হতো। অনন্তর বলা হবে, এটা অমুক ব্যক্তির রূহ। তারপর ঐ রূহকে নিয়ে যখন ঊর্ধ্বে আরোহণ করতে থাকে, তখন আল্লাহপাক বলেন, আমার বান্দার আত্মাকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নাও। কেননা, আমি তাদেরকে মর্ত্যে ফিরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেছি। যখন মুমিনকে পুনরায় কবরে ফেরত দেয়া হয়, তখন কবরের মাটি তাকে বলে তুমি আমার পৃষ্ঠে থাকতে আমার নিকট প্রিয় ছিলে।

সুতরাং কেমন হবে যখন তুমি আমার অভ্যন্তরে এসেছ। তুমি দেখতে পাবে আমি তোমার সাথে কেমন আচরণ করি। তারপর তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত হয়ে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খোলা হবে। তাকে বলা হবে তুমি লক্ষ্য কর, আল্লাহতায়ালা তোমার জন্য কী পারিতোষিক তৈরি করে রেখেছেন। আর মাথার দিক থেকে দোযখের দিকে একটি দরজা খোলা হবে, আর বলা হবে তুমি দেখ, আল্লাহতায়ালা তোমার থেকে কেমন শাস্তি ও আযাব দূর করে দিয়েছেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, পরিতৃপ্তি ও শান্তির সাথে অবস্থান কর। তখন তার নিকট কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়াই সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪২)।



 

Show all comments
  • Mainul Islam ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
    মৃত্যু যেমন সকলের জন্যই অনিবার্য ঠিক তেমনি পরকালের জীবনও সকলের জন্য অবশ্যম্ভাবী
    Total Reply(0) Reply
  • Mulla Tashfin ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
    বারযাখের জীবনে যারা অবস্থান করছে তারা, না আমাদের সম্পর্কিত বিষয় সমুহ জানে, আর না আমাদের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে! কেননা রুহগুলো সাত আসমানের উপরে ইল্যিয়িনে অথবা সাত জমীন নিচে অবস্থান করছে।।(নাহল:২৯,হাজ্জ:২১)
    Total Reply(0) Reply
  • Kajal Motahar Alam ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
    একথায়,দুনিয়ার জীবনের তুলনায় তারা মৃত কিন্তু বারযাখের জীবনের তুলনায় জীবিত!! এটা ইলমে গায়েবের বিষয়! এটা নবী-রাসুল (আ)ব্যতীত দেখেন নি!!!পৃথিবীর জীবিত কোন ব্যক্তির এটা জানা বা দেখা অসম্ভব!!
    Total Reply(0) Reply
  • Najmol Hasan Rajib ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
    কাফিরদের রুহুর জন্য আসমানের দরজা খোলা হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ujjal Hasan ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
    মৃতরা বারযাখের জীবনে শুধু শুনে তাই নয় বরং তারা সেখানে কথা বলে,দেখে,চিনে,পানাহার করে,উঠাবসা করে,আরাম আনন্দ,দুঃখকষ্ট উপভোগ করে, ঘুমায়,জেগে থাকে,আসা-আকাং্খা পেশ করে,মৃত ব্যক্তি উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে কিন্তু এগুলো দুনিয়ার জীবনের মত নয়।বরং তা দুনিয়ায় জীবন থেকে ভিন্নতর।।। (বুখারী, মুসলিম সহ হাদীছের কিতাবসমুহে বিদ্যমান)
    Total Reply(0) Reply
  • Barakat Almadina ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    Thanks
    Total Reply(0) Reply
  • মনির ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ১১:২৮ এএম says : 0
    রুহ জগতে আমরা সবাই ছিলাম সেখানে আমাদের অনেকের সাথে হয়েছে এখন রুহ জগতে যাদের সাথে দেখা হয়েছে পৃথিবীতেও কি তাদের সবার সাথে দেখা হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন