Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপচয় নয়, চাই সম্পদের যথার্থ মূল্যায়ন-২

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দুইদিনের এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ আমাদেরকে খুবই সামান্য কিছু সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। জগতের সেরা ধনী যে, সেই-বা কতটুকু সম্পদের অধিকারী? দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যত নিআমত আমরা ভোগ করি সচেতনভাবে ও অবচেতনভাবে, কারো পক্ষে কি এর এক ক্ষুদ্র অংশেরও বিনিময় আদায় করা সম্ভব? জগতের যা কিছু সবই তো আল্লাহর। তিনিই প্রকৃত মালিক-ঈমানদার যে কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে।
অল্প সময়ের জন্যে তিনি কিছু সম্পদের বাহ্যিক মালিকানা আমাদের দান করেন। এ মালিকানা পরিবর্তনও হয়। এক হাত থেকে আরেক হাতে যায়। পথের ভিখারি রাজা হয়, রাজা সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামে। চারপাশে এ বাস্তবতা দেখার পরও আমরা আমাদের মালিকানাধীন সম্পদকে প্রকৃত অর্থেই আমাদের সম্পদ মনে করে ভুল করি।

এ থেকেই সৃষ্টি হয় অপচয়ের মানসিকতা-আমার টাকা আমি আমার ইচ্ছামতো খরচ করব, এতে কার কী বলার আছে! আল কোরআনে আল্লাহ সতর্ক করছেন আমাদের এ বলে: তোমরা তাদেরকে (অর্থাৎ তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদেরকে) আল্লাহর সম্পদ থেকে দান করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। (সূরা নূর : ৩৩)।

এ আয়াতের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাচ্ছি, আল্লাহ মানুষকে যে সম্পদ দান করেছেন, উক্ত আয়াতে তা আল্লাহর সম্পদ বলে আলোচিত হয়েছে। কথায় কথায় আমরাও বলি-এসব আল্লাহর দান, আল্লাহর দেয়া সম্পদ। কিন্তু শুধু মৌখিক স্বীকার নয়, বরং মুমিন হিসেবে এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকাও অপরিহার্য। এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নিআমত, আবার তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও।

তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করলে, অযথা-অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করলে, অপচয় করে বেড়ালে এ আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হবে। হাদীসের ভাষ্য খুবই স্পষ্ট এবং কঠিন! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগে কোনো বান্দার পা-ই নড়বে না-তার জীবন সে কীসে ব্যয় করেছে, তার ইলম অনুসারে সে কী আমল করেছে, তার সম্পদ সে কোত্থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে আর তার শরীর কীসে নষ্ট করেছে? (জামে তিরমিযী : ২৪১৭)।

অর্থাৎ নিজে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শারীরিক আরাম বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জন করলেই তাতে নিজের যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার সৃষ্টি হয় না। এ সম্পদ যেহেতু আমাদের হাতে আমানত, তাই এর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণও আমাদের দায়িত্ব। এখানে স্বেচ্ছাচারের কোনো সুযোগ নেই। খরচ করতে চাইলে যিনি এর প্রকৃত মালিক, তার অনুমতিক্রমেই তা খরচ করতে হবে। অন্যথায় আটকে যেতে হবে কিয়ামতের ময়দানের সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে।
আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা/না জেনে আন্দাজে কথা বলা, ২. সম্পদ নষ্ট করা, ৩. অধিক প্রশ্ন করা। (সহীহ বুখারী : ১৪৭৭)।

বোঝা গেল, সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহ তাআলার নিকট একটি ঘৃণ্য বিষয়। এ সম্পদ যখন তিনি মানুষকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে বলেছেন, তা যদি নষ্ট করা হয়, অনর্থক খরচ করা হয়, তাহলে তিনি তা অপছন্দ করবেনই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে সম্পদরূপী এ নিআমতের কদর অবশ্যই করতে হবে। অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় যে কোনো বিষয়ই ইসলাম অপছন্দ করে। অহেতুক কথা, অহেতুক কাজ, অহেতুক ব্যয়-বর্জনীয় সবই।

আমাদের হাতে থাকা আল্লাহর দেয়া নিআমত ও আমানত এ ধনসম্পদ ব্যয় করতে গেলে এ দুই বিষয় অবশ্যই সামনে রাখতে হবে-ব্যয়ের খাতটা প্রয়োজনীয় কি না এবং প্রয়োজনটা বৈধ প্রয়োজন কি না। তাহলেই সম্ভব অপচয়ের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার প্রয়োজন পূরণ হয় কতটুকুতে তাও অবশ্য লক্ষণীয়। হাদীসের ভাষ্যানুসারে, নদীর পারে বসেও যদি কেউ ওজু করে তবুও অপ্রয়োজনীয় পানি ব্যয় করার অনুমতি তার নেই। এটাও অপচয়।

অপচয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার অর্থ এই নয় যে, আবার কার্পণ্যে জড়িয়ে যেতে হবে। অপচয়ের মতো কার্পণ্যও মানবচরিত্রের এক মন্দ দিক। স্বভাবধর্ম ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়, তেমনি সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা-অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

পবিত্র কোরআনের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে : যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। (সূরা ফুরকান : ৬৭)। তাই কেবল ব্যয়সঙ্কোচন নয়, বরং ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেখানে যা প্রয়োজন, তা ব্যয় করতে হবে। আর প্রয়োজন না হলে ছোট-বড় যে কোনো পরিমাণের ব্যয় থেকে বিরত থাকতে হবে।



 

Show all comments
  • Khalid Hasan ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
    স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা পরিহার করে নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে প্রতিটি সৎকাজে এবং ইসলাম ও সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ব্যয় করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ কামরুজ্জামান ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
    অহংকার ও প্রদর্শনেচ্ছামূলক এবং লোক দেখানো খরচ, বিলাসিতা, ফাসেকি ও অশ্লীল কাজে ব্যয় এবং এমন যাবতীয় ব্যয় যা মানুষের প্রকৃত প্রয়োজনেও কল্যাণমূলক কাজে লাগার পরিবর্তে ধন-সম্পদ ভুল পথে নিয়োজিত করে, তা আসলে আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করা ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা এভাবে ধন-দৌলত খরচ করে তারা শয়তানের ভাই।
    Total Reply(0) Reply
  • জাকির হোসেন ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
    কৃপণতার পাশাপাশি ইসলাম অপচয় কিংবা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়কেও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
    কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদের বেলায় কৃপণতা প্রদর্শন করে তারা যেন এ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদের বেলায় তারা কৃপণতা প্রদর্শন করেছে সে সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় হার রূপে পরিয়ে দেয়া হবে।’ -সূরা আল ইমরান: ১৮০
    Total Reply(0) Reply
  • জনিরুল ইসলাম ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৩ এএম says : 0
    লোকদের মধ্যে এতটুকু ভারসাম্য থাকতে হবে, যাতে তারা কৃপণ হয়ে অর্থের আবর্তন রুখে না দেয় এবং অপব্যয়ী হয়ে নিজের অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংস না করে ফেলে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন