রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
অভ্যন্তরীণ ডেস্ক
ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুরে ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে চালবাজি চলছেই। মজার ব্যাপার হলো, হতদরিদ্রদের তালিকায় রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা ও সম্পদশালীরা। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট-
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মাঠ পর্যায়ে ডিলাররা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। হতদরিদ্রদের তালিকায় রয়েছেন স্বামী-স্ত্রী, একই পরিবারের চার পাঁচজন, রাজনৈতিক নেতা ও সম্পদশালী ব্যক্তি। তদারকির অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের খাদ্যবান্ধব এক কর্মসূচি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে সেপ্টেম্বর থেকে চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা থাকলেও ডিলার নিয়োগ ও তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় অক্টোবর থেকে চাল বিক্রি শুরু হয়। স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রিতে শুরু থেকেই বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ উঠে। কিন্তু খাদ্য বিভাগ ও প্রশাসন বিষয়টি আমলে না নেয়ায় মাঠ পর্যায়ে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির মূল্য উদ্দেশ্যই ভেস্তে যেতে বসেছে। গত শুক্র ও শনিবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ডিলারদের দোকানে গিয়ে অধিকাংশ ডিলারের দোকানে তদারকি কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। অনেক ডিলার কাগজপত্রে চাল বিক্রির কার্যক্রম শেষ করে ফেললেও তাদের বিরুদ্ধে নয়ছয় করে চাল বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বেশ কয়েকজন ডিলারের দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে একই পরিবার দলীয় নেতাকর্মী ও সম্পদশালীদের একাধিক কার্ড দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কার্ড না পাওয়া অনেক দুঃস্থ। উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম, তার স্ত্রী ফিরোজা ও ছেলে খোকন কার্ড পেয়েছেন। একই গ্রামের আবদুল মোতালেব ও তার স্ত্রী মোছা: খাতুন কার্ড পেয়েছেন। ইন্দ্রজিৎ খিলা গ্রামের আরফত আলী ও তার স্ত্রী জেলেখা খাতুন কার্ড পেয়েছেন। একই ইউনিয়নে মুসলেম উদ্দিনের স্ত্রী ছখিনা, ছেলে শহীদুল্লাহ, কালাম ও সিরাজুল কার্ড পেয়েছেন। মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমুরিয়ার চর গ্রামের জহুর আলীর ছেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা বকুল মিয়া নিজের নাম পরিবর্তন করে কার্ড নিয়েছেন। একই ইউনিয়নের চরশংকর গ্রামের ইন্নছ আলী, তার তিন ছেলে মোতালেব, সিদ্দিক ও শামছুল কার্ড পেয়েছেন। একই গ্রামের হালিম ও তার স্ত্রী আয়শা খাতুন কার্ড পেয়েছেন ১০ টাকার চালের। এ রকম অবস্থা সারা উপজেলার। একটি পরিবারে একজন কার্ড পাওয়ার কথা থাকলেও একাধিক ব্যক্তি কার্ড পাওয়া প্রসঙ্গে তারুন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম ও মাইজবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ বলেন, তালিকা প্রস্তুতের সময় একই পরিবার থেকে একাধিক নাম অসতর্কতা বশত এসে গেছে। তালিকাগুলো পুনরায় সংশোধন করে সামনের মাস থেকে চাল বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, কার্ড বিতরণে কিছু অনিয়ম হয়েছে পর্যায় ক্রমে তালিকা সংশোধন করা হচ্ছে। ছুটির দিন থাকায় কিছু জায়গায় তদারকি কর্মমর্তা অনুপস্থিত আছে, ইতোমধ্যে দুটি ইউনিয়ন সংশোধন করা হয়েছে অনিয়মের জন্যে প্রত্যেক ডিলারকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব কুমার সরকার বলেন, তদারকি কর্মকর্তার অনুপস্থিতি মেনে নেয়া য়ায় না। কোন কারণে না থাকতে পারলে খাদ্য কর্মকর্তাকে বলতে হবে। তালিকায় কিছু ভুল ধরা পরেছে তা সংশোধনের জন্যে কর্তব্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গৌরীপুরে হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে অনিয়ম, ওজনে কম দেয়া, কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতি, ছবিবিহীন কার্ড বিতরণ, পরিমাপে কম, ইউপি সদস্য কর্তৃক ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নামে কার্ড প্রদান, কালোবাজারে বিক্রি, কার্ড সংরক্ষণ ডিলারের নিকট, একজনের নামে কার্ড ডিলার আরেকজন নিকট চাল বিক্রি করছে, কার্ড ডিলারের নিকট থাকায় অনেক কার্ডধারী জানেই না কোথা থেকে ১০টাকা কেজি চাল দিচ্ছে, যেখান থেকে ১০ টাকা কেজি হিসাবে চাল উত্তোলন করতে। যেখানেই ক্রয় সেখানেই চালের বেপারীর নিকট বিক্রি করছে-এ রকম নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে গৌরীপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি অগ্রাধিকার খাদ্যবান্ধব এই কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও সফলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গৌরীপুর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার ২১ অক্টোবর ৯নং ভাংনামারী ইউনিয়নের নিয়োগপ্রাপ্ত ২ জন ডিলারের মধ্যে নাপ্তের আলগী বাজারে ডিলার মো. মোস্তফার দোকানে মোট কার্ডধারীর সংখ্যা ৯৫৪জন। তার মধ্যে বেশি সংখ্যক ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন। যার নিজেরা কোন সময় চাল নিতে আসে না। সেই কারণে চাল উত্তোলনকৃত কার্ডে তাদের ছবি নেই বলে জানিয়েছেন কার্ড না পাওয়া বঞ্চিতরা। ছবিবিহীন কার্ডধারীদের কোন নিয়মে চাল বিতরণ করা হলো জানতে চাইলে এ কেন্দ্রের তদারকি কর্মকর্তা উপ-কৃষি কর্মকর্তা শরাফ উদ্দিন সেই সঠিক উত্তর না দিয়ে জানিয়েছেন তাদের পরবর্তীতে ছবিবিহীন কার্ডধারীদের মাঝে আর চাল বিক্রি করা হবে না। এ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন কোন দরিদ্র ব্যক্তি চাল নিতে দেখি নাই। পাশের চালের মহাজনের ঘরে বস্তা বিক্রি করে দেয় ডিলার। এ অভিযোগ সত্য নয় অস্বীকার করেন ডিলার মোস্তফার চাচা শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। ওই ইউনিয়নের বয়রা বাজার ডিলার মো. মোখলেছুর রহমানের দোকান ঘর বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক কার্ডধারীকে ঘুরে যেতে দেখা গেছে। পাশের পানের দোকানদার গোলাম হোসেন জানিয়েছেন ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে ঘর বন্ধ রয়েছে। ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া বাজারের ডিলার মো. সাইফুল ইসলামের অধীনে কার্ডধারীর সংখ্যা রয়েছে ১১২৩ জন। তার মাঝে ২১ অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত চাল ক্রয়ের বাকি আছে ৭০ জন কার্ডধারী। চাল বিতরণের সময় এ কেন্দ্রে তদরকি কর্মকর্তা উপ-কৃষি কর্মকর্তা ফয়েজ উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। ডিলার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন পারিবারিক অসুবিধার জন্য তিনি আসতে পারেনি। এবিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তা তারাপদ চক্রবর্তী জানিয়েছেন না থাকার বিষয়টি তিনি আগে জানাননি। একেন্দ্রে হতদরিদ্র ছাড়াও অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি কার্ড পেয়েছেন জানতে চাইলে ডিলার সাইফুল বলেন বিভিন্ন দলীয় কারণে নেই তাদেরকে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে বির্তক সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানাতে অস্বীকার করেন তিনি। গত শুক্রবার গাজীপুর বাজারের দোকানে চাল না থাকায় চাল বিক্রি করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ডিলার মোহাম্মদ আলী। তবে তদারকি উপ-কৃষি কর্মকর্তা মো. রব্বানিকে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার জানিয়েছেন, সমস্ত অনিয়ম দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।