Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বায়ুবিদ্যুতের ভবিষ্যৎ কী?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৪০ পিএম

বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যম হিসাবে বায়ু ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ উইন্ড টারবাইনগুলোও বড়, লম্বা এবং আরো কর্মক্ষম হয়ে উঠছে। বিশ্বের বিদ্যুতের প্রায় সাত শতাংশ এখন বায়ু শক্তি থেকে আসে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শক্তি হিসাবে বায়ুর ব্যবহার হয়ে আসছে৷ জল সেচ, শস্য মাড়াই, কাঠ কাটা এবং পালতোলা জাহাজ, এমন নানা কাজে বায়ুর ব্যবহার দীর্ঘদিনের৷ ইউরোপে ঊনবিংশ শতকেই কয়েক হাজার টারবাইন ছিল৷ ডাচরা প্রধানত এগুলো জলাভূমি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করতো৷ তবে এখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্লিন এনার্জি হিসাবে বায়ুর ব্যবহার দিন দিন আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ বায়ু টারবাইন থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ বেশ সস্তা৷ এখন কয়লা বা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে এর কয়েকগুণ বেশি খরচ পড়ে৷ উপযুক্ত পরিবেশে টারবাইন স্থাপন করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খরচ আরো কমে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা কেবল তিন ইউরো সেন্ট বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ টাকায় নেমে আসতে পারে৷

উত্তর জার্মানির ভিলহেল্মশাভেনের কাছে স্থাপিত একটি বড় বায়ু টারবাইন ছয় হাজার কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদন করে এবং সেখানকার ১০ হাজার মানুষের গৃহস্থালীর বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে৷ আধুনিক টারবাইনগুলি এখন আকাশে ১৮০ মিটার পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। টারবাইনের ডানা যত লম্বা হয়, তত বেশি বাতাস কাজে লাগানো সম্ভব হয়৷ সমুদ্রে বায়ুপ্রবাহ সবসময়ই বেশ শক্তিশালী৷ বিশ্বের বায়ুবিদ্যুতের প্রায় পাঁচ শতাংশ নেদারল্যান্ডসের সমুদ্রে স্থাপিত টারবাইন থেকে আসে৷ এমন টারবাইন ১০ হাজার কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে৷ ২০২৫ সাল থেকে এই উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার কিলোওয়াটে পৌঁছে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে৷ এই বিদ্যুৎ দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব৷

বিশ্বে যত বায়ু টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে, তার অর্ধেকই চীনে অবস্থিত৷ কেবল ২০২০ সালেই দেশটি নতুন কিছু টারবাইন স্থাপন করেছে, যেগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫২ গিগাওয়াট৷ এটি প্রায় ৫০টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে সমান৷ তবে দেশের মোট চাহিদার হিসাবে বায়ুবিদ্যুতের সম্প্রসারণে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ডেনমার্ক ও জার্মানি৷ ডেনমার্কের চাহিদার অর্ধেকের কাছাকাছি আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে, জার্মানির আসে ২৫ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩ লাখ মানুষ বায়ু শিল্পে কাজ করেন৷ এর মধ্যে চীনে সাড়ে পাঁচ লাখ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ১০ হাজার, জার্মানিতে ৯০ হাজার, ভারতে ৪৫ হাজার এবং ব্রাজিলে ৪০ হাজার মানুষ কাজ করেন৷ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের চেয়ে বায়ু টারবাইন স্থাপন ও পরিচালনা ব্যয়বহুল৷ তবে এ খাতের সম্প্রসারণ আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে৷

ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে, বায়ু টারবাইন স্থাপনের প্রকল্প প্রায়ই স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। তবে নাগরিকদেরও স্থানীয় প্রকল্পে যুক্ত করা গেলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে স্টারকেনবুর্গে অনেক বাসিন্দা বায়ুশক্তির সম্প্রসারণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা নতুন টারবাইনে বিনিয়োগ করছেন এবং বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভও করছেন৷ একসময় পালতোলা জাহাজেই বিশ্বজুড়ে মালামাল ও যাত্রী পরিবহণ করা হতো৷ ধীরে ধীরে সেই স্থান দখল করে ডিজেল ইঞ্জিন৷ কিন্তু এখন আবারও পালতোলা নৌযান ফেরত আসছে আধুনিক রূপে৷ বাতাসের শক্তিকে আরো বেশি কাজে লাগিয়ে শক্তির ব্যবহার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হতে পারে৷ ভবিষ্যতে সবুজ হাইড্রোজেনও জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হতে পারে৷

বায়ুশক্তি কাজে লাগানোর জন্য সমুদ্রে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গায় টারবাইন স্থাপনের জন্য সমুদ্র বেশ গভীর। ভাসমান টারবাইন এক্ষেত্রে একটি বিকল্প হতে পারে৷ দীর্ঘ শেকল দিয়ে ভাসমান বয়াকে সমুদ্রতলে স্থির রাখা হয়৷ ভাসমান বায়ু টারবাইন এরইমধ্যে ইউরোপ এবং জাপানে স্থাপন করা হয়েছে৷ এগুলো ঝড়ের সময়ও বেশ স্থিতিশীল থাকে। লন্ডনের ১৪৭ মিটার উঁচু আকাশচুম্বী ভবন স্ট্রাটা এসই-ওয়ান এমন বায়ু টারবাইনের একটি নজরকাড়া উদাহরণ৷ কিন্তু ছাদে এমন স্থাপনা সাধারণত লাভজনক হয় না, কারণ শহরগুলোতে বাতাসের প্রবাহ সাধারণত খুব দুর্বল হয়। তবে ছাদে ফটোভোলটাইক সিস্টেম এক্ষেত্রে দারুণ বিকল্প হতে পারে৷

বায়ু টারবাইন তৈরি করতে যে শক্তি ব্যয় হয়, তিন থেকে ১১ মাসের মধ্যে সেই শক্তি টারবাইনগুলো উৎপন্ন করতে পারে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদন হয় না৷ অন্যান্য অনেক শক্তির তুলনায়, বায়ুশক্তি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বেশি ভূমিকা রাখে। জার্মানির ফেডারেল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির মতে, বায়ুবিদ্যুতের পরিবেশগত ব্য়য় কয়লা-চালিত বিদ্যুতের তুলনায় ৭০ গুণ কম। বায়ু এবং সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলে বিশ্বের শক্তির চাহিদা মেটাতে পারে। বিদ্যুৎ টারবাইনগুলোর বিদ্যুৎ উপাদনের জন্য ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বা বেশি গতির বায়ুপ্রবাহ প্রয়োজন হয়৷ যেসব অঞ্চলে প্রচুর সূর্যের আলো রয়েছে সেখানে ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে সস্তা উৎস হতে পারে। বিষুবরেখার উত্তর ও দক্ষিণে কাছাকাছি অঞ্চলে বায়ু এবং সৌরশক্তির মিশ্র ব্যবহার সম্ভব। বায়ুশক্তির ক্ষেত্রে শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ প্রয়োজন৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ