দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পৃথিবী ভীষণভাবে উঠবে কেঁপে- ভিতরের বোঝা দেবে বের করে
মানুষ বলবে তখন কী হলো ইহার- ব্যক্ত করবে খবর যাবতীয় তার
এই নিখিল বসুন্ধরার বিভিন্ন প্রান্তে সময়ে সময়ে ভূমিকম্প হয়। কোথাও তীব্রতা বেশি, কোথাও কম। মূলত, ভূমিকম্প হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। যেন মানুষ নিজের অপরাদের জন্য তাওবা করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ইরশাদ হচ্ছে হে হাবীব! আপনি বলুন, তিনিই শক্তিমান যে, তোমাদের উপর কোন শাস্তি উপর দিক থেকে অথবা তোমাদের পদতল থেকে প্রেরণ করেন। (সুরা আনআম, আয়াত : ৬৫) এই আয়াতের তাফসিরে ইমাম ইস্পাহানি রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, ‘আসমান থেকে আযাব অবতীর্ণের মমার্থ হলো, তীব্র শব্দ, পাথর অথবা ঝড়ো হাওয়া; আর পায়ের নীচ থেকে আযাব প্রেরণের ব্যাখ্যা হলো, ভুমিকম্প এবং ভূমি ধ্বসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
ভূমিকম্প বিষয়ে কুরআনুল কারীমে দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। একটি হল ‘যিলযাল’ (একটি বস্তুর নড়াচড়ায় অন্য আরেকটি বস্তু নড়ে ওঠা) দ্বিতীয় শব্দটি হল ‘দাক্কা’(পৃচন্ড কোন শব্দ বা আওয়াজের কারণে কোন কিছু নড়ে ওঠা বা ঝাঁকুনি খাওয়া)। পৃথিবীতে বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কঠিন শিলাত্বকে চ্যুতি বা স্থানান্তরের কারণেই ঘটছে।
ভূমিকম্প হলে করণীয়:
১. তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা: এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ কিংবা ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তাওবা করা এবং আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তুমি এরকম কিছ (উপরোক্ত বিষয়াবলী) দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।
২.দয়া প্রদর্শন ও দান-সদকা: প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করাও উচিত। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারা যমিন বাসীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করে, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন। আর হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার শাসনামলে যখন ভূমিকম্প হতো তখন তাঁর গভর্নরদের দান-সদকা করার প্রতি জোর দিয়ে চিঠি লিখতেন।
৩.অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: সমাজে প্রচলিত যেনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অবিচার রোধ করার মরণপ্রাণ প্রচেষ্টা করা পরিত্রাণের অনন্য হাতিয়ার। ইরশাদ হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ গর্হিত কাজ দেখতে পায়, সে যেন তা হাত দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করে, আর যদি না পারে তবে বক্তব্যের মাধ্যমেই জনমত সৃষ্টি করে তা প্রতিহত করে, আর সামর্থ্য না থাকলে অন্তর দিয়ে ঐ কাজকে ঘৃণা করে , আর এটাই ঈমানের দুর্বলতম স্তর।
বস্তুত ধেয়ে আসছে আরও ভয়াবহ ভূমিকম্প ও রক্তিম পাথর বৃষ্টি। তাই কালক্ষেপন না করে নিজেদের শুধরে নেওয়া উচিত। ইরশাদ হচ্ছে, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু । এরা (মানুষদের) ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (জীবনের সব কাজে) আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলে (বিধানের) অনুসরণ করে, এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ; যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, কুশলী।” আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার তাওফিক দান করুন, আমিন বিহুরমতে সৈয়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
লেখক: আরবি প্রভাষক,রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা, রাঙ্গুনিয়া,চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।