Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্যারিফিকেশনে আটকা শিক্ষক নিয়োগ

অপেক্ষায় ৩৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৮ মাস পরেও নিয়োগ পায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী শিক্ষক। ভ্যারিফিকেশনেই আটকে আছে তাদের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। নিয়োগের এই দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর নিয়োগের আশায় অনেকেই চাকরি ছেড়ে, বেকার অবস্থায় অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত চলছে। মুজিববর্ষে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য যে উপহার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এই বর্ষেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা। আর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান জানিয়েছেন, ভ্যারিফিকেশন শেষ হওয়া মাত্র চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পুলিশ ভ্যারিফিকেশন শেষে প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে না। দ্রুত পুলিশ ভ্যারিফিকেশন শেষ করতে কাজ করছে এনটিআরসিএ।

জানা যায়, সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ চলতি বছরের ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে এর আগে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রিটকারীদের জন্য ২ হাজার ২০০টি পদ সংরক্ষণ করে বাকি পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব শূন্যপদের বিপরীতে ৪ এপ্রিল থেকে আবেদন নেয়া হয়। তবে ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি নারী কোটা পদে প্রার্থী না থাকায় মোট ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে বাকি রেখে ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে নিয়োগের জন্য ১৫ জুলাই প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদেরকে পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের রোল ফরম পূরণ করে পাঠাতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩২ হাজার ২৮৩ জন সেই ফরম পাঠালেও ৫ হাজার ২৯৫ জনের ফরম পায়নি এনটিআরসি।

প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও যেসব প্রার্থী এখনো পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের রোল ফরম পাঠাননি তাদের আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ভি রোল ফরম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে এনটিআরসিএ। এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবায়েদুর রহমান বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যেসব প্রার্থীকে এনটিআরসি থেকে প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছিল তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ২৯৫ জন প্রার্থী এখনও পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভি রোল ফরম পাঠাননি। তাদের আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ফরম পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এনটিআরসিএ জানায়, যারা ফরম পাঠিয়েছেন তাদের ভ্যারিফিকেশন সম্পন্ন করে চ‚ড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে। তবে প্রার্থীদের অভিযোগ চার মাস ধরে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও এটি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ১০টি বিভাগের মধ্যে কেবল সিলেট ও ময়মনসিংহে ভ্যারিফিকেশন শেষ হয়েছে। আর রাজশাহী বিভাগে এখনো শুরুই হয়নি। এছাড়া রংপুর, খুলনা, বরিশাল চট্টগ্রামে অগ্রগতি উল্লেখযোগ নয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশা প্রকাশ করে সুপারিশপ্রাপ্ত লেকচারার আসাদুর রহমান বলেন, আমরা হতাশা ও অনিশ্চিয়তায় দিন পার করছি। অনেকেই ধার, দেনা ও ঋণ করে নিয়োগের জন্য মোটা অংকের টাকায় আবেদন করেছিল। তাদের ধার দেনা ও ঋণ পরিশোধ করা শুরু করতে হয়েছে। অথচ তারা কিন্তু এখনো চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারেনি। নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকেরা মানবিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। পরিবারেও শুনতে হচ্ছে অনেকরকম কটূকথা।
তাছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের যোগদানের জন্য চাপও দিচ্ছে। অনেকে আবার প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় পূর্বে কর্মরত চাকরি ছেড়ে দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দেরি হওয়ায় অন্য জায়গায় চাকরিতে যোগদান করছে।

সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিযোগ মন্ত্রণালয় শিক্ষক নিয়োগে দ্বৈতনীতি বা বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর গত ১৪ অক্টোবর প্রজ্ঞাপনের আলোকে অধীদফতরাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে প্রায় ২ শতাধিক প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। এসব প্রার্থীদের আগাম কোনো পুলিশ ভ্যারিফিকেশন করা হয়নি। তাছাড়া, ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকেও অনেক প্রার্থীকে নন-টেক ইন্সট্রাক্টর পদে চূড়ান্ত নিয়োগ দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। এছাড়া ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরসহ বিভিন্ন পদে আগাম ভ্যারিফিকেশন ছাড়াও অনেক নিয়োগ সম্পন্ন করেছে দফতরটি। তাছাড়া, জরুরি অবস্থা বিবেচনায় অনেক প্রতিষ্ঠানেই আগাম ভ্যারিফিকেশন ছাড়া চূড়ান্ত নিয়োগপত্র দিচ্ছে। অথচ, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এনটিআরসিএ শিক্ষকদের আগাম পুলিশ ভ্যারিফিকেশন শেষ করেই চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষক বলেন, সরকারি নিয়োগে ভ্যারিফিকেশন ছাড়াই নিয়োগ হচ্ছে অথচ শিক্ষকরা বেসরকারি এদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে না। এটা একরকম আমাদের ওপর প্রহসন। এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই রকম নীতি কিভাবে সম্ভব?
মুজিববর্ষেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত লেকচারার শান্ত আহমেদ বলেন, শিক্ষার ক্ষতি দ্রুত পুষিয়ে নেয়া, পাঠদান স্বাভাবিক করা ও বেকার শিক্ষকদের পারিবারিক, আর্থিক এবং সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমাদের অনুরোধ।

এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো পুলিশ ভ্যারিফিকেশন হচ্ছে। ভ্যারিফিকেশন শেষ হওয়া মাত্র আমরা চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেব।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, আমরা চাই শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে শিক্ষকরা এ মহান পেশায় আসুন। তাই প্রথমবারের মতো ভ্যারিফিকেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুত শেষ করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে ভ্যারিফিকেশন একটি নির্দিষ্ট বিভাগের অধীনে। তাদের নিজস্ব কিছু ফর্মুলা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সেগুলো অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে যে সময়টুকু লাগবে তা তো দিতেই হবে।



 

Show all comments
  • মোঃ শাকিল আহমেদ ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:২৬ এএম says : 0
    আমার মনে হয় সরকার শিক্ষাখাতকে গুরুত্ববহ খাত হিসেবে দেখছেই না। করোনা মহামারিতে গত দুইটা বছর শিক্ষার্থিদের যে ক্ষতিটা হয়েছে তা অপূরণীয়। তারউপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক চেয়ে আবেদন করেছে দুই বছরেরও বেশি সময় আগে। সহজেই অনুমেয়, ঐ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চাহিদাকৃত শিক্ষক নেই। যেখানে ইংরেজি, গণিত, রসায়ন-পদার্থের মত বিষয়ে চাহিদা পাঠিয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাহলে ভাবুন ঐ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কেমন চলছে গত দুইটা বছর! চাকরি প্রত্যাশিদের কথা বাদ-ই দিলাম, শিক্ষার্থিদের কথা ভেবে হলেও খুব দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা উচিত। একমাস কিংবা পনেরো দিন নয়, সম্ভব হলে দু-এক দিনের মধ্যে কাজটি করা উচিত। কিন্তু বিধিবাম! ভেরিফিকেশন নাম মুলা সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে সরকার, শিক্ষক নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে। মনে করিয়ে দিচ্ছি, যে ৩২হাজার জনের সুপারিশ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২১হাজারের বেশি সংখ্যক আছে ইনডেক্সধারী।
    Total Reply(0) Reply
  • Sm Milon ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:৩৬ এএম says : 0
    জনো নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরা খুব কষ্টে সময় পার করছি, আপনি মানবতার মা সেদিকে বিবেচনা করে ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের যোগদান সম্পন্ন করার আকুল আবেদন জানাই। #NTRCA- কর্তৃক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • Labu mollick ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৩০ পিএম says : 0
    4 মাসের বেশি হয়ে গেলো ব্র্যাকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে আসছি। আমি চাই ডিসেম্বরের 26 তারিখের মধ্যে ntrca আমাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুক। এবং যোগদানের সকল ধরনের process যেন অনলাইনে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul kuddus ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৪৯ পিএম says : 0
    জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরা খুব কষ্টে সময় পার করছি, আপনি মানবতার মা সেদিকে বিবেচনা করে ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের যোগদান সম্পন্ন করার আকুল আবেদন জানাই। #NTRCA- কর্তৃক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষক নিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ