Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক-বিএসইসি আলোচনা ‘ইতিবাচক’

আগামী মাসের বৈঠকে ‘দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৪ পিএম

করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের শেয়ারবাজারে মানুষের আস্থা ফিরেছে। বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় শেয়ারাবাজারের প্রতি ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যা করোনার অভিঘাত কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপের অপতৎপরতায় শেয়ারবাজারে বিএসইসি’র নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই নতুন কোনো নিয়মনীতি প্রবর্তন করে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। শেয়ারবাজারে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈরিতা তৈরি হয়েছে।

এই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে ইতিবাচক আলোচনার কথা জানিয়েছেন বৈঠকের প্রধান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং শেয়ারবাজার কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি কমিটির আহ্বায়ক মফিজ উদ্দীন আহমেদ। তবে যেসব বিষয় নিয়ে মতভেদ, সেগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আরও একটি বৈঠক করতে হবে বলে জানিয়েছে তিনি। বলেছেন, সেই বৈঠকের পরেই ‘দৃশ্যমান কিছু দেখা যাবে।’

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রতীক্ষিত এই বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, এনবিআর, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মনোনীত প্রতিনিধিসহ অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএসইসির পক্ষে উপস্থিত কর্মকর্তারা কিছু বলেননি।

পরে মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যেসব আলোচনা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও একটি বৈঠক করতে হবে। সেটি চলতি মাসে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। ওই বৈঠকে পুঁজিবাজারের জন্য দৃশ্যমান কিছু দেখা যাবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় বিরতির পর আমাদের মধ্যে এই বৈঠক হয়েছে। আমাদের আলোচনায় তথ্য উপাত্তের বেশ কিছু ঘাটতি ছিল যা আলোচনায় উঠে এসেছে। এ কারণে আরও একটি বৈঠক করতে হবে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনা পদ্ধতি আর বন্ডে বিনিয়োগ এই সীমার বাইরে থাকবে কি না- এ নিয়ে এক প্রশ্নে মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, এগুলো খুবই সেনসিটিভ ইস্যু। এ ব্যাপারে এখনই কোনো কথা বলতে চাইছি না। এর জন্য আপনাদেরকে পরবর্তী বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

২০১৯ সালে শেষবার যখন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়, তখন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে ছিল পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিশেষ তহবিল গঠন, বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা দেয়া এবং পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখা। এবার বাইরেও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর পুঞ্জিভূত লোকসান থাকলেও কোনো বছরে মুনাফা করলে লভ্যাংশ দেয়ার সুযোগ দেয়ার পক্ষে প্রস্তাব তেয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত মুনাফা দিয়ে গঠন করা স্থিতিশীলতা তহবিলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানি থেকে টাকা আসতে যেন বাধা দেয়া না হয়, এই বিষয়টিও নিশ্চিত হতে চাইছে সংস্থাটি। তবে বিএসইসির প্রধান চাওয়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করা এবং বন্ডে বিনিয়োগকে ব্যাংকের এই বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা।

এসব বিষয় নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, তাদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এই দুটি বিষয়ে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে একমতও হয়েছে। তবে দাফতরিক কিছু কাজ শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তার এই বক্তব্যের পর পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়। বৈঠকের পর দিন সূচক বাড়ে ১৪৩ পয়েন্ট। কিন্তু সেই রাতেই কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের একটি বিজ্ঞপ্তিতে তৈরি হয় নতুন উদ্বেগ।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএসইসি কমিশনারের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন এসেছে, সেগুলো সঠিক নয়।

 

এই বিজ্ঞপ্তির পর আতঙ্ক এতটাই জেঁকে বসে যে, পরদিন লেনদেনের দুই মিনিটেই সূচক পড়ে যায় ৮৪ পয়েন্ট। এর পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকার এই খবর গণমাধ্যমে আসার পর তৈরি হয় উল্টো পরিস্থিতি। দিন শেষে সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট। এরপর আরও দুই দিন সূচক বাড়ে অল্প করে। সব মিলিয়ে চার কর্মদিবসে সূচক বাড়ে ২৭৫ পয়েন্ট। বৈঠকের দিন আরও ৭০ পয়েন্ট বাড়ায় টানা ৫ দিনে বাড়ল ৩৪৫ পয়েন্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ