Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজার জেলা জাপায় মুখোমুখি দুই গ্রুপ

প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টিতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দুইটি গ্রæপ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলীয় গ্রæপিং চরম আকার ধারণ করেছে। ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে নতুন কমিটিকে প্রত্যাখান করেছে পদ বঞ্চিতরা। গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা জাপার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর থেকে নেতৃত্বের এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
দুই গ্রæপের মধ্যে একটি দলীয় অফিসকেন্দ্রীক তৎপর। অপর গ্রæপটির কাজ চলছে শহরের হোটেল কল্লোল থেকে। এমন অবস্থায় প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে ইতিমধ্যে দল ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে বলে বিশ্বস্থ সুত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ ওঠেছে, টাকার বিনিময়ে নতুন কমিটিতে সুবিধাবাদী, বিতর্কিত লোকদের নাকি পদ-পদবী দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে মাঠ কাপানো তুখোঁড় নেতাদের। যাদের হাত ধরে কক্সবাজারে জাতীয় পার্টির রাজনীতি এমন নেতাদের কমিটিতেও রাখা হয়নি। কক্সবাজার শহরকেন্দ্রীক নেতৃত্ব বাদ দিয়ে কমিটির সিংহভাগ নাকি নেওয়া হয়েছে চকরিয়া থেকে। জীবনে কোন দিন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেনি এমন লোককেও নেতা বানানো হয়েছে। উপেক্ষা করা হয়েছে অনেক উপজেলা সভাপতি-সম্পাদক ও প্রবীন নেতাকেও। অবমূল্যায়ন করা হয়েছে আগের কমিটির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকে। এসব কারণে জেলা জাতীয় পার্টির ঘরে দ্রোহের আগুন জ্বলছে। ‘বিতর্কিত’ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবী উঠেছে তৃণমূল থেকে। অভিযোগ ওঠেছে, জাপার জেলা কমিটিতে বিএনপি নেত্রীকেও অন্তর্ভুক্ত করার।
২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা জাপার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে মৌং ইলিয়াছ সভাপতি, এডভোকেট মো. তারেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং মুফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দীর্ঘ ৯ মাস পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর ১১১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা জাপার নতুন কমিটি গঠিত হয়।
ইতিমধ্যে নতুন কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা দিয়ে তাদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। কমিটির সভাপতি মৌং ইলিয়াছ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। রাজপথে তাদের প্রতিকৃতে দাহ করেছে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এদিকে একটি সুত্র জানিয়েছে, নেতৃত্বের বিরোধের সুত্র ধরে জেলা জাপার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি)-তে যোগদানের প্রস্তুতি নিয়েছে। আগ্রহীরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগও করেছে। যে কোন সময় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে স্থান পায়নি জাতীয় পার্টির রামু উপজেলা শাখার সভাপতি হোসাইনুল ইসলাম মাতব্বর, যিনি গত কমিটির জেলা শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ থেকে এরশাদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে জেলা কমিটির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নুরুল আজিম, মহিলা পার্টির সম্পাদিকা মনি, মহেশখালী উপজেলা সভাপতি আজিজুল হক, জেলা শ্রমিক পার্টির সভাপতি এস.এম বাবর, মাতামুহুরী সভাপতি মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ মেম্বার, কুতুবদিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আইয়ুব, চকরিয়া পৌরসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, খোরশেদ আলম। এছাড়া কক্সবাজার শহরকেন্দ্রীক জাতীয় পার্টির রাজনীতির ‘বটবৃক্ষ’ হিসেবে পরিচিত নতুন বাহারছরা এলাকার প্রবীন জাপা নেতা হাজী নূল মোহাম্মদ, নজির কোম্পানীকে কমিটিতে রাখা হয়নি। এছাড়া অসংখ্য ত্যাগী নেতা বাদ দিয়ে জেলা জাপার কমিটি গঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
দলের তৃণমূলের অনেকে সাথে কথা হলে তারা জানায়, জাতীয় পার্টি দেশের বৃহৎ একটি দল। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবার মতামত নেয়া দরকার। পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে দলীয় কমিটি হতে পারেনা।
জেলা শ্রমিক পার্টির সভাপতি এস.এম বাবর বলেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদী লোকজন নিয়ে গঠিত কমিটি দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবেনা। কলঙ্কিত কমিটি আমরা মানিনা।
জাতীয় পার্টি কক্সবাজার সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মেহেরুজ্জামান জানান, সম্মানিত লোকেরা জাতীয় পার্টি করে। নিজ পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে কর্মচারীকেও যে কমিটিতে পদ দেয়া হয়, সেই কমিটি জাতীয় পার্টির নয়। এটি পকেট কমিটি, পারিবারিক কমিটি।
কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শহর জাপার সভাপতি কামাল উদ্দিন কামাল বলেন, দলের নামে যারা চাঁদাবাজি করে তাদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। আর যারা নিজের সময় শ্রম অর্থ দিয়ে দল চালায় তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আহবায়ক কমিটি গঠনের ৯মাসে যারা একটি সভাও করতে পারেনি, তাদের দিয়ে কিভাবে দল চলবে?
সুত্র মতে, জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশীদার হওয়ার পর থেকে জেলা কমিটি নিয়ে প্রত্যেকবারই বিরোধ তৈরী হয়েছে। বরাবরই দুইটি অংশ মাঠে সক্রিয় থাকে। এর আগের কমিটির বেলায়ও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল।
অনেকে মনে করছেন, দশম সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতা মনোনয়ন থেকে এ বিরোধের সুত্রপাত। দীর্ঘ এ মতবিরোধ লুকায়িত থাকলেও তা এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দলের ভেতরে বাইরে ভেঙে পড়েছে ‘চেইন অব কমান্ড।’ এতে করে জাতীয় পার্টি পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য। একটি সংরক্ষিতসহ ২টি এমপি পদ পাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
এদিকে গত ১৫ অক্টেবর জেলা জাতীয়পার্টির অভিষেক অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান মুফিজ বলেছিলেন, যারা জাসদ-বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন তারাই বিতর্ক সৃষ্টি করছেন। এদেরকে সবাই চেনেন। এরশাদের নির্দেশনায় কমিটি হয়েছে। এই কমিটি বাতিল হতে পারেনা। এ সময় তিনি এরশাদকে ভালবাসলে বিক্ষোভকারীদের আর বিতর্ক না করে সঠিক পথে ফিরে আসার আহবান করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি মৌং ইলিয়াছ এমপি বলেন, তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাদ পড়েছেন। এ জন্য দুঃখিত। বাদ পড়াদের শীগ্রই কো-অপ্ট করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরেই কমিটি অনুমোদন হয়েছে। এই কমিটি বাতিলের দাবি অন্যায় আবদার। যারা কমিটি নিয়ে মাঠে বিতর্ক তৈরী করছেন তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। অযথা বিতর্ক না করে এক হয়ে কাজ করার আহবান করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার জেলা জাপায় মুখোমুখি দুই গ্রুপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ