বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কাল তিনটি- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সফল ও কর্মময় জীবনের জন্য তিন কালই গুরুত্বপূর্ণ। অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হয়, বর্তমানে কর্মব্যস্ত থাকতে হয়, আর ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। শিক্ষা, কর্ম ও পরিকল্পনা এই তিনের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া যায় সাফল্য ও অর্থপূর্ণ জীবনের দিকে। কেউ যখন সত্যি সত্যি এগুতে চায় এবং সঠিক উপায়ে পরিশ্রম করে তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য নেমে আসে। কাজেই বলা যায়, সফল জীবন গঠনের জন্য অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তিন কালই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই তিনের মধ্যেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বর্তমান। বর্তমানকে যে কাজে লাগায় তার ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়। ইসলাম আমাদেরকে এ বিষয়ে অতি গভীর ও যথার্থ শিক্ষা দান করে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমরা ঐ সকল ফিতনা আসার আগেই আমল করে নাও, যা হবে অন্ধকার রাতের বিভিন্ন অংশের মতো। সকালে মানুষ মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফিরে পরিণত হবে অথবা (বলেছেন), সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে সকালে কাফিরে পরিণত হবে। সে নিজের দ্বীনদারি বিক্রি করে দিবে পার্থিব কিছু সহায়-সম্পদের বিনিময়ে। (সহীহ মুসলিম : ১১৮)।
এই হাদীসে নেক আমলের দিকে ধাবিত হওয়ার এবং নানাবিধ ফিতনার শিকার হয়ে নেক আমলের অবসর শেষ হওয়ার আগেই নেক আমল করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। যে ফিতনাসমূহের রূপ হবে চাঁদবিহীন অন্ধকার রাতের মতো।
ফিতনাকে উপমা দেয়া হয়েছে অন্ধকার রাতের সাথে। উপমাটি অতি স্বাভাবিক ও সর্বজনবোধ্য। যে কোনো চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই ইচ্ছে করলে তা উপলব্ধি করতে পারবে। দিন ও রাতের বৈশিষ্ট্য সবার সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। দিনকে আল্লাহ বানিয়েছেন আলোকজ্জ্বল। দিনের আলোতে সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। সাদা-কালো, সুন্দর-অসুন্দরের পার্থক্য স্পষ্ট থাকে। সাদাকে সাদা বলে, কালোকে কালো বলে চিনতে কোনো অসুবিধা হয় না, কিন্তু অন্ধকার রাতে সবকিছু আঁধারে ঢেকে যায়। সাদা-কালো, যা দিনের আলোতে স্পষ্ট ছিল তা আর স্পষ্ট থাকে না। তখন কোনটি সাদা আর কোন্টি কালো তা বোঝার জন্য আলাদা আলোর প্রয়োজন হয়। সেই আলো ছাড়া অন্ধকার রাতে কিছুই দেখা যায় না।
এই অবস্থাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। যে কোনো চক্ষুষ্মান এই অবস্থা দেখেন ও বোঝেন। এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অবস্থার উদাহরণ দিয়ে হাদীস শরীফে ফিতনাসমূহের অবস্থা বোঝানো হয়েছে। ফিতনার সময় সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, করণীয়-বর্জনীয়, উচিত-অনুচিত- যা ইন্দ্রিগ্রাহ্য নয়, বুদ্ধিগ্রাহ্য, সেগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়, যেমন অন্ধকার রাতে সাদা-কালো একাকার হয়ে যায়।
ব্যক্তি ও সমাজের সৎপথে চলার ও সত্যের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য যা খুব দরকার তা হচ্ছে ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-অসত্য স্পষ্ট থাকা এবং সত্য-ন্যায় গ্রহণে ও অন্যায়-অসত্য বর্জনে যা কিছু সহায়ক তা কার্যকর থাকা। কোনো সমাজে যখন সমষ্টিগতভাবে ভালোর জ্ঞান ও চর্চা অব্যাহত থাকে তখন সমাজের সদস্যদের ভালোর পথে চলা সহজ হয়। কে না বোঝে, উত্তম প্রচলন উত্তম কর্মের ক্ষেত্রে অতি সহায়ক। এই অবস্থাটাকে তুলনা করা যায় রৌদ্রোজ্জ্বল দিবসের সাথে।
সমাজে যদি ভালো কাজের চর্চা ও প্রচলন থাকে তাহলে সর্বস্তরের মানুষের যেমন ভালো কাজটি জানা থাকে তেমনি তা মানাও সহজ হয়। আর বিপরীত বিষয়টি সম্পর্কে দ্বিধা, সঙ্কোচ, ভয় ও লজ্জা কাজ করে, যা ঐ পথে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের আভ্যন্তরীণ এই প্রেরণাসমূহ তখন মানুষের জন্যে কল্যাণকর হয়। কিন্তু যখন সমাজে মন্দ কর্মের বিস্তার ও প্রচলন ঘটে, এর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এবং তত্ত¡ ও দর্শনগত সমর্থন আসতে থাকে তখন অনেকের কাছেই বিষয়টি অস্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু জ্ঞানগতভাবেই অস্পষ্ট হয় না, কর্মগতভাবেও ঐ বিষয়ের চর্চায় দ্বিধা, সঙ্কোচ কমতে থাকে।
এভাবেই মন্দের অল্প বিস্তারও অধিক বিস্তারে সহায়ক হয়ে থাকে। এই অবস্থাটাকে তুলনা করা যায় অন্ধকার রাতের সাথে, যখন সাধারণভাবে সাদা-কালোর পার্থক্য স্পষ্ট থাকে না। সেটা স্পষ্ট হওয়ার জন্য বিশেষ আলোর প্রয়োজন হয়। সেই আলো অর্থাৎ ইলমে ওহীর আলো যাদের কাছে থাকে এবং যারা সেই আলোকধারী জামাতের সঙ্গে থাকে শুধু তাদের কাছেই ঐ সময় বিশ্বাসগত ও কর্মগত বিভ্রান্তিসমূহ স্পষ্ট থাকে। ফলে ঐসকল বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকাও তাদের পক্ষে সহজ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।