বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান সম্বলিত দ্বীন। জীবন ও জগতের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের সকল ব্যবস্থার দিকনির্দেশনা ইসলামে আছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বশক্তিমান ও অমুখাপেক্ষী। তিনি সৃষ্টিকুলের সকল দোয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সৃষ্টিজগতের কামনা, বাসনা ও মনোবাঞ্ছা পূরণ এবং তার তত্ত্বাবধান ও প্রতিপালনের সকল ক্ষমতা আল্লাহপাকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি ছাড়া অন্য কারো কোনো বিষয়ের এখতিয়ার ও অধিকার নেই। সেই সর্বশক্তিমান মহান সত্তা ছাড়া এমন কোনো শক্তিশালী সত্তা নেই। যে সৃষ্টিকুলের দোয়া, মোনাজাত আহ্বান শুনতে পারে ও এতদসংক্রান্ত বিষয়াবলির সমাধান দিতে পারে। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা সকলেই আল্লাহপাকের মুখাপেক্ষী। তিনি আল্লাহ, যিনি মুখাপেক্ষী হীন ও সকল প্রশংসার যোগ্য।’ (সূরা আল ফাতির : আয়াত ১৫)।
এই আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ আল্লাহপাক স্বয়ং করেছেন। হাদীসে কুদসীতে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন : ‘হে বান্দাহগণ! আমি নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করেছি। তোমরা ও একে অন্যের প্রতি জুলুম ও সীমালঙ্ঘনকে হারাম বলে মনে করবে। হে বান্দাহগণ! আমি যাকে সুপথ ও হেদায়েতদান করেছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট।
সুতরাং তোমরা আমার কাছেই হেদায়েত কামনা কর। তবে আমি তোমাদেরকে সুপথে পরিচালিত করব। হে বান্দাহগণ! আমি যাকে খাদ্য ও পানীয় দান করে থাকি সে ছাড়া তোমাদের সকলেই ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। সুতরাং তোমরা আমার কাছেই জীবিকা ও জীবনোপকরণ চাও, আমি তোমাদেরকে জীবিকা প্রদান করব। হে বান্দাহগণ! আমি যাকে বস্ত্র ও পরিচ্ছদ প্রদান করে থাকি সে ছাড়া তোমরা সকলেই বিবস্ত্র ও পরিচ্ছদহীন। অতএব তোমরা আমার কাছেই বস্ত্র ও পরিচ্ছদ চাও। আমি তোমাদের পরিধানের ব্যবস্থা করে দেব। হে বান্দাহগণ! তোমরা অন্ধকার রজনীতে এবং দিনের বেলায় ও পাপ কাজ করে থাক। আর আমি তোমাদের সকল পাপ মার্জনা করে দেব। (সহীহ মুসলিম)।
এই বিশ্লেষণের আলোকে আমরা দোয়া ও মোনাজাতের নিম্নলিখিত মূল নীতির সন্ধান লাভ করতে পারি। যেমন : এক. কেবলমাত্র আল্লাহপাকের কাছেই দোয়া ও মোনাজাত করতে হবে। তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে নিজের মনোবাসনা পূরণের জন্য আহ্বান জানানো যাবে না। কেননা, দোয়া এবাদতের মগজ বা সারনির্যাস। আর এবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহতায়ালা।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তাকে (আল্লাহকে) আহ্বান করাই সত্য নীতি। আল্লাহকে বাদ দিয়ে এই লোকেরা যে সকল শক্তির কাছে মিনতি জানায়, তারা তাদের আহ্বানের কোনোই প্রত্যুত্তর দিতে পারে না। তাদের কাছে মিনতি করা তো এমন ব্যাপার যেমন কেউ পানির দিকে হাত বাড়িয়ে আবেদন করে যে, তুই আমার সুখের মধ্যে পৌঁছে যা। মূলত: পানি কখনোই সে পর্যন্ত পৌঁছবে না। ঠিক এরূপই কাফেরদের দোয়া অর্থহীন ও তাৎপর্যহীন। তা’ ব্যর্থতা বৈ কিছুই নয়।’ (সূরা আর রায়াদ : আয়াত-১৪)।
এতে বোঝা যায় যে, কামনা, বাসনা ও মনোবাঞ্ছা পূরণের যাবতীয় ক্ষমতা আল্লাহপাকের নিয়ন্ত্রণে। তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যে বান্দাহদের মিনতি শুনতে পারে ও তাদের প্রার্থনার প্রতিদান দিতে পারে।
খ. প্রত্যেক মানুষকে তার প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহমুখী হতে হবে। তিনি ছাড়া না আছে কোনো প্রার্থনা শ্রবণকারী এবং না আছে কোনো প্রতিদান প্রদানকারী। এই দৃঢ়বিশ্বাস মনে এবং মুখে ধারণ করতে হবে। খ. যা হালাল ও পবিত্র, তার জন্য আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে হবে। আর যা হারাম ও অবৈধ এবং যা পাপ ও গোনাহের পরিচায়ক তার জন্য প্রার্থনা করা কেবলমাত্র নিম্নস্তরের ধৃষ্টতাই নয়, বরং চ‚ড়ান্ত পর্যায়ের অবাধ্যতা ও বটে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘প্রত্যেক সালাতে তোমরা তোমাদের লক্ষ্য স্থির রাখবে এবং তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাবে।” (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত-২৯)।
ঘ. দোয়া কবুল হওয়ার বিশ্বাস রেখে গভীর আন্তরিকতা ও সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে দোয়া করা বাঞ্ছনীয়। আল কোরআনে এই দিকনির্দেশনাই প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।’ (সূরা-আল মুমিন : আয়াত-১৪)।
ঙ. অত্যন্ত বিনয় ও মনোযোগের সাথে একাগ্রচিত্তে গভীর অভিনিবেশ সহকারে দোয়া করা উচিত। নিজের পাপরাশির কথা বিস্মৃত হয়ে আল্লাহপাকের অনন্ত করুণা, ক্ষমাশীলতা, বদান্যতা ও অপরিসীম অনুকম্পার প্রতি খেয়াল করে কায়মনে দোয়া করবে।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমার বান্দাহগণ যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে তখন তুমি বলে দাও যে, আমি তো নিকটেই আছি। প্রার্থনাকারী যখন প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করে, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত-১৮৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।