বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ শিরোনামটি আমাদের বাংলা ভাষার এক চিরায়ত প্রবাদ। লোভ করলে পাপ হয়, আর পাপ মরণ ডেকে আনে। এই তো এর সাদামাটা মর্ম। লোভ মানুষের এক স্বভাবজাত বিষয়। স্বভাব ও চরিত্রের অন্যান্য মন্দ বিষয়ের মতো এই লোভকেও তাই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। নিয়ন্ত্রণহীন লোভ পরিণতিতে ধ্বংস ডেকে আনবেই। লোভ যে কতটা ভয়াবহ পরিণতির মুখে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিতে পারে এর নজির তো আমরা প্রতিদিনই পাই। আমাদের পত্রিকার পাতাগুলোতে অন্য কিছুর সংবাদ থাকুক আর না থাকুক, লোভের এ জঘন্য পরিণতির কথা থাকাটা যেন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। যত দুর্নীতি, সবকিছুর মূলেই তো এই মরণব্যাধি লোভ।
এইডসের মতোই একটি ঘাতক ব্যাধি লোভ। ক্ষমতার দাপটে, অর্থ-বিত্তের দাপটে, পদমর্যাদার দাপটে মানুষ নির্দ্বিধায় এ লোভকে কাজে লাগায়। ওঠাবসা চলাফেরায় দুর্নীতিই হয় তার সঙ্গী। এ সঙ্গলাভের ফল হিসেবে দুনিয়ার আদালতেই তাকে দাঁড়াতে হয় আসামির কাঠগড়ায়। যে যত দাপটের সঙ্গেই দুর্নীতি করে যাক, দুর্নীতির জাল সে যতদূরই ছড়িয়ে দিক, এ পৃথিবী তাকে আসামি বানিয়েই ছাড়ে। এটাই স্বাভাবিকতা।
আসল কথা কী, লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। বিবেক-বুদ্ধি-বিবেচনা সেখানে বেকার। তাই তো আমরা দেখি, দুর্নীতির যত অভিযোগ, সবই সম্পদশালীদের বিরুদ্ধে। বরং যে যত বেশি দুর্নীতিপরাছু, সে ততটাই সম্পদশালী। এই জগতে হায়, সেই বেশি চায়, যার আছে ভূরি ভূরি। হযরত রাসূলে কারীম (সা.) এ বিষয়টি আমাদের সামনে স্পষ্ট করেছেন এভাবে : আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তাহলে সে কামনা করে- তার যদি আরেকটি উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকত! মাটি ছাড়া কোনো কিছুই তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে না! (জামে তিরমিযী : ২৩৩৭)।
লোভের একটা স্তর তো এমন, কেউ অর্থসম্পদের পেছনেই তার জীবনকে ব্যয় করে দিলো। নাওয়া-খাওয়া জীবনের সুখ-আরাম ভুলে গিয়ে কেবলই টাকা আর টাকা! অধিক সম্পদ উপার্জনের লোভে যে এভাবে নিজেকে, নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বিলিয়ে দেয়, নিজের উপার্জিত টাকা সে আর ভোগ করে যেতে পারে না। এখানে অবশ্য ব্যক্তি কেবল তার নিজের আরামকেই হারাম করে, অন্য কেউ তার দ্বারা আক্রান্ত হয় না।
লোভের আরেকটি স্তর হচ্ছে- নিজের সম্পদ বৃদ্ধির জন্যে অন্যকে আক্রান্ত করা, প্রভাব খাটিয়ে কিংবা কোনো কৌশলে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়া। লোভের উপরোক্ত প্রথম স্তরটিও প্রশংসনীয় নয় মোটেও, কিন্তু দ্বিতীয় স্তরটি সম্পূর্ণই হারাম। বলে-কয়ে হোক আর গোপন চক্রান্তের মাধ্যমে হোক, সর্বক্ষেত্রেই তা নিন্দনীয়, অবৈধ। এ লোভই মানুষের পতন ডেকে আনে। দাপট হয়তো কিছুকাল তাকে সঙ্গ দেয়। কিন্তু একসময় তাকে পতনের মুখে পড়তেই হয়। তবে এটাও অনস্বীকার্য- জীবনে চলতে গেলে টাকা লাগেই।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাই সমাধান দিচ্ছেন : তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনে সহজতা অবলম্বন করো। জেনে রেখো, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার জন্যে নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে ততক্ষণ তার কিছুতেই মৃত্যু হবে না। একটু দেরিতে হলেও তা তার কাছে পৌঁছবেই। তাই আল্লাহকে ভয় করো। উপার্জনে সহজতা অবলম্বন করো। হালাল যতটুকু তা গ্রহণ করো আর যা কিছু হারাম তা বর্জন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২১৪৪)।
এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে লোভের দুটি স্তর থেকেই বেঁচে থাকার পথ নির্দেশ করেছেন। তিনি একদিকে উচ্চারণ করেছেন আশ্বাসবাণী- তোমার জন্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যতটুকু রিজিক নির্ধারিত, তা তুমি পাবেই। যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণরূপে তুমি তা ভোগ না করবে ততক্ষণ তোমার মৃত্যু হবে না। এই বিশ্বাস বুকে ধারণ করে তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলো আর সহজে যতটুকু সম্ভব উপার্জনের চেষ্টা করো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।