Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বনেই ফিরে গেল বন্য প্রাণীটি

খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:২১ পিএম

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা থেকে উদ্ধারকৃত আহত সেই মেছো বিড়ালটি অবশেষে অবমুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলার বুনো পরিবেশে প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা হয়।
উদ্ধারের পর প্রাণীটির তত্ত্বাবধান করেন সামাজিক ও পরিবেশ সংগঠন ‘অরণ্যে তারুণ্য’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজের খাগড়াছড়ি স্টাফ রির্পোটার অপু দত্ত।

তিনি জানান, গত ২৭ নভেম্বর উসাথোয়াই মারমা মানিকছড়ি উপজেলা থেকে কাজ শেষে ফেরার পথে গুইমারা নামক এলাকার সড়ক থেকে আহত অবস্থায় মেছো বিড়ালটি উদ্ধার করেন। সেটি কোনো গাড়ির সঙ্গে আঘাত পেয়ে আহত হয়েছিল। পরে উসাথোয়াই মারমা ও অং মারমা প্রাণীটিকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। আমি মেছো বিড়ালটিকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় পশু চিকিৎসক স্বপন চৌধুরীর কাছে নিয়ে যাই। গত দুই দিন তিনিই মেছো বিড়ালটিকে পরিচর্যা করেছেন।
অপু দত্ত বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে অনেকে আসা-যাওয়া করেছে। কিন্তু অবুঝ বন্যপ্রাণীটির গুরুত্ব ও কষ্ট কেউ বোঝেনি। বুঝেছিলেন কেবল উসাথোয়াই ও অং মারমা। প্রাণীটি প্রায় সুস্থ হলে আজ সেটিকে আলুটিলা বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি বন্যপরিবেশ পেয়ে মেছো বিড়ালটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।
এ সময় বন্যপ্রাণীর প্রতি সদয় হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে অপু বলেন, প্রাণ প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর গুরুত্ব বুঝতে হবে। তাদের আবাসস্থল দিনে দিনে দখল হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে আগে বহু রকম বন্যপ্রাণী থাকলেও এখন সেসব নেই। প্রাণ প্রকৃতি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না, এতটুকু বুঝতে হবে। প্রাণী জগতের প্রায় সব জায়গাতো আমরা ইতোমধ্যে দখল করে ফেলেছি। কতটুকুইবা তাদের জন্য আছে।
মেছো বিড়ালটি অবমুক্ত করার সময় বন বিভাগের স্থানীয় বিট কর্মকর্তা বিক্রম ত্রিপুরা, সাংবাদিক মো. শাহ জাহান, মো. হামিম, অজয় দাশ, মো. তানভির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, আহত মেছো বিড়ালটি উদ্ধার ও পরিচর্যায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মানবিকতা ও মমত্ববোধের প্রশংসা করেন বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা।

মেছো বিড়াল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাণীটির প্রকৃত নাম মেছো বিড়াল (Fishing Cat)। কিন্তু অনেক এলাকায় এটিকে মেছোবাঘ নামেও ডাকে। বাঘ নামে ডাকার কারণে শুধু শুধু আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রাণীটি মানুষকে আক্রমণ করে না, বরং মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। তাই এটি নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীটি বিচরণ রয়েছে। জলাভূমি আছে এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়। প্রাণীটি জলাভূমির মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ছাড়াও পোকামাকড় ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। জনবসতি স্থাপন, বন ও জলাভূমি ধ্বংস, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
জোহরা মিলা আরও বলেন, ২০০৮ সালে মেছো বিড়ালকে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)। তাছাড়া বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রজাতি সংরক্ষিত। তাই এই প্রাণীটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্য প্রাণী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ