Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নভেম্বরে ঝরেছে ৪৭ প্রাণ

নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাকেন্দ্রিক নির্বাচনী সহিংসতায় এক মাসে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফোরাম (এমএসএফ)। নভেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ১১টি জাতীয় গণমাধ্যম ও নিজস্ব তথ্যানুসন্ধান করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় এমএসএফ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে ৯৮টি নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৭৮ জন। এসব সহিংসতায় আহত হয়েছেন ৫০০ এর বেশি মানুষ। নিহত ৪৭ জনের মধ্যে ১৬ জন প্রতিপক্ষের গুলিতে এবং চারজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান। তাদের প্রায় সবাই ভোটে অংশ নেয়া প্রার্থীদের সমর্থক বা কর্মী। প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি নরসিংদী জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। নীলফামারীতে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ছয়টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। এই সময়ে ১৩৯ জন নারী ও ১৩৮ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

ইউপি নির্বাচনের প্রথম তিনটি ধাপে ভোটের আগে-পরে ও ভোটের দিন গোলযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবার। তৃতীয় ধাপে ভোট গ্রহণের দিন আগের ধাপের চেয়ে গোলযোগ-সহিংসতা ও প্রাণহানি তুলনাম‚লক কম হলেও লক্ষীপুর, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, সাতক্ষীরা, ফেনীসহ অনেক এলাকায় অনিয়ম, দখলসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়া সদরের শাখারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা সমর্থিত প্রার্থী এনামুল হক রুমির বিজয়ের পর থেকে শাখারিয়ায় চলছে সন্ত্রাসী তান্ডব। গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পরপরই শাখারিয়ার পল্লী মঙ্গল হাটে এক বিজয় সমাবেশে বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এনামুল হক রুমি তাদের বক্তব্যে কর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও উপজেলা চেয়ারম্যান পত্মী মাহফুজা খানম লিপি তার বক্তব্যে উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিলে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠে। নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হাসান শামীম ও ইখলাস উদ্দিন মন্ডলের কর্মী-সমর্থকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সভাস্থলের পাশেই পল্লী মঙ্গল হাটে ইউনুস নামে এক ভাজাপোড়া ব্যবসায়ির দোকান ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয় ।

সভাচলাকালে একটি ভিডিও ক্লিপে মাহফুজা বেগম লিপিকে বলতে শোনা যায়, ‘আনারস প্রতীকের সমর্থক রেজাউল মেম্বার উপজেলা চেয়ারম্যন সফিক সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেছে , তাকে যেখানে পাবেন গণধোলাই দেবেন, ওর দাড়ি কেটে নেবেন।’

এই বক্তব্যের পরই নৌকা সমর্থক একদল কর্মী গোপালবাড়ি, জঙ্গলপাড়া, কদিমপাড়া, বরাইপাড়া ও পাঁচবাড়িয়া এলাকায় আনারস প্রতীকের সবগুলো নির্বাচনী অফিস ভেঙে দেয়। ইউনুস, মোমিনসহ ১৫ জনকে লাঞ্ছিত করে। গতকাল বিকেলে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাখারিয়া জুড়ে সরকার সমর্থকদের মহড়ায় এলকায় অনেকেই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেনা, অনেকে আবার গোপনে এলাকা ছাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হাসান শামীম।

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে নির্বাচন শেষ হতে না হতেই সংহিতার ঘটনা ঘটেছে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যায় ৭টার সময় উপজেলা রাজাপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বিজয়ী হয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মুকুল হোসেনের সমর্থকের উপর হামলা চালায়। এ সময় মুকুল হোসেনের দুই সমর্থক আহত হয়। আহতরা হলেন নাগগাঁতি গ্রামের সাইদুল ইসলাম (৩৫) ও কামরুল ইসলাম (৩৪)।

এ বিষয়ে মুকুল হোসেনের ভাই মাসুদ রানা বাদী হয়ে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আমাকে নির্বাচন নষ্ট করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। এসব বিষয়ে নির্বাচনে ডিউটিরত প্রশাসন অবহিত রয়েছে। তাছাড়াও থানায় আমার প্রতিদ্ব›িদ্বতায় মুকুল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
বেলকুচি থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা উভয় পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নির্বাচনে পক্ষে কাজ না করায় দোকানের তালা ভেঙে নগদ অর্থসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের শান্তির মোড়ে গত সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান দোকানদার সুমন মিয়া।

স্থানীয়রা জানায়, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল আলম চাকলাদার লিটনের পক্ষে কাজ করায় জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন সদস্য সচিব মুকুট মিয়ার ছেলে সুমন মিয়ার দোকানের তালা ভেঙে প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আক্তারুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানের তালা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাই। পরে দোকান খুলে দেখি ক্যাশ বাক্স মেঝেতে পড়ে আছে। দোকানে অল্প কিছু মালামাল পেয়েছি।

এদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা পিটিয়ে জখম করেছে বিজয়ী প্রার্থী, তার ভাই ও বাবাকে। গত সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে উপজেলার কাষ্টাভাঙ্গা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাতগাছিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত মেম্বার মো. রাশেদুল ইসলাম একই ওয়ার্ডের তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আতিয়ার শেখের ছেলে। ঘটনার সময় বিজয়ী মেম্বার রাশেদুল ইসলাম নির্বাচনী সাতগাছিয়া গ্রামে মো. জুম্মন নামে অসুস্থ্য এক ব্যক্তিকে দেখতে যান। তারা বাড়ি পাশে দাড়িয়ে অসুস্থ্য ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় পরাজিত মেম্বার মো. কোরবান আলীর সমর্থকরা তার উপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের ধারালো দায়ের কোপে রাশেদুলে ডান পা কেটে যায়। রাশেদুল ও অসুস্থ্য জুম্মন দ্রæত একটি ঘরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা রাশেদের ভাই রফিকুল ইসলাম, বাবা আতিয়ার রহমান ও প্রতিবেশি মোমিনুর রহমানকে পিটিয়ে জখম করে।

খবর পেয়ে বারোবাজার ফাড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাতেই আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরমধ্যে দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি দুইজন মেম্বার রাশেদ ও তার বাবা আতিয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বারোবাজার পুলিশ ফাড়ির আইসি মোকলেছুর রহমান জানান, রাতে সংবাদ পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেম্বারসহ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি। তবে এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ