বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সাগর সৈকত সহ প্রায় ১২ কিলোমিটার সী বীচ বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ-এর ছোবল থেকে রক্ষায় ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকার ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত ১ ডিসেম্বর। ইতোপূর্বে এ সংক্রান্ত ডিপিপি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোন থেকে বোর্ডে প্রেরনের পরে তা অনুমোদন করে মন্ত্রনালয়ে পাঠান হয়েছিল গত মাসে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষন অনুযায়ী বিপর্যস্ত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটকে রক্ষায় আগের ডিপিপি সংশোধন করে সাড়ে ৯শ কোটি থেকে ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এরআগে প্রকল্প ব্যায় ধরা হয়েছিল। ৬৪৫ কোটি টাকা। তবে প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরো বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তভর্’ক্ত করায় ব্যায় বৃদ্ধি পেয়ে ১২শ ৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোনের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
১ ডিসেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সভায় ডিপিপি’টি অনুমোদন লাভ করলে আগামী মাসেই প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনে পৌছবে। পরবর্তিতে তা পরিকল্পনা কমিশনের ‘প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’ ও ‘কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি’তে অনুমোদনের পরে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটি ‘একনেক’এর চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেস করার কথা। তবে সে পর্যন্ত পৌছতে কতদিন বা মাস সময় লাগবে তা এখনই বলতে পারেন নি দায়িত্বশীল মহল।
তবে আগামী মার্চ এপ্রিলের মধ্যে কুয়াকাটা ভাঙন রোধের প্রকল্প-প্রস্তাবটি নিয়ে একনেক-এর সবুজ সংকেত মিললে চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ‘আরএডিপি’তে অন্তভর্’ক্তির সম্ভবনা থকবে বলেও মনে করছেন একাধীক দায়িত্বশীল মহল। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রকল্পটি নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পরিকল্পনা কমিশন আমলাতান্ত্রিক কালক্ষেপন কতটা পরিহার করে তার ওপর।
উপমহাদেশের বিরল প্রকৃতিক সৌন্দর্যের পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পটুয়াখালীর সর্ব দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেসে অপেক্ষমান কুয়াকাটায় হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য দেখতে। বিদেশী পর্যটকদের খুব আনাগোনা না থাকলেও যেসব প্রবাসীরা দেশে আসেন তারা অন্তত একবার হলেও পরিবার পরিজন নিয়ে আসছেন কুয়াকাটায়।
গত দুই দশকে কুয়াকাটায় পর্যটক আবাসন সুবিধা সহ নানামুখি উন্নয়ন হলেও একটি পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার প্রধান বাঁধা হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন। এমনকি ২০০৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কুয়াকাটার হলিডে হোমেসে পর্যটন মন্ত্রনালয়ের এক মূল্যায়ন সভায় আরো একটি মোটেল নির্মান ছাড়াও বৌদ্ধ মন্দির সংস্কার ও আধুনিকায়নে অর্থ বরাদ্ব সহ পর্যটন কেন্দ্রটিকে ‘একান্ত পর্যটন এলাকা’ হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন।
কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রটির মুল অকর্ষন সী-বীচের পূর্বের রাবনাবাদ ও পশ্চিম প্রান্তের আন্ধারমানিক চ্যানেলের শ্রোত গতি পরিবর্তন করায় ১৯৯৮ সাল থেকে এখানে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে ঢেউ-এর আঘাতে বছরে এক মিটার করে সী বীচ বিলীন হতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে তেমন কোন উদ্বেগ ছিলনা।
২০১০ সাল থেকে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু উদ্যোগ গ্রহন করলেও তা টেকসই হয়নি। অনেকটা অপরিকল্পিত ভাবে কয়েক দফায় জিউ টিউব, জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মূল সী বীচটি সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষার কোটি কোটি টাকা ব্যায়ের পরেও কোন ইতিবাচক ফল হয়নি।
পরবর্তিতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’ এবং নেদারল্যান্ডের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এ লক্ষে ব্যাপক সমিক্ষা সম্পাদনের মাধ্যমে নকশা প্রনয়ন সহ পরামর্শ প্রদান করেছে। আইডব্লিউএম-এর প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ থেকে সী বীচ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গ্রোয়েনের মাধ্যমে ভাঙন রোধের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এলক্ষে মূল সী বীচ রক্ষায় দু প্রান্তের রাবনাবাদ ও আন্দামানিক চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লকের সাহায্যে গ্রোয়েনগুলোতে জিও টেক্সটাইল-এর ওপর ৪৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার সাইজের সিসি ব্লক সন্নিবেশের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটন আকর্ষন গড়ে তুলতে ‘ওয়াকিং বে’ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ‘লাইফ গার্ড স্টেশন’, বসার স্থান, ট্রইল, পার্কিং ল্যান্ডস্কেপ ও টয়লেট নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সাড়ে ৯শ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ডিপিপি’র ওপর কিছু পর্যবেক্ষন সহ পূণর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। সে আলোকে কুয়াকাটা ভাঙন রোধের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রটিকে অকর্ষণীয় করতে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যায়ও সাড়ে ৯শ কোটি থেকে ১ হাজার ২০৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
পূণর্গঠনকৃত প্রকল্প-প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ১২ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পোটিং করে মেরিন ড্রাইভ রোডের আদলে সড়ক নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বন বিভাগের ইকোপর্কের অভ্যন্তরে ৯শ মিটার ওয়াকিং সেল সহ ওয়াকওয়ে নির্মিত হবে ২.৬ কিলোমিটার। গঙ্গামতির কাছে মেরিন ড্রাইভ রোড দুটি নান্দনিক সেতুও নির্মিত হবে প্রকল্পের আওতায়। যার একটি হবে ঝুলন্ত সেতু। অপরটি আরসিসি।
নেদারল্যান্ডের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সহ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তদরকি করবে দেশীয় আধা সরকারী গবেষনা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’।
তবে বিভিন্ন মহল থেকে যত দ্রুত সম্ভব ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। নচেত হতশ্রী কুয়াকাটার প্রতি দেশী বিদেশী পর্যটকদের আগ্রহ ধরে রাখা দুরুহ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অনেক পর্যটক নিরাপত্তা জনিত কারনেও কুয়াকাটাকে এড়িয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছেন ট্যুর অপারেটরগন। অথচ কুয়াকাটা সহ পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সারা দেশের সাথে সড়ক পথে সংযুক্ত করতেই অতি সম্প্রতি প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে পায়রা সেতু নির্মিত হয়েছে।
ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যাবার আগেই কুয়াকাটাকে রক্ষায় বাস্তব উদ্যোগী হবার পরামর্শ পানি বিশেষজ্ঞগনের। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোনের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার জানান, সরকার কুয়াকাটায় ভাঙন রোধে সহ একটি নিরারপদ ও আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে খুবই আন্তরিক। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীও ইতোমধ্যে দু দফায় কুয়াকাটা সফর করে সরেজমিনে সে ধরনের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সে আলোকেই কাজ চলছে বলে জানিয়ে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অর্থ বছরের প্রথমভাগেই কুয়াকাটায় বাস্তব কর্মকান্ড শুরু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।