Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফেয়ার প্রাইসে দলীয়করণ ইচ্ছে মাফিক নাম বসিয়েছেন চেয়ারম্যান অনুমোদন দিয়েছেন ট্যাগ অফিসার

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নে সরকারের ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির কার্ড বিতরণে দুর্নীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। কার্ড দেয়ার নামে অনেকের কাছ থেকেই নেয়া হয়েছে টাকা। ওজনেও দেয়া হচ্ছে কম। আবার অযোগ্যরাও পেয়েছেন কার্ড। নগরঘাটা ইউনিয়নসহ একইভাবে উপজেলার জালালপুর ও তেতুলিয়া ইউনিয়নেও দরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এই চাল নিয়ে চালবাজি করছেন জনপ্রতিনিধিরা। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বর প্রফুল্ল মন্ডল ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর ঝর্ণা বেগম একটি তালিকা তৈরি করে চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মোড়লের কাছে দেন। কিন্তু বিগত ইউপি নির্বাচনে তাকে সমর্থন না করায় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মোড়ল ৯নং ওয়ার্ডের ৭২জনের তালিকা থেকে দিনমজুর অন্তত ২৪জনের নাম বাদ দিয়ে তার নিজের লোকজনের নাম বসিয়েছেন। শুধু ৯নং ওয়ার্ড নয়, ইউনিয়নের অন্যান্য ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও একইভাবে তালিকা পরিবর্তন করে নিজের লোকজনের নাম বসিয়েছেন চেয়ারম্যান। আর ট্যাগ অফিসার রফিকুল ইসলাম তাতে স্বাক্ষর করে অনুমোদন করেছেন। যদিও নিয়মানুযায়ী প্রকাশ্যে মাইকিং করে ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের তালিকা তৈরির কথা। প্রথমে প্রস্তুতকৃত ৯নং ওয়ার্ডের তালিকায় দেখা গেছে, ক্রম অনুযায়ী এক নম্বরে রয়েছেন হরিখোলা গ্রামের ললিত বিশ্বাসের ছেলে অরুন বিশ্বাস ও দুই নম্বরে রয়েছেন একই গ্রামের দুলাল চন্দ্র মন্ডলের ছেলে শ্রী জগদীষ চন্দ্র মন্ডল। কিন্তু ভোট না দেয়ায় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান তাদের নাম বাদ দিয়ে ক্রম এক এ পংকোজ মন্ডল ও দুই এ সুধাংশর নাম বসিয়েছেন। একইভাবে ৯নং ওয়ার্ডের অন্তত ২৪জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নিজের লোকজনের নাম বসিয়েছেন তিনি। কারও কারও কাছ থেকে নিয়েছেন টাকা। আবার চাল দেয়ার সময়ও ৩০ কেজির পরিবর্তে দিচ্ছেন ২৮ কেজি করে। আর এসব কিছুর প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করছে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান কর্তৃক তৈরি করা নতুন তালিকা। নতুন তালিকায় নাম ও বাবার নাম বদলালেও তারা বদলাতে ভুলে গেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর। এলাকাবাসীর দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া গরিবের চাল নিয়ে চালবাজি করার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যাতে আর কেউ কখনও গরিবের হক নিয়ে খেলা করতে না পারে। এ ব্যাপারে নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান বলেন, তালিকা তৈরিতে অনিয়ম করা হয়নি। এখানে ডিলার দু’জন। তারা একই বাজারে ব্যবসা করে। তাদের নিয়ে প্রথমে একটু ঝামেলা হয়েছিল, পরে ইউএনও এসে ওয়ার্ড ভাগ করে দেওয়ায় তা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এখন আর কোন ঝামেলা নেই। ফেয়ারপ্রাইজ কর্মসূচির নগরঘাটা ইউনিয়ন সভাপতি ও ট্যাগ অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, তালিকা নিয়ে স্বজনপ্রীতির বিষয়টি তার জানা নেই। কিন্তু একই ওয়ার্ডের দুটি তালিকাতেই তার স্বাক্ষর আছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে বলে জানান। এদিকে, উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে একইভাবে দলীয়করণ ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ উঠেছে। জালালপুর ইউনিয়নের তালিকায় এমন অন্তত ১৫০জনের নাম রয়েছে, যারা ফেয়ার প্রাইজের কার্ড পাওয়ার যোগ্য নন, ধনসম্পদের মালিক। আবার তেতুলিয়া ইউনিয়নে ফেয়ারপ্রাইজের কার্ড বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যেনতেনভাবে তালিকা করে পরে সেই কার্ড বিক্রি করে দিয়েছেন ইউপি চেয়্যারম্যান। এদিকে, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদ হোসেন জানান, তিনি সরুলিয়া ইউনিয়নের তিনজন কার্ডধারীর বিপক্ষে অভিযোগ পেয়েছিলেন। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এছাড়া জালালপুরে কিছু কার্ডধারীর বিপক্ষে অভিযোগ উঠেছিল, সেটাও নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেয়ার প্রাইসে দলীয়করণ ইচ্ছে মাফিক নাম বসিয়েছেন চেয়ারম্যান অনুমোদন দিয়েছেন ট্যাগ অফিসার
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ