বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জাহেলি যুগের বর্বরতা ও কু-প্রথাগুলোর কিছু এখনো আমাদের সমাজে বিরাজমান বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ এখানে আমরা এমন একটি চরম নিষ্ঠুরতার কথা বলতে চাই, যা জাহিলি আরবের কাফের-মোশরেকদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং ইসলামের যুগেও নিষ্ঠুর পাষান হৃদয়ের কাফেরগণ এ অমানবিক হিংস্র কার্যকলাপ গর্বের সাথে করত। রণাঙ্গনে তারা মুসলমানদের (শহীদদের) লাশের অবমাননা করতে দ্বিধাবোধ করত না , তাদের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা এতই প্রবল ও ভয়ঙ্কর ছিল যে, তারা নিহত (শহীদদের) লাশের অবমাননা করে ছাড়ত। লাশের অঙ্গচ্ছেদ ও বিকৃত করার অনেক দৃষ্টান্তই তারা উপস্থাপন করেছিল। এরূপ বর্বর, অসভ্য আচরণকে আরবিতে ‘মুছলাহ’ বলা হয়। কোনো লোককে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যেমন মহাপাপ তেমনি নিহত ব্যক্তির লাশের অবমাননা তথা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, খন্ড-বিখন্ড করা, জ্বালিয়ে দেয়া, ঝুলিয়ে রাখা, মাটিতে পুঁতে ফেলা ইত্যাদি পাশবিকতা যে মহাপাপকে আরো জঘন্য করা নামান্তর। তাই লাশের বিকৃত ও অঙ্গহানি করা ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
ইসলামের এপ্রাথমিক যুগের ইতিহাসে দেখা যায়, ওহোদ যুদ্ধে মুসলমানদের (শহীদদের) অনেকের লাশের ‘মুছলাহ’ করেছিল কাফেররা। বিশেষত: কাফের নারীরা শহীদদের নাক-কান কেটে ফেলে। হজরত আমির হামজা (রা.) যিনি সাইয়্যেদুশ শোহাদা অর্থাৎ শহীদদের সর্দার উপাধিতে ভূষিত, তাঁর নাক-কান কর্তন করে হিন্দা (আবু সুফিয়ানের স্ত্রী) তাঁর কলিজা মুখে চিবিয়ে মনের আক্রোশ প্রদর্শন করে। ওহোদ যুদ্ধে শহীদদের লাশের এরূপ অবমাননার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।
নানাভাবে মুসলমানদের অবমাননা করার অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসে ভরপুর। যারা এহেন কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রতিশোধের আগুনকে আরো উত্তপ্ত করে, তারা নিজেদের হিংস্র মন-মানসিকতা চরিতার্থ করতে চায়। মরণের পর মৃত ব্যক্তির দুনিয়ায় কৃতকর্মের পরিণত আল্লাহরই ইচ্ছাধীন। তাঁর নেক আমলের সওয়াব অথবা বদ আমলের আজাব (শাস্তি) আল্লাহই দেবেন। এ ব্যাপারে দুনিয়ার জীবিতদের করণীয় কিছুই নেই। তবে আল্লাহর দরবারে মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত কামনা ও ইছালে সওয়াবসহ নানা উপায় অবলম্বন করতে পারে।
সামাজিক বাস্তব জীবনে প্রত্যক্ষ করা যায় যে, অন্যায়ভাবে বিনা বিচারে কাউকে হত্যার মতো মহাপাপ করে লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে পানিতে, জঙ্গলে নিক্ষেপ করা ইত্যাদি নৃশংসতা প্রদর্শন করা হয়। যেসব জাতির মধ্যে মানুষের মৃত্যুদেহ দাহ করার প্রথা প্রচলিত, তাদের কথা ভিন্ন, কিন্তু মুসলমানদের লাশ কবরে দাফন করার বিধান লঙ্ঘন করার এসব প্রবণতা অত্যন্ত নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত। তিক্ত হলেও সত্য যে, মৃত মুসলমানদের লাশ দাফনের পরিবর্তে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ও সাগরে লাশ ফেলে দেয়ার নানা ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে এ করোনাকালেও।
এমনকি কবর/কবরস্থানের মর্যাদা রক্ষার পরিবর্তে অবমাননা করার ঘটনাও নানা স্থানে ঘটছে। আমাদের দেশের বিশেষত: মহানগরীতে কবরের স্থানে নানাভাবে একই কবরে ওপর-নিচে বহু লাশ দাফন করা এখন প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। কবরেরস্থান বেচা-কেনা করা কতটুকু ইসলাম সম্মত এ সর্ম্পকে মুফতী উলামায়ে কেরাম রায় দেবেন। একই সাথে বলা যায়, কবরস্থানে জায়গা সংকুলানের স্বার্থে কয়েক মাস বা বছর পর কবরস্ত লাশের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়, সেগুলো কোথায় নিয়ে ফেলা হয় অথবা সেগুলো কি করা হয় এবং তা কতটুকু শরিয়তসম্মত, এ ধরনের নানা প্রশ্ন রয়েছে ।
মুসলমানের কবর ও কবরবাসীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা জীবিতদের নৈতিক দায়িত্ব। এ ব্যাপারে অবহেলা-অসতর্কতা কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।