Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল কুরআনের আলোকে জাহান্নামের শাস্তি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

আল কুরআনুল কারীম দ্বারা জাহান্নামের যেসব শাস্তির বিষয় প্রমাণিত তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা ফরজ বা অপরিহার্য। কাফির, মুশরিক, মুনাফিক নির্বিশেষে জাহান্নামে নির্ধারিত শাস্তি ভোগ করবে। আল কুরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন : (ক) তোমরা ঐ নরকাগ্নিকে ভয় করো, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান : ১৩১)।

(খ) কাফিরদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি, তাদের জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত ঘোষিত হবে না যে তারা মৃত্যু বরণ করবে, আর তাদের ওপর থেকে জাহান্নামের আযাব হ্রাসও করা হবে না। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক অবাধ্য বিদ্রোহীকে প্রতিফল দান করব। (সূরা আল ফাতির : ২৬)। (গ) এরা দু’জন বিরোধকারী। তারা তাদের প্রতিপালকের ব্যাপারে বিরোধ করেছে। সুতরাং যারা অবাধ্য হয়েছে ও বিদ্রোহ করেছে, তাদের আগুনের কাপড় টুকরা টুকরা করে লাগিয়ে দেয়া হবে। (সূরা আল হাজ্জ : ১৯)। (ঘ) তাদের মাথার উপর থেকে উত্তপ্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে, এতে তাদের উদরস্ত সব ও দেহস্থ চামড়া তথা ভেতর ও বাহির ঝলসে যাবে। (সূরা আল হাজ্জ : ২০)। (ঙ) জাহান্নামীরা যখনই শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সেখান হতে বের হবার ইচ্ছা করবে, তখনই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবে, তোমরা দগ্ধিভূত হওয়ার শাস্তি আস্বাদন করো। (সূরা আল হাজ্জ : ২২)। (চ) যখন জাহান্নামের উপযুক্ত ব্যক্তিদের শৃঙ্খলিত অবস্থায় জাহান্নামের সঙ্কীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তারা সেখানে মৃত্যু কামনা করবে। তাদের বলা হবে- তোমরা (শুধুমাত্র) একবারের জন্য মৃত্যুকে ডেকো না বরং বহুবার মৃত্যুর জন্য তাকে আহবান করো। (সূরা ফুরকান : ১৩-১৪)। (ছ) জাহান্নামীগণ দারোগ ফিরশ্তাকে ডেকে বলবে, হে রক্ষী ফিরিশতা! তোমর প্রতিপালক আমাদের ওপর মৃত্যুর ফায়সালা দান করুক! ফিরিশতা বলবেন : তোমরা এখানেই অবস্থান করো। (সূরা যুখরুফ : ৭৭)।

(জ) তারা তাদের সামনে উপস্থাপিত রক্ত, পুঁজ ঢোকে ঢোকে মুখে তুলবে, কিন্তু গলাধঃকরণ করতে পারবে না। চতুর্দিক হতে তাদের কাছে মৃত্যু আসতে থাকবে, কিন্তু তারা মরবে না। এর পেছনে রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা ইব্রাহীম : ১৬-১৭)। (ঝ) অতঃপর জাহান্নামে শাস্তির তীব্রতায় মৃত্যুবরণ করবে না, আবার স্বাভাবিকভাবে জীবন্তও থাকবে না। (সূরা আ’লা: ১৩)। (ঞ) এটাই হলো পরিণাম, তারা যেন এর উত্তপ্ত পানি ও দুর্গগ্ধ পুঁজের স্বাদ আস্বাদন করে। (সূরা সোয়াদ : ৫৭)। (ট) তার পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম। পুঁজ-রক্ত মিশ্রিত পানি পান করতে দেয়া হবে। পান করার জন্য তা ঢোকে ঢোকে মুখে তুলবে, তা গলাধঃকরণ করতে পারবে না। (সূরা ইব্রাহীম : ১৭)। (ঠ) বল, সত্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে সমাগত। সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনয়ন করার করুক, আর যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক। আমি জালিমদের জন্য অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে তাদের পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। তা কত নিকৃষ্ট পানীয়, কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল। (সূরা আল কাহাফ : ২৯)। (ড) তার কাছে সকল স্থান হতে মৃত্যু আগমন করবে, অথচ সে মরবে না। আর তার পেছনেই আছে কঠোর শাস্তি। (সূরা ইব্রাহীম : ১৭)। (ঢ) বলা হবে, ওকে ধর, গলায় বেড়ি লাগাও এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। অতঃপর সত্তর হাত দীর্ঘ শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করো। (সূরা আল হাক্কাহ : ৩০-৩২)। (ণ) জাহান্নামীদের জন্য খাদ্য হবে শুধু ক্ষতনিঃসৃত পুঁজ। তা একমাত্র গুনাহগার অপরাধীরাই খাবে। (ত) সেদিন তাদের মুখমÐল উল্টিয়ে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা আল আহযাব : ৬৬)।

(থ) সেদিন অধঃমুখী করে তাদের অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে। বলা হবে তোমরা জাহান্নামের শাস্তি আস্বাদন করো। (সূরা আল ক্বামার : ৪৮)। (দ) আল্লাহ তায়ালা মুনাফিক ও কাফির সকলকে জাহান্নামে একত্রিত করবেন। (সূরা নিসা : ১৪০)। (ধ) জাহান্নামের আছে সাতটি দ্বার। জাহান্নামীদের প্রত্যেক শ্রেণির জন্য পৃথক পৃথক অংশ আছে। (সূরা আল হিজর : ৪৪)।

(ন) অবশ্যই যারা (আল্লাহর প্রতি) অবাধ্য আচরণ করেছে, তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর আযাবের সামনে কোনো কাজে আসবে না। তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন। (সূরা আলে ইমরান : ১০)। (প) তোমরা ঐ অগ্নিকে ভয় করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, তা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (সূরা আল বাক্বারাহ : ২৪)। (ফ) নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্ব নি¤œস্তরে। তুমি কখনো তাদের কোনো সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা আল নিসা : ১৪৫)।

মোটকথা, উল্লিখিত বাইশটি আয়াত ছাড়াও বহু আয়াতে জাহান্নামের আযাবের কথা বিবৃত হয়েছে। পরিশেষে এ প্রার্থনাই করছি, হে আল্লাহ! আপনি দয়া করে আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বিমুক্ত রাখুন! আমীন!



 

Show all comments
  • Md Humayun Kabir ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৫ এএম says : 0
    জাহান্নাম হলো আজাব তথা শাস্তির আবাসস্থল। জাহান্নাম হলো কষ্টের অতল দরিয়া। জাহান্নামের আজাবও কষ্ট কখনো শেষ হবার নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim Mostofa ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৫ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা কাফের ও পাপিষ্ঠদের কৃতকর্মের প্রতিদান হিসেবে জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Suzon ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৬ এএম says : 0
    পবিত্র কুরআনের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের পরিচয়ের সাথে সাথে জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহতার চিত্রও তুলে ধরেছেন। যদিও মানুষ জাহান্নাম দেখেনি তবুও জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা শুনে ভয় পাচ্ছে। তবে জাহান্নাম আরো ভয়াবহ যা মানুষের কল্পনারও ঊর্ধ্বে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ibrahim Khalil ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৬ এএম says : 0
    জাহান্নামের অপর একটি নাম ‘হুত্বামাহ’ তথা পিষ্টকারী। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কী? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি’ (সূরা হুমাযাহ : আয়াত ৪-৬)।
    Total Reply(0) Reply
  • H Mujammil H Mahin ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৭ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জাহান্নামের ভয়াবহতম শাস্তি থেকে হিফাজত করে জান্নাত লাভে তাঁর বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • salman ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৯:১৪ এএম says : 0
    হে আল্লাহ! আপনি দয়া করে আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বিমুক্ত রাখুন! আমীন!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন