Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের জনসংখ্যা আর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৫০ পিএম

কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ভারতের নীতির অংশ। তবে সাম্প্রতিক তথ্য দেখায় যে, ভারতকে শীঘ্রই বিপরীত দিক থেকে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। কারণ, জনসংখ্যার বিস্ফোরণের বদলে দেশটিতে জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

১৯৫২ সালে ভারত তার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু করার পর থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি সরকারী নীতি হয়ে উঠেছে। দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বিষয়টিকে জাতীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আজকে একটি বিষয় তুলে ধরতে চাই: জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে।’ তিনি আরও বলেন যে, যারা ছোট পরিবারের নীতি অনুসরণ করে তারাও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখে। এটাও একধরনের দেশপ্রেম।’

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ডেটা দেখায় যে, ভারতীয়রা ইতিমধ্যে আরও ‘দেশপ্রেমিক’ হওয়ার পথে রয়েছে এবং জনসংখ্যার টাইম বোমা নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে। গত ১৫ বছরে ভারতে শতাংশের বিচারে ১৫ বছরের নীচে জনসংখ্যা অনেকটা কমেছে। অর্থাৎ বয়স বাড়ছে জনসংখ্যার। গত বুধবার জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষার পঞ্চম পর্যায়ের যে প্রাথমিক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে ২০১৯-২১ সালে ভারতে ১৫ বছরের নীচে জনসংখ্যার হার ঠেকেছে ২৬.৫ শতাংশে। ২০০৫-০৬ সালের জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষায় সেই হার ৩৪.৯ শতাংশ ছিল। যদিও এখনও ভারতীয়দের গড় বয়স অনেকটাই কম। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখনও যথেষ্ট ‘যুবক’ দেশ ভারত। সেই সময় ভারতের গড় বয়স ছিল ২৪।

সেই পরিস্থিতিতে ভারতের নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বড়সড় পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সভাপতি যামিনী আইয়ার জানান, দেশের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে বর্তমানে মহিলাদের স্বাস্থ্যের দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। শুধুমাত্র তাদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলেই চলবে না। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগের থেকে ২০১৯-২১ সালে বেশি মহিলা ১০ বছর স্কুলে পড়েছেন এবং শ্রমক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার কমে যাওয়ার বিষয়টি ভারতের শ্রম বাজারে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি ভারতকে এগিয়ে যেতে হয়, তাহলে সেই বিষয়গুলোর অবলিম্বে সমাধান করতে হবে।’

উল্লেখ্য, সেই তথ্য ‘স্যাম্পেল সার্ভে’-র (সমীক্ষা) ভিত্তিতে উঠে এসেছে। যে সমীক্ষা ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে করা হয়েছিল। সমীক্ষার চতুর্থ দফা (২০১৫-১৬) থেকে পঞ্চম দফায় (২০১৯-২১) প্রায় প্রতিটি রাজ্যে টিএফআর কমেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হ্রাস জম্মু-কাশ্মীরে (২.০ থেকে ১.৪)। মাত্র দু'টি রাজ্যে টিএফআর বেড়েছে- কেরালা (১.৬ থেকে ১.৮) এবং তামিলনাড়ু (১.৭ থেকে ১.৮)। গ্রামাঞ্চলে (২.১) অবশ্য ফার্টিলিটি রেট শহরাঞ্চলের (১.৬) থেকে বেশি। সমীক্ষার প্রধান ইনভেস্টিগেটর কেএস জেমসের বক্তব্য, ‘এখন দেশে দুজন বাবা-মায়ের দু'টি সন্তান। এ ভাবে এগোলে এমন একটি দিন আসবে যখন আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হবে শূন্য। সেটি এখনই হবে না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতাবস্থা আসতে চলেছে।’

ভালো খবর রয়েছে জনসংখ্যার অনুপাতেও। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতকে এখন আর ‘কান্ট্রি অফ মিসিং উইমেন’ বলা যাবে না। ১৯৯০ সালে ‘নিউ ইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস’-এ একটি নিবন্ধে এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি যখন এই মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন ভারতে নারী-পুরুষ অনুপাত ৯২৭:১,০০০। জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষার পঞ্চম দফার রিপোর্ট বলছে, সেই অনুপাত এখন ১,০২০:১,০০০। এর আগে ২০০৫-০৬ সালের রিপোর্টে নারী-পুরুষ অনুপাত ছিল সমান।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে রাশ পড়ার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অল্পবয়সি নারী বা পুরুষের সংখ্যা ভারতে কমের দিকে। ফলে, একদিক থেকে দেখলে ভারত ‘বৃদ্ধ’ও হচ্ছে বই কী! তবে এই ‘বার্ধক্য’ দুশ্চিন্তার নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। নীতি আয়োগের (স্বাস্থ্য) সদস্য ভিকে পলের ব্যাখ্যা, ‘সমীক্ষায় পরিষ্কার, মজবুত উন্নয়নের দিকে দেশের গতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।’ এ-ও বোঝা যাচ্ছে, জনবিস্ফোরণের যে আশঙ্কা কিছু মহল থেকে করা হচ্ছিল, আপাতত তার আশঙ্কাও নেই। সূত্র: টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ