বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমরা সবাই চাই অর্থপূর্ণ জীবন। অর্থহীন জীবন কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু কীভাবে জীবন অর্থপূর্ণ হয় এ বিষয়ে অনেকের সঠিক ধারণা নেই। আল্লাহ তাআলার অপার করুণা, ইসলামের শিক্ষার দ্বারা তিনি আমাদের দান করেছেন অর্থপূর্ণ জীবনের সংজ্ঞা ও সন্ধান। আর একমাত্র তাঁরই তাওফীকে আমরা পরিচালিত হতে পারি সফল-সার্থক জীবনের পথে। জীবন তো আর কিছু নয়, বিশ্বাস ও কর্মের সমষ্টি। জীবন অর্থপূর্ণ হওয়া মানে কর্ম ও বিশ্বাস অর্থপূর্ণ হওয়া। কাজেই অর্থপূর্ণ জীবনের অধিকারী হতে হলে অর্থপূর্ণ কাজ করতে হবে। অর্থপূর্ণ কাজ কি খুব কঠিন?
আমার মাঝে কি নেই ভালো কাজের যোগ্যতা? এই সব প্রশ্নের আবর্তে পাক না খেয়ে চলুন আমরা বিষয়টি সহজভাবে চিন্তা করি। অর্থাৎ মহৎ ও অর্থপূর্ণ কাজ উদ্ভাবন করার বদলে আমরা আগে চিন্তা করি, সচরাচর যে কাজগুলো করে থাকি সেগুলোকেই কীভাবে অর্থপূর্ণ করে তোলা যায়। প্রতিদিন কত কাজই তো আমরা করি, যেসবের ব্যাপারে আলাদা চিন্তার গরজও বোধ করি না। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-বিশ্রাম, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কেনা-কাটা, পড়া-শোনা, দেখা-সাক্ষাৎ, স্ত্রী-সন্তানকে সময় দেওয়া ইত্যাদি আরো কত কী।
এসব আমাদের নিত্যদিনের কর্ম। বলা যায়, কর্মের এই চক্রেই আমাদের জীবন ও সময় আবর্তিত; জীবনের সিংহভাগ নিঃশেষিত। জীবনের এই প্রাত্যহিক কাজগুলোকেই যদি অর্থপূর্ণ করে তোলা যায় তাহলে কত সহজেই না আমাদের জীবন হয়ে উঠতে পারে অর্থপূর্ণ, মহিমাপূর্ণ! কিন্তু কী সে উপায়, যার দ্বারা এই সকল কাজও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে? সেই উপায়টি হচ্ছে, কর্মের প্রেরণা ও উদ্দেশ্য ঠিক করে নেয়া।
সহীহ নিয়ত, তথা সঠিক উদ্দেশ্য ও নির্ভুল প্রেরণার দ্বারা আমাদের প্রাত্যহিক কাজগুলোও পেতে পারে আলাদা মাত্রা; জীবনের ছোট-ছোট কাজগুলোও হয়ে উঠতে পারে মহিমাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। জীবনকে অর্থপূর্ণ করার এ এক বিকল্পহীন ব্যবস্থা, অন্যদিকে তা এক সহজ স্বাভাবিক উপায়ও বটে। কারণ প্রাত্যহিক কাজগুলোকে তো জীবন থেকে ছাঁটাই করা যাবে না, সে চিন্তা সমীচীনও নয়। তাহলে যে পথে এই কাজগুলোও তাৎপর্যপূর্ণ ও কল্যাণপূর্ণ হয় সে পথই অন্বেষণ করা যুক্তিযুক্ত। আর তা হচ্ছে, কর্মের লক্ষ্য ও জীবনের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করা এবং সকল কাজে তা চেতনায় জাগ্রত রাখা। এই উপায় অবলম্বনের দ্বারা অতি সাধারণ একজন মানুষও উঠে যেতে পারেন সফলতার শিখরে, পেয়ে যেতে পারেন ব্যর্থতার গ্লানি থেকে নাজাত ও মুক্তি।
এই মহান শিক্ষাই দান করেছেন আল্লাহর শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর এই বিখ্যাত বাণীতে : কর্মসমূহ তো নিয়তেরই সাথে। আর প্রত্যেকের জন্য আছে তা-ই যার সে নিয়ত করে। (সহীহ বুখারী : ১)। মানুষের জীবন জুড়ে যত কাজ, যত প্রকারের কর্ম, তার পরিচয় ও পর্যায় নির্ণিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়তের রয়েছে গভীর ভূমিকা। দু’জনের বাহ্যত অভিন্ন কর্মও সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে যায় নিয়তের কারণে।
নিয়তের এই প্রভাব পরিব্যাপ্ত আমাদের জীবনের সকল কর্মে। আহার-নিদ্রার মতো একান্ত ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে বিয়ে-শাদী, জীবিকা উপার্জন, পরিবারের ভরণ-পোষণ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন, দাওয়াত-জিহাদ, ইবাদত-বন্দেগি পর্যন্ত সবকিছুই নিয়তের বিধান ও প্রভাবের অধীন। বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে জীবনের সকল কাজ পরিণত হয় নেক আমল ও ছাওয়াবের কাজে। পক্ষান্তরে অন্যায় অশুদ্ধ নিয়তের কারণে ইবাদত-বন্দেগি ও বাহ্যত দ্বীনী কাজগুলোও হয়ে যায় অর্থহীন, মূল্যহীন; বরং শাস্তি ও আল্লাহর অসন্তষ্টির কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।