Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিলমারীতে এক মাদ্রাসায় ৭৫ছাত্রীর বাল্যবিয়ে

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৫৫ পিএম

করোনা মহামারিতে দীর্ঘ ছুটি কালিন সময়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় একটি মাদ্রাসার অন্তত ৭৫জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কোন ভাবেই প্রতিহত করা যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে নামক রেলগাড়ীটি।বাল্যবিয়ের জন্য পারিবারিক শিক্ষা,কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার অভাব,যৌতুক প্রথা,দরিদ্রতা ও কুসংস্কার সর্বোপরি কন্যা শিশুদের বোঝা হিসাবে অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে,বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারনে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কন্যা শিশু শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসা নামে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭৫জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। দীর্ঘদিন মাদ্রাসা বন্ধ থাকার পর শ্রেণী পাঠদান চালু হওয়ার প্রায় দুই মাস পার হলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম হওয়ায় এমন তথ্য পেয়েছেন মাদ্রাসাটির শিক্ষক মন্ডলী। বিভিন্নভাবে খোজ নিয়ে এসব বাল্যবিয়ের কথা জানা গেছে বলে শিক্ষকরা জানান। এছাড়াও মাদ্রাসাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় পাশ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের অনেক শিক্ষার্থী এখানে আসে। তাদের একটি বড় অংশ বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আ.রাজ্জাক সরকার। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

সচেতন মহলের দাবী কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার অভাব, যৌতুক প্রথা,দরিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার হু-হু করে বেড়েই চলেছে। কোন ক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে বাল্যবিবাহ।

বৃহস্পতিবার পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে জানা যায়,ওই মাদ্রাসার ১ম থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত মোট ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৭১২জন।শ্রেণী পাঠদান শুরুর পর শ্রেণী কক্ষে জিজ্ঞাসা করে এবং বিভিন্নভাবে খোজ নিয়ে জানা গেছে এদের মধ্যে ৭৫জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। শ্রেণী ভিত্তিক বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে-৪র্থ শ্রেণীর ০৩ জন,৫ম শ্রেণীর ০৪ জন,৬ষ্ঠ শ্রেণীর ১৩জন,সপ্তম শ্রেণীর ১৪জন,অষ্টম শ্রেণীর ১৫জন,নবম শ্রেণীর ১৬জন,দশম শ্রেণীর ০৯জন ও চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষার্থী ০১জন মিলে মোট ৭৫জন ছাত্রী। সন্তান সম্ভবা হওয়ায় সুমি আক্তার নামে ওই মাদ্রার এক ছাত্রীর জেএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি বলে জানাগেছে।

এ ব্যাপারে পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপারইনডেনডেন্ট মাওলানা আব্দুল আজিজ আকন্দ জানান,মাদ্রাসা খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর শুরু করেছি। শ্রেণী কক্ষে জিজ্ঞাসা করে এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ীতে খোজ-খবর নিয়ে জানা গেছে ৮টি শ্রেণী মিলে ৭৫ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন মেয়েদের ক্ষেত্রে ৪র্থ শ্রেণী থেকেই বাল্যবিয়ে শুরু হলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে দাখিল পাশের আগে বাল্য বিয়ে দেখা যায় না। বাল্য বিয়ের শিকার ৭৫জন ছাত্রীর মধ্যে একটা বড় অংশ পাশ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে জানান তিনি।

আরডিআরএস বাংলাদেশের বিবিএফজি প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মোছা.ফারজানা ফৌজিয়া তন্নি জানান, বিবিএফজি কর্তৃক ২০১৯ সালের মধ্যবর্তী কালিন মূল্যায়ন অনুযায়ী বাল্যবিয়ের হার ছিল ২৪শতাংশ। ২০১৯সাল থেকে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা ৪৭৪জন বালিকাকে নিয়ে কাজ করা কথাও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাহবুবুর রহমান জানান,পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার ৭৫জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি জেনেছি। মাদ্রাসার সুপারের সাথে কথা বলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাল্যবিয়ে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ