বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স-এর চরম উন্নতীর যুগে বিশ্ব মানব সভ্যতার ধ্বজাধারী মানুষ আজ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানবতা, নৈতিকতা ও সত্য সুন্দরের পরিচর্যায় এবং লালনে এতটা নিচে নেমে গেছে যে, মানুষ আর পশুতে কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে।
আকার, আকৃতি ও লেবাসধারী মানবরূপী-চলমান জীবটিকে মানুষ বলে পরিচয় দিতেও জ্ঞানী, গুণী, চিন্তাশীল ব্যক্তিরা লজ্জাবোধ করেন। কেন করেন, কি জন্য করেন, তার পেছনে রয়েছে- দীর্ঘ এক জঞ্জাল পূর্ণ ইতিহাস। কেননা, সারাটা বিশ্ব আজ বড় কঠিন সময় অতিক্রম করছে, অন্যায়, অবিচার, জুলুম, শোষণ ও চরিত্রহীনতা বিশ্বের প্রতিটি জনপদ ও অঞ্চলকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। হত্যা, লুণ্ঠন, জোর যার মুল্লুক তার এক জমজমাট আসরে পরিণত হয়েছে চলমান এই সাধের দুনিয়া। পাপাচার, যৌনাচার, ও নেশার দ্রব্যাদির লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে অবারিতভাবে। উন্নত, সুসভ্য ও শক্তিধর বলে পরিচিত কোনো কোনো দেশে জারজ বা অবৈধ সন্তানের সংখ্যা পালাক্রমে বেড়েই চলেছে বলে শোনা যায়। এই জারজদের রাজানুকুল্যে প্রতিপালন করে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। একই সাথে দিন দিন বাড়ানো হচ্ছে পৃথিবী বিধ্বংসী সমরাস্ত্রের ভাণ্ডার। এত সব আয়োজন, অনাচার, অবিচার ও কলুষতার প্রতি লক্ষ্য করেই হয়ত জনৈক চারণ কবি দরদ ভরা কণ্ঠে গেয়েছেন :
‘এই যে দুনিয়া, কিসের লাগিয়া,
এত যত্নে গড়ায়েছেন সাঁই, এই যে দুনিয়া।’
বস্তুত : পরম কৌশলী, মহা বিজ্ঞানী ও সর্ব শক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই দুনিয়াকে পয়দা করেছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে। একে ধন-ধান্যে পুষ্প-পল্লবে, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে এতখানি চিত্তাকর্ষক ও মনোলোভা করে সাজিয়েছেন যে, গোটা পৃথিবীর যে দিকেই তাকানো যায়, সেখানেই রূপ-ঐশ্বর্য, মায়া-মমতা, প্রেম ও ভালোবাসার এক অপূর্ব সমাবেশ ও সমারোহ পরিলক্ষিত হয়।
আশরাফুল মাখলুকাত নামে খ্যাত মানব জাতিকে তিনি এই নন্দন কাননের খলিফা নির্বাচন করেছেন, যাতে করে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে পাপ ও কলুষমুক্ত পৃথিবী গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার ও ক্লেদাক্ত পরবেশ নির্মূল করে একে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র আবাস ভূমিতে পরিণত করে। কিন্তু না, বর্তমান দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ নিজেদের আকল-জ্ঞান বিদ্যা-বুদ্ধি, অবিষ্কার উদ্ভাবন ও অর্থ-বিত্তের দ্বারা মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছার বিপরীত মেরুতে অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা আল্লাহ পাকের দেয়া আইনগ্রন্থ আল কুরআনকে কোন তোয়াক্কা করছে না।
বরং নিজেদের ইচ্ছামত আইন সংবিধান রচনা করে সে মোতাবেক জীবন ও দেশ পরিচালনা করছে এবং ভাবছে এই ধারা চিরকাল বলবৎ থাকবে। আসলে এটা তাদের কুহেলিকা ও মরিচিকা সদৃশ ব্যাকুল প্রত্যাশা মাত্র। এমনটি আল্লাহপাক হতে দেবেন না বলে আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি তাদের পূর্বে কত মানব গোষ্ঠিকে ধ্বংস করেছি, যারা তাদের অপেক্ষা সম্পদ-শক্তি ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল। (সূরা মারয়াম : ৭৪)। এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি এমন অনেক জাতিকে অতীতে ধ্বংস করেছেন যারা আকৃতিতে ছিল উত্তম এবং অর্থ-বিত্তে ছিল অধিক সমৃদ্ধশালী। আর গঠনে ছিল সুন্দর ও মনোহর। তবে তারা যে সকল সম্পদ ও সমৃদ্ধির দ্বারা পুলকিত ও চমৎকৃত ছিল, তা’ তাদের কোনই উপকারে আসেনি। আল্লাহ পাকের শাস্তির নিগঢ় হতে তারা রেহাই পায়নি।
আলকুরআনে আরও ঘোষণা করা হয়েছে : ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি ও দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা কামাই করে ছিল তা তাদের কোন কাজে আসেনি।’ (সূরা মুমিন গাফির : ৮২)।
এই আয়াতে কারিমায় ও অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বিরোধী শক্তি টিকে থাকতে পারেনি। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিচ্ছবির বহু বিবরণ বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাই আজ আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে, চিন্তা করতে হবে। অন্যথায় বিস্মরণের খেয়াঘাটে হারিয়ে যাওয়া মোটেই বিচিত্র নয়। এর প্রতি ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : ‘এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম নির্দশন, সম্ভবত : মানুষ এটা হতে উপদেশ গ্রহণ করবে।’ (সূরা আ’রাফ : ২৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।