বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
শিকল বাঁধা লোকটি বললেন, ঠিক আছে, বলছি। ‘হে আমিরুল মোমেনীন, আপনি এমনটি মনে করুন, আল্লাহ জাল্লাশানুহু ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশকারী সকল বস্তুর আদিতেই বিচারের ফয়সালা করে রেখেছেন। এরপর তাঁর প্রিয় মাহবুব নবী (সা.)-কে অবহিত করেছেন। এরপর তাঁর কাছ থেকে কোনো গুনাহ (পাপ) বা বিরুদ্ধাচরণ প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়। যখন এটাই সাব্যস্ত হলো যে, সকল বিষয় এবং ব্যাপারগুলো খোদাই হুকুমের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে, তখন সেটাই ঘটবে, যা আদিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। খোদা প্রবল শক্তিশালী, তাঁর নির্দেশের পরিবর্তন সাধনকারী কেউ নেই এবং তাঁর প্রবর্তিত বিষয়াবলীতে কেউ সমালোচনাকারীও নেই।
তাঁর বক্তব্যগুলো মামুনুর রশীদের খুবই মনপূত হলো। তিনি বললেন, আপনি আমার কাছ থেকে কি পুরস্কার চান? লোকটি বললেন, এক হাজার আশরাফি (মুদ্রা)। মামুনুর রশীদ বললেন, এত টাকা কি করবেন? জবাবে লোকটি বললেন, আমার প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করব। সুতরাং তাকে পুরস্কার প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয় এবং তিনি তা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন।
তকদীর সম্পর্কে কোরআনে বিশদ বিবরণ রয়েছে। বিভিন্ন হাদীসেও এতদসংক্রান্ত বহু বিবরণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ তার কিঞ্চিত বর্ণনা এখানে প্রদান করা হলো। তকদীরের (অদৃশ্য লিপি) ওপর ঈমান আনা ও বিশ^াস স্থাপন করার অর্থ হচ্ছে আমল করার তওফিক হওয়া, শক্তি লাভ করা।
এ সম্পর্কে হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের জান্নাত ও জাহান্নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল তাহলে আমরা কেন আমাদের সম্পর্কে লিখিত বিষয়ের ওপর ভরসা করব না এবং আমল করা ছেড়ে দেব। তিনি বললেন, না আমল করতে হবে। কেননা প্রত্যেককে সেই বস্তু দান করা হয়, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যে সৌভাগ্যবান তার জান্নাত লাভ করার তওফিক হয়। আর বদনসিব দুর্ভাগ্য ব্যক্তির জাহান্নাম তওফিক হয়। অতঃপর হুজুর (সা.) সূরা ওয়াললাইল-এর ক’টি আয়াত পাঠ করেন। যা বর্ণিত হাদীস উল্লেখিত হয়েছে।
‘সুতরাং ‘কেউ দান করলে, মোত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ।’
আল্লাহর নিকট স্থিরকৃত যে, মানুষ তার কোন কোন কাজ দ্বারা জাহান্নামের অধিকারী হবে এবং কোন কোন কাজ দ্বারা জান্নাত লাভ করবে এবং হুজুরও (সা.) বিশদভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। অতঃপর মানুষের কাজ হচ্ছে, সে জাহান্নামের পথে চলা পছন্দ করবে অথবা জান্নাতের পথে। উভয়ের মধ্যে একটির অনুসরণ করা তারই দায়িত্ব এবং তা এজন্য যে, আল্লাহপাক তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দান করেছেন এবং পথ নির্বাচনে স্বাধীন করে রেখেছেন। এই স্বাধীনতা তাকে শাস্তি দান করবে এবং এরই বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে।
অপর এক হাদীসে আবি খেজামা তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন , আমি হুজুর (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এ দোয়া-তাবীজ, যা আমরা নিজেদের অসুস্থ লোকদের ক্ষেত্রে করে থাকি এবং এসব ওষুধপত্র, যা আমরা নিজেদের রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকি এবং এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, যেগুলো আমরা দুঃখ-কষ্ট লাঘব ও বিপদাপদ হতে বাঁচার জন্য অবলম্বন করে থাকি, এগুলো কি আল্লাহর তকদীরকে রোধ করতে পারে? তিনি বললেন, এসব বস্তুও আল্লাহর তকদীরের অংশ। (তিরমিজি)
হুজুর (সা.) এর জবাবের খোলাসা এই যে, সর্বশক্তিমান যে খোদা এসব রোগ আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন, সেই খোদা এটাও স্থির করেছেন যে, এগুলো অমুক ওষুধ দ্বারা এবং অমুক উপায়-তদবীরে দূর করা সম্ভব। খোদা রোগেরও খালেক (স্রষ্টা) এবং রোগ নিরাময়কারী ওষুধেরও। সবকিছু তার স্থিরকৃত রীতিনীতি ও কায়দা কানুনের অধীনে। সুতরাং এগুলোও তকদীর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।