বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
অতঃপর লোকটি বললেন, তুমি কি আবুল হোজায়ল আল্লাফ? জবাবে বললেন, আমিই আবুল হোজায়ল আল্লাফ। লোকটি প্রশ্ন করলেন, নিদ্রায় (ঘুমে) কি তৃপ্তি মেলে? আমি বললাম, তৃপ্তি মেলে। তিনি প্রশ্ন করলেন, কখন এ তৃপ্তি মেলে? আমি মনে মনে ভাবলাম যদি বলি নিদ্রার সাথে এ তৃপ্তি অনুভব করা যায়, তা হবে ভুল। কেননা নিদ্রায়িত জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যায় আর যদি বলি এ তৃপ্তি শুয়ে থাকার পূর্বে মেলে, তাও হবে ভুল। কেননা, এই তৃপ্তির কোনো অস্তিত্ব নেই, অস্তিত্বহীন। আর যদি বলি এ তৃপ্তি নিদ্রার পরে পাওয়া যায়, তাও হবে ভুল। কারণ, তৃপ্তি উপলব্ধি করা যায় না। সুতরাং আমি চুপ থাকলাম ।
আবুল হোজায়ল বলেন, আমি আবার তাকে অনুরোধ করি যে, এর জওয়াব দিতে আমি অক্ষম। আপনিই বলে দেন, আমারও জানা হবে এবং আমি যেখানে যাবো সেখানে আপনার বরাতে একথা বলব। তখন লোকটি বললেন, আমি এ শর্তে জবাব বলতে পারি যে, তুমি এবাদতগাহের মালিকের স্ত্রীকে বল, সে যেন আমাকে না পেটায়। সুতরাং আবুল হোজায়ল মালিকের স্ত্রীকে বলার পর সে তা মঞ্জুর করে। অতঃপর দেয়ালের সাথে বাঁধা লোকটি বলেন, ভাই শোনো তন্দ্রা তো একটি অসুখ, যা মানুষের শরীরে বিস্তার লাভ করে। এর ওষুধ হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়া।
অতঃপর তিনি (শিকল বাঁধা লোকটি) মোতাজেলা সম্প্রদায়ের নেতার আকিদা-বিশ^াস সর্ম্পকে প্রশ্ন করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্বন্ধে তোমাদের বিশ^াস (আস্থা) এই যে, তিনি আল-আমীন ছিলেন, আসমান ও জমিনের নিচে তিনি শায়িত। আবুল হোজায়ল স্বীকার করলেন, হ্যাঁ এটিই আমাদের আকীদা-বিশ^াস। আবার লোকটি বললেন, তাঁর (রাসূলুল্লাহ (সা.) ) উম্মত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিচ্ছিন্ন মনোভাব বিদ্যমান নাকি ঐক্য ও সংহতি?
আবুল হোজায়ল বললেন, ইখতিলাফ বা মতবিরোধ নয়, আমাদের নিকট একতা ও ঐক্য পছন্দ। তিনি বললেন, কোরআনে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে বলেন : আমি আপনাকে সমগ্র বিশে^র রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি। এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে (মরদুল মউত) মৃত্যু রোগের সময় রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন : আমার পরে এঁরা খলিফা হবেন। তিনি অছিয়তও করেছিলেন এবং এ ব্যাপারে উম্মতকে উৎসাহিতও করেছিলেন। আবুল হোজায়লের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দিতে অসমর্থ হন এবং তাকেই অনুরোধ করেন জবাব দিতে। আবুল হোজায়ল আরো জানান যে, তিনি জানতে পারলেন যে এ লোকটি কে ছিলেন?
মোতাজেলী নেতার মুখে পরবর্তী ঘটনার চমৎকার বিবরণ তকদীরে অবিশ^াসী বা সংশয়বাদীদের অজ্ঞতা নিরসনে এবং মূর্খদের জ্ঞানদানে বিশেষ সহায়ক হতে পারে। কেননা, এ শ্রেণির মনোভাবসম্পন্ন লোকের অতীতে যেমন ছিল তেমনি বর্তমানেও আছে।
(সাওয়ার) টাট্টুর গতি পরিবর্তন করে আমি খলিফা মামুনুর রশীদের দরবারে উপস্থিত হই। তাঁকে শিকল বাঁধা ব্যক্তির বিস্তারিত বিবরণ বর্ণনা করি। খলিফা সেই শিকল বাঁধা লোকটিকে উপস্থিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। সুতরাং লোকটিকে হাজির করা হয় এবং তাকে উদ্দেশ্য করে মামুনুর রশীদ বলেন, এখন আপনি আমাকে সেসব প্রশ্ন করুন, যেগুলো আপনি আবুল হোজায়লকে করেছিলেন। লোকটি সকল প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করেন।
মামুনুর রশীদের দরবারে যেসব খ্যাতিমান আলেম উপস্থিত ছিলেন, তারা কেউ ঐসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না। মামুনুর রশীদ বললেন, ভাই আপনার এসব প্রশ্ন শুনে সবাই হতবাক, আপনি নিজেই জবাব দিন। লোকটি বললেন, সুবহানাল্লাহ। আমিই প্রশ্ন করব এবং আমিই জবাব দেব! মামুনুর রশীদ বললেন, এতে কি মুশকিল আছে, অন্তত: পক্ষে আপনার দ্বারা আমরা উপকৃত হব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।