Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে অধিকৃত কাশ্মীর অচলাবস্থা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

হাজার হাজার কাশ্মীরি প্রচণ্ড শীতের দাপট উপেক্ষা করে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানকালে নিহত দুই সাধারণ মুসলিমের দাফনানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে গত শুক্রবার ভারত-অধিকৃত উপত্যকায় ব্যাপক বন্ধের ঘোষণা দেয়। গত সোমবার সন্দেহভাজন যোদ্ধাদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গিয়েছিল বলে পুলিশের দাবিকৃত দুই ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি দূরবর্তী কবরস্থানে দাফন করে।
এসব মৃত্যু অশান্ত অঞ্চলে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তাদের পরিবার জোর দিয়ে বলেছে যে, যোদ্ধাদের সাথে মৃতদের কোনো যোগসূত্র নেই। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ হত্যা করেছে এবং তাদের লাশ ইসলামিক পদ্ধতিতে যথাযথভাবে দাফনের জন্য ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানায়।
বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা মোহাম্মদ আলতাফ ভাট এবং মুদাসসির আহমেদ গুলের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের লাশ উত্তোলন এবং আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তরের আগে শ্রীনগরে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং মধ্যরাতের পরে আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন ফটোগ্রাফার বলেছেন, ভোরের আগে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ শোকে চিৎকার করে বলছিল, ‘আমরা স্বাধীনতা চাই’ এবং অন্যরা কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করেছেন। ভাটের ভাইঝি সায়মা ভাট টুইটারে পোস্ট করেছেন, ‘আপনার মৃত্যু আমাদের সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে’। তিনি যোগ করেছেন যে, তিনি জানেন না ‘তারা এ ট্র্যাজেডি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন কিনা’!
পরিবারের সদস্যরা এএফপিকে বলেছেন, অফিসাররা তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তারা যেন রাতেই লাশ কবর দিয়ে দেই এবং ভিড় না জমাই। ভাটের একজন আত্মীয় পরিচয় প্রকাশে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের পরিবার এবং তার সন্তানদের শেষ দেখা দেখার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল’।
ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলোর একটি সর্বদলীয় হুরিয়াত কনফারেন্সের আহ্বানে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার অঞ্চলটির বড় অংশের বাসিন্দারা সম্পূর্ণ বন্ধ পালন করেছে। বন্ধ চলাকালে শ্রীনগর জুড়ে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এবং গণপরিবহন চলাচল করেনি, রাস্তায় ছিল শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি। একই ধরনের শাটডাউন সামরিক বাহিনীর পদভাবে পিষ্ট কাশ্মীরের অন্যান্য অঞ্চল জুড়ে বেশিরভাগ প্রধান শহরে হয়েছিল। পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী দাঙ্গা মোকাবিলায় মৃত ব্যক্তিদের অঞ্চলের আশেপাশে এবং কিছু ‘অস্থির পয়েন্টে’ মোতায়েন ছিল।
২০১৯ সাল থেকে এ ধরনের শাটডাউন মূলত অসম্ভব ছিল, যখন থেকে নয়া দিল্লি এ অঞ্চলের আংশিক স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে এবং এটিকে সরাসরি কেন্দ্রের শাসনের অধীনে নিয়ে আসে। তবে উত্তেজনা চরমে থাকায় কর্তৃপক্ষ এ উপলক্ষে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাশ্মীরের পুলিশ পূর্বে নিহত সন্দেহভাজন যোদ্ধা বা তাদের ‘সহযোগীদের’ দাফনে পরিবারের অংশগ্রহণ অস্বীকার করে এসেছে। তারা বলেছে যে, এটি ভারত-বিরোধী যোদ্ধাদের ‘গৌরব’ বন্ধে সাহায্য করে, যাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সাধারণত হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হনন। কাশ্মীরের ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ তিন দশক আগে শুরু হয়েছিল এবং এ সঙ্ঘাতে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। সূত্র : ডন অনলাইন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ