বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিষয়টি জটিল। এটি আলোচনা করতে গেলে একজন মোমেন মুসলমানেরও ঈমান হারানোর আশঙ্কা থাকে। খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন: ‘ইযা অছালাল কালামু ইলাল কাদরি ফামসিকু’। অর্থাৎ তোমরা যখন আলাপ আলোচনায় লিপ্ত হও, তকদীরের বিষয় এসে গেলে তা থেকে বিরত হয়ে যাও। হুজুর (সা.)-এর এ বক্তব্যের তাৎপর্য এই যে, এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক বাহাসের শেষ নেই, বড় বড় জ্ঞানী লোকদেরও এতে পদস্খলন ঘটতে পারে।
কথিত আছে যে, একজন জগদ্বিখ্যাত আলেম তার ওফাতের সময় আল্লাহর ‘ওয়াহদাত’ (একত্ব) সর্ম্পকে ইবলিশের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইবলিশ তার প্রদর্শিত সকল যুক্তি খণ্ডন করতে থাকে। সে যুগের একজন বিখ্যাত সাধক ওই আলেম ও ইবলিশের মধ্যে চলমান বাহাস ‘কাশফের’ মাধ্যমে অবলোকন করছিলেন এবং তিনি তখন কোনো নামাজের জন্য লোটা বা পাত্রের দ্বারা ওযু করছিলেন। তিনি ইবলিশের সাথে তর্কে লিপ্ত আলেমের প্রতি ওযুর পাত্রটি নিক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘হে ইমাম! বলে দিন বিনা দলিলে আল্লাহ এক।’ পাত্রটি তার সামনে এসে পড়ে এবং তিনি উক্ত বাক্যটি শুনতে পান। তিনিও তাই ব্যক্ত করেন এবং ইন্তেকাল করেন। এইভাবে তিনি বড় বিপদ হতে রক্ষা পান।
কথিত আছে যে, ওই সময় সাধকের নিকট যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা অস্বাভাবিক এ আচরণ প্রত্যক্ষ করে সাধককে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে তিনি যা বলেন, তার মর্ম এই যে, উক্ত আলেম সাধকের আচরণকে পছন্দ করতেন না। তিনি মনে করলেন যে, মৃত্যুর সময় আলেম ইবলিশের নিকট পরাজিত হয়ে ঈমান হারানোর বসেছেন। তাই তিনি শয়তানের খপ্পর থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য এ উপায় অবলম্বন করেন।
এখানে আমাদের আলোচনার বিষয় তকদীর নয়, তবে তকদীরের ব্যাখ্যা এবং সে সর্ম্পকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে অবহিত করার ব্যাপারে শিকলপরা এক অপরিচিত ব্যক্তির দুলর্ভ ঘটনাটি বর্ণনা করা যা, মোতাজেলা সম্প্রদায়ের এক শায়খ সর্ম্পকিত। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকানের বরাতে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে, যা এইরূপ:
বসরার মোতাজেলা সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট শায়খ আবুল হোজায়ল মোহাম্মাদ ইবনে আল হোজায়ল আল আল্লাফ (মৃত্যু ২২৭ হিঃ), একবার বাগদাদের দিকে যাত্রা করেন। পথে শিকলে বাঁধা এক ব্যক্তিকে দেখতে পান, যাকে এক মহিলা বন্দি করে রেখেছে, যার নাম তিনি জানেন না। এ লোকটি একজন পরিচিত লোকের ন্যায় আবুল হোজায়লকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো কোনো প্রশ্নের জবাব দেন এবং কোনো কোনো বিষয়ে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি সকল প্রশ্নের জবাব খোদ প্রশ্নকর্তাকেই দিতে অনুরোধ করেন। লোকটি বলেন, আগে মহিলাকে বল আমার শিকল খুলে দিতে, মহিলাকে বলা হলে সে শিকল খুলে দেয় ।
আবুল হোজায়ল লোকটির বক্তব্য উদ্ধত করে বলেন যে, তকদীর সৃষ্টির পর তকদীর সংক্রান্ত সকল বিষয় সর্ম্পকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাবীব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াকেফহাল করেন, যার ফলে তাঁর কোনো পাপ কর্ম ছিল না ।
আবু হোজায়ল আল্লাফ বসরি সরাসরি ঘটনাটির নায়ক হিসেবে লোকটির এক অদ্ভুত বিষয়ের অবতারনা করেন, যেমন তার নাম পরিচয়, ওই ব্যক্তির নিজ পক্ষ হতে বলে দেয়া, নিদ্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করা এবং নিজেই জবাব দেয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্ম্পকে তাঁর (মোতাজেলাদের) আকিদা বিশ^াস বলে দেয়া এবং হুজুর (সা.) কর্তৃক তাঁর ওফাতের পরে পরবর্তী তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি সম্পর্কে উপদেশ এবং তকদীরের ব্যাখ্যা করা। মোতাজেলা শায়খ আল্লাফ বসরীর ঘটনার বিবরণ:
তিনি একবার বসরা হতে টাট্টুতে (সাওয়ার) হয়ে খলিফা মামুনুর রশীদের দরবারে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের এবাদত খানা পড়ে। তিনি দেখতে পান, এক ব্যক্তিকে এবাদতখানার দেয়ালের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি তাকে দেখে সালাম জানান। লোকটি সালামের জবাব দিয়ে গভীরভাবে তার (আবুল হোজায়ল) দিকে তাকাতে থাকেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি মোতাজেলী? তিনি জবাবে বললেন, জ¦ী হ্যাঁ। আমি মোতাজেলী। তুমি কি আমার সামনে? বললেন, জ¦ী, আমি আপনার সামনে (এতে মনে হয় লোকটি অন্ধ ছিলেন)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।