Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কেনিয়ায় নজিরবিহীন খরা, রাস্তায় পড়ে আছে সারি সারি প্রাণীর মরদেহ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৫২ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। খরার কারণে দেশটিতে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেটাকে নজিরবিহীন বলছেন অনেকে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, উত্তর কেনিয়ার ওয়াজির কাউন্টি এলাকার একটি গ্রাম বিয়ামাডো। যে গ্রামের রাস্তার দু’ধারে যেন প্রাণীর মৃত্যুর মিছিল চলছে। ধুলোময় রাস্তার দু’পাশে পড়ে আছে প্রাণীর সারি সারি মরদেহ।
প্রচণ্ড রোদের মাঝে পচনশীল প্রাণীদের বিভৎস এই দৃশ্য তৈরি হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে। ফলে ওই এলাকার লোকজন যারা অনেকাংশে গবাদিপশুর ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।
বিয়ামাডোর বাসিন্দা ইব্রাহিম অ্যাডো বলেন, ‘আমার ৭২ বছরের জীবনে কখনই এ ধরনের দৃশ্য দেখি নাই।’
দুর্ভিক্ষের বিষয়ে আগাম সতর্ককারী সংস্থা ফেমিন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস নেটওয়ার্কের মতে, গত সেপ্টেম্বর থেকে কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা গত কয়েক দশকের মধ্যে স্বল্প বৃষ্টিপাতের সর্বনিম্ন হার।
বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চারণভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও পানীয় সংকট। খরার কারণে অ্যাডো তার গবাদিপশুর অর্ধেক ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন। আর অবশিষ্ট যা আছে, সেগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। দুধ দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই এবং রোগাপটকা হওয়ায় বিক্রি করাও দূরূহ। গবাদিপশু এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে হাড়গুলো যেন চামড়ার নিচে উঁকি মারছে
গত চার মাসে দেশটিতে গরুর দাম ব্যাপক পড়ে গেছে। অ্যাডো বলেন, আগে যে গরু ৪০ হাজার কেনিয়ান শিলিংয়ে বিক্রি হতো, এখন তার দাম ৫ হাজারে নেমে এসেছে।
সবসময় এ রকম হয় না। অ্যাডোর মতো কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা খরার প্রভাবের মুখোমুখি হতে অভ্যস্ত। এ সময় তাদের একমাত্র খাবার হয়ে ওঠে ভুট্টা। পানি খুঁজে পাওয়ার পথ হয় দীর্ঘ। গবাদিপশু এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে হাড়গুলো চামড়ার নিচে উঁকি মারে। তারাও বৃষ্টিপাতের শেষ প্রত্যাবর্তনের আশায় অপেক্ষা করেন; যাতে সবুজ চারণভূমি, স্বাস্থ্যকর প্রাণী এবং আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।
চলতি বছরের শেষের দিকে যদি বৃষ্টির দেখা না মেলে তাহলে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে এটি হবে টানা তৃতীয় স্বল্প-বৃষ্টিপাতের মৌসুম। ওই সময়ে বর্তমান খরার শুরু হয়েছিল, আগের খরা শেষ হওয়ার মাত্র তিন বছর পর। যা সাধারণ পাঁচ থেকে সাত বছরের খরা চক্রের চেয়েও অনেক আগাম। আর এই সময়কালে চারণভূমি এবং জলাশয়গুলো পুরোপুরি পুনরুৎপাদনের জন্য তৈরি হয় না।
এদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানির হাহাকার তৈরি হয়েছে কেনিয়ায়। সাধারণত গৃহস্থলীর কাজের জন্য ঐতিহ্যগতভাবেই নারীরা পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু বৃষ্টির দেখা না মেলায় পানির জন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটাপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়াজির কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক সোমো দাহির।
কেনিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, গত অক্টোবরে কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কাউন্টিতে পানির সন্ধানে গড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পথের দূরত্ব পাড়ি দিতে হয়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, আফ্রিকা অঞ্চলে ২০২০ সাল ছিল এ যাবৎকালের রেকর্ড তৃতীয় সর্বাধিক উষ্ণতম বছর। ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলের তাপমাত্রা আড়াই ডিগ্রির বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রত্যেকটি বৃদ্ধির ঘটনায় চরম আবহাওয়ার পরিবর্তন বড় হয়ে ওঠে। সূত্র : আল জাজিরা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ