Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওহে পদ্মফুল, তুমি ছিলে শরৎকালে পুকুর, বিল-ঝিলের জৌলুস

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৪ পিএম

এক সময়ে আমাদের দেশে বর্ষা ও শরতকালে বিলে-ঝিলে শোভাবর্ধন করে ফুটে থাকতো মনোহারি পদ্মফুল। ‘ওহে পদ্মফুল, ভোরের হাওয়ার শীতল স্পর্শে দুলছো দোদুল-দুল। সে সাথে দুলছে গ্রাম বাংলার লাখ কোটি মানুষের মন। তা তুমি ভাই ফুটবে কখন ? সূর্যদেব উঠবে যখন, তার দিপ্তিতে দিপ্ত হয়ে ফুটবে তবে ফুল! সরোবরের জল বয়ে যাচ্ছে।’

আমাদের দেশে বর্ষা ও শরৎকালে বিলে-ঝিলে শোভাবর্ধন করে ফুটে থাকতো মনোহারি পদ্মফুল। কিন্তু প্রকৃতি বৈরিতায় আগের মতো বিল-ঝিলের জৌলুস হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পদ্মফুলসহ আরও অনেক জলজ উদ্ভিদ আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
কিন্তু প্রকৃতি বৈরিতায় আগের মতো বিল-ঝিলের জৌলুস হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পদ্মফুলসহ আরও অনেক জলজ উদ্ভিদ আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
পদ্মফুলের বৈজ্ঞানিক নাম- ঘবষঁসনড় হঁপরভবৎধ। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়ে থাকে। সাধারণত এটি বা ওহফরধহ ষড়ঃঁং হিসেবে পরিচিত। এটি ভারতের জাতীয় ফুল। পদ্ম পরিবারের অর্ন্তভুক্ত বর্গের অর্ন্তগত একপ্রকার হার্ব জাতীয় জলজ উদ্ভিদ।

পদ্মফুল উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। ইরান, চীন, জাপান, নিউ গায়েনা, বাংলাদেশ, ভারত ও অষ্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে পদ্ম জন্মে।
গোল পাতা, ফুল বৃহৎ এবং বহু পাপড়িযুক্ত ফুল পদ্মা। সাধারণত বোঁটার উপর খাড়া, ৮-১৫ সেমি চওড়া। ফুলের রং লাল, গোলাপি ও সাদা, সুগন্ধিযুক্ত। হিন্দুদের দুর্গাপূজার প্রিয় ফুল। ফুল ও ফলের ভেষজগুণ আছে। পদ্মের মূল, কান্ড, ফুলের বৃন্ত ও বীজ খাওয়া যায়। পুরাতন গাছের কন্দ এবং বীজের সাহায্যে এদের বংশবিস্তার হয়।
পদ্মফুল সৌন্দর্য, বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক হওয়ায় নিচু বংশকূলে জন্মগ্রহণ করে বিখ্যাত বা উচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত হলে তখন সেই ব্যক্তিটি ‘গোবরে পদ্মফুল’ নামক বাগধারায় পরিণত হয় এই পদ্মের কারণে।

প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধমীর্য় আচার অনুষ্ঠানে অনেক উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এসব উদ্ভিদকে বলা হয় ঝবপৎবফ চষধহঃ বা ‘পবিত্র গাছ’। যেমন- বড়ই গাছ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নিকট পবিত্র গাছ হিসাবে সুপরিচিত। তুলসী, বট, পাইকর, কলাগাছ ও পদ্ম সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট পবিত্র গাছ হিসাবে পুজা-পাবর্ণাদিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই। লুম্বিনী নামক স্থানে বটগাছের নিচে তপস্যা করে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধি লাভ করেছিলেন বলেই তো বটগাছ আজ বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্রতার প্রতীক। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজায় পদ্মফুলের প্রয়োজন হয়।

তবে শাপলা ও পদ্ম বলা যায় একই সূত্রে গাঁথা কাছাকাছি প্রজাতির দুটি জলজ উদ্ভিদ। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, ডোবা ও জলাশয়ে একসময় শাপলা ও পদ্মের অবাধ বিচরণ ছিল। পদ্ম, শাপলা, শালুক, কলমি, হেলেঞ্চা, ঘেচু প্রভৃতি উদ্ভিদ প্রতিবেশি হিসাবে একে অন্যকে জড়িয়ে জলাশয়ে উপস্থিত থেকে নিজেরা প্রস্ফুটিত হয়ে রূপ-সৌন্দর্য সুধা প্রকৃতির মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দিতো স্বমহিমায়।

‘পদ্ম’ শুধু যে বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক হিসাবে মানুষের মনোহরণই করে তা নয়, পদ্মফুল প্রস্ফুটিত ও পরিপক্ক হয়ে যখন পদ্মখোঁচায় রূপ নেয়, তখন আর এক অন্য রকম স্বাদ বা অনুভূতি।

পদ্মকাঁটাকে অগ্রাহ্য করে যারা পদ্মখোঁচা খেয়েছেন, তাঁরা হয়তো আজও তার রসদ অনুভব করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে কবিতার পঙক্তিমালা কে না উচ্চারণ করে- ‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে ?,
শুধু কাঁটাকে অতিক্রম করার মধ্যে যে ভীতি সঞ্চারবোধ তা কিন্তু নয়, পদ্মফুল ও পদ্মখোঁচাকে পেতে অনেক সময় বিষধর সাপের বিপত্তিও কম বড় ছিল না। বড় বড় পদ্ম পাতার আবরণে লুকিয়ে থাকতো বিষধর সাপ। আর এই প্রতিকূলতাকে জয় করে পদ্মফুল ছিনিয়ে আনার মধ্যে যে তৃপ্তি ও আনন্দ তার মজাই আলাদা।
পদ্মফুল আর পদ্মখোঁচার সাথে ‘শাপলাফুল’ আর ‘ভ্যাট’ আহরণ ছিল অন্য আর এক রস আস্বাদন। শাপলার ভ্যাট থেকে তৈরি হতো খৈ ও মোয়া। পদ্মের ব্যবহার শুধু এই গন্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তা কিন্তু নয়। খাদ্য ও ওষুধি গুণ হিসাবে পদ্ম আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত।
‘সুগন্ধি’ বা ‘অ্যারোমা’ হিসাবে প্রসাধনী শিল্পে পদ্ম ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, পদ্মের এন্টি অবেসোজেনিক ও এন্টি ডায়াবেটিক ঔষুধি গুণ আছে। এছাড়াও রয়েছে ন্যুসিফেরিন, অ্যাপোরফিন ও আরমেপ্যাভিন জাতীয় অ্যালকালয়েড।

হাট-বাজারে লবণ ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাঁধার কাজে এবং মেলায় গুড়, চিনি, বাতাসা, নারু, মোয়া, মুড়ি, মুড়কি পদ্মপাতায় সুন্দরভাবে টোপলায় বেঁধে একসময় বিক্রি করতো দোকানদারেরা। সহজলভ্য ও পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এটির ব্যবহার ছিল অতুলনীয়।
শুধু পদ্মই নয়, শাপলা, শালুক, কলমি, হেলেঞ্চাসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণে প্রকৃতিবিদ, পরিবেশ বিজ্ঞানী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের ভাবতে হবে এখনই।
পরিশেষে বলতে চাই, প্রিয়জনকে উপহার হিসাবে পদ্মফুলের চেয়ে অন্য ভাল কিছু আর কি হতে পারে? আর পদ্মের যদি সৌন্দর্য বা বাহার বৈচিত্র্যই যদি মানুষকে আকৃষ্ট না করতো, তাহলে ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’ প্রবাদটিই বা এলো কোথা থেকে?
পদ্মফুল সংরক্ষণের জন্য বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->