বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গতকাল ছিল ১১ রবিউসসানী। ৫৬১ হিজরীর এই দিনে নশ্বর এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)। পুরো পৃথিবীতে বিশেষ করে এই উপমহাদেশে দিনটি ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম নামে পালিত হয়। তাঁর পূর্ণ নাম মুহিউদ্দিন আবু মোহাম্মদ ইবনে আবু সালেহ মুছা জঙ্গী (রহ.)। তিনি একজন কামেল সুফী ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তার নামে কাদেরিয়া তরীকার নামকরণ করা হয়েছে। ৪৭০ হিজরীতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। পিতৃকুলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা.)-এর সরাসরি বংশধর ছিলেন। তার জননী ছিলেন আবদুল্লাহ আস মাউমেয়ী (রহ.)-এর কন্যা ফাতিমা (রহ.)। তারা উভয়েই সে যুগের শ্রেষ্ঠ দরবেশ ছিলেন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তার নাম নীক বা নায়ক। তা কাম্পিয়াম সাগরের দক্ষিণে গীলান বা জীলান জেলায় অবস্থিত।
আঠার বছর বয়সে তিনি পড়াশুনার জন্য বাগদাদে প্রেরিত হন। তিনি আল্লামা তিবরিযা (রহ.)-এর নিকট ভাষাতত্ত্ব এবং কয়েকজন শায়খ বা উস্তাদের নিকট হাম্বালী মতান্তরে শাফেয়ী ফিকাহ অধ্যয়ন করেন। তার ৪৮৮ হতে ৫২১ হি. পর্যন্ত জীবন কাল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা হলো এ সময়ে তিনি হজ করেন ও বিবাহ করেন। কারণ তার পুত্র-কন্যার মধ্যে একজনের জন্ম হিজরী ৫০৮ সালে।
কোনো কোনো গ্রন্থাকারের মতে, তৎকালীন সময়ে তিনি ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাজারের খাদিমও ছিলেন। তিনি আবু খায়েরের মোহাম্মাদ ইবনে মুসলিম (রহ.)-এর নিকট সুফীবাদ শিক্ষা করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকাতেই আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী মতে দীক্ষিত হয়ে পড়েন। উস্তাদ আবুল খায়ের (রহ.)-এর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করতে তাকে যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করতে হয়। আবুল খায়ের (রহ.)-এর খানকাহ্্র মধ্যে একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তির অনুপ্রবেশ অন্য শিক্ষারত সাধকদের ক্ষোভ প্রকাশের কারণ হয়েছিল বলে জানা যায়।
কিছুকাল পর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী পরিচ্ছদ লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। বাগদাদে হাম্বলী ফিকহের একটি মাদ্রাসা ছিল। সেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাযী আবু সাঈদ মাখযুমী (রহ.) তাকে শিক্ষাদান করেন। ৫২১ হি. সালে সুফী ইউসুফ আল হামযানী (রহ.)-এর পরামর্শে তিনি প্রকাশ্যে প্রচার কার্য আরম্ভ করেন। প্রথমে তার শ্রোতার সংখ্যা ছিল অল্প। ক্রমশ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বাগদাদের হালবা দ্বারের বিখ্যাত কক্ষে আসন গ্রহণ করেন। কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলায় তাকে দরজার বাইরে যেতে হয়। যেখানে তার জন্য একটি বিরাত বা খানকাহ নির্মিত হয়।
৫২৮ হিজরী সনে জনসাধারণের চাদায় পার্শ্ববর্তী অট্টালিকাগুলো মুবারাকুল মাখযুখীর মাদ্রাসার অন্তর্ভুক্ত করে আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-কে তার অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়। তার কার্যপ্রণালীর প্রকৃতি ছিল সম্ভবত জামালুদ্দিন আয জাওমীর অনুরূপ। শুক্রবার প্রাতে ও সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তার মাদ্রাসাতে ওয়াজ করতেন। রবিবার প্রাতে করতেন খানকায়। তার অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে দরবেশ বলে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
তার ধর্মোপদেশ শ্রবণে অনেক ইহুদি ও খ্রিষ্টান ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এতে অনেক মুসলমানও উচ্চতর জীবন লাভে ধন্য হয়। বহু স্থানে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার ফলে বহু স্থান হতে তার নিকট নজর নিয়াজ আসত। এর দ্বারা তিনি প্রার্থীদের চাহিদা পূরণ করতেন এবং সর্বদাই গৃহদ্বার খোলা রাখতেন। দেশের সকল অংশ হতে তার নিকট ইসলামী আইন সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রেরিত হতো। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এগুলোর উত্তর দিতেন। এতে অনুমতি হয় যে, তৎকালীন খলিফাগণ তার অনুরক্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত (১) ফাতহুল গায়ের আল গুনিয়াতুত তালেবীন (২) আল ফাতহুর রাব্বানী, (৩) ফতুহুল গায়ব, (৪) সিবরুল আসরার প্রভৃতি। আল্লাহপাক তাকে কুরব ও মানজেলাতের আ’লা হতে আলা দারাজাত দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।