বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিভিন্ন যুগে ও বিভিন্নকালে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিশ্ব মানবতার হেদায়েতের জন্য বহু নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূল মাসুম তথা নিষ্পাপ ছিলেন। অর্থাৎ কোনো সগীরা বা কবিরা গোনাহ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো নবী ও রাসূলের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। নবী ও রাসূলগণের ইসমাত বা মাসুম হওয়া এমন একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য যা কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই নবী ও রাসূলগণকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। প্রত্যেক নবী ও রাসূলের মাসুমিয়াত বা নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক সুস্পষ্টভাবে আল কোরআনে বিবৃত করেছেন। এতদ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে : (১) তিনি ছিলেন অঙ্গীকারে সত্যাশ্রয়ী, তিনি ছিলেন রাসূল-নবী। (সূরা মারইয়াম : ৫৪)। (২) আমরা-তোমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা অবশ্যই সত্যবাদী। (সূরা আল হিজর : ৬৪)।
(৩) আমি তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী, বিশ্বস্ত। (সূরা আল আ’রাফ : ৬৮)। (৪) অবশ্যই তোমাদের নিকট সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী আগমন করেছেন। (সূরা আল মায়িদাহ : ১৯)। (৫) আমি তো বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদ দানকারী সতর্ককারী বৈ কিছু নই। (সূরা আল আ’রাফ : ১৮৮)।
(৬) নিশ্চিয়ই হে নবী! আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা আল ক্বালাম : ৪)। (৭) অবশ্যই আমি তোমাদেরকে এমন কিতাব দিয়েছি যা নিশ্চিত জ্ঞানের দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছি, তা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও করুণা। (সূরা আল আ’রাফ : ৫২)।
(৮) আমি তোমাদের নিকট তাবলীগের জন্য পারিশ্রমিক কামনা করি না। আমার পারিতোষিক তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই দান করবেন। (সূরা আশ্ শুরা : ১০৯)। (৯) আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে তাদেরই শ্রেণিভুক্ত একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। (সূরা বাকারাহ : ১৫১)।
মোট কথা, সকল নবী ও রাসূল উম্মতের নিকট আল্লাহ তায়ালার সংবাদ বাহক ও দ্বীনের প্রচারক ছিলেন। তাদের কাজ আখবার ও তাবলীগের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল। কেননা, নবী সংবাদ দেন এবং রাসূল হুকুম-আহকাম কাক্সিক্ষত স্তর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। এটি একটি অত্যন্ত সূক্ষè বিষয়। এর মধ্যে সৃষ্টির কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (নিবরাস : পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৩)।
আর একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম ব্যতীত অন্য কোনো মানুষ মাসুম বা নিষ্পাপ নয়। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : (১) তোমাদের সাথী (প্রিয়নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপথগামী, বিভ্রান্ত হননি। (সূরা আন নাজম : আয়াত-২)।
(২) নবীগণ তাবলীগের ব্যাপারে বিশেষত শরয়ী বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় পথ। নির্দেশনা ও বিধান সমূহ উম্মতের নিকট পৌঁছাতে অসত্য হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। উম্মতে মোহাম্মদীর সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত মতে, নবীগণ ওহী প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে কুফুরী হতে বিমুক্ত ও নিষ্পাপ ছিলেন। (নিবরাস : পৃষ্ঠা ২৮৩)। (৩) বস্তুত : নবীগণ শয়তানী প্রতারণা, মিথ্যা, সগীরা বা কবীরা গোনাহ ইত্যাদি হতে স্বেচ্ছায় ও ভুলক্রমে, নাবুওয়াতের কার্যক্রম আরম্ভ করার পূর্বে বা পরে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ তারা নিষ্পাপ ছিলেন। (সূরা মূরামুল কালাম : পৃষ্ঠা-৩২)।
(৪) নবীগণ সকলেই সগীরা কবীরা গোনাহ থেকে পবিত্র ছিলেন। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ৫৬)। (৫) কাজী আয়ায (রহ.) বলেন-দেহ, মন ও মুখের দ্বারা শয়তানী প্রতারণার থেকে আম্বিয়াগণের নিষ্পাপ হওয়ার ব্যাপারে উম্মতে মোহাম্মাদী একমত পোষণ করেন। (তাফসীরে খাজেন : খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭০)। (৬) সকল নবী ও রাসূল নিষ্পাপ। ভুলেও তাদের দ্বারা কোনো গোনাহ হয়নি। আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের ব্যাপারে তাদের দ্বারা কোনো ভুলত্রুটি হওয়ার অবকাশ মোটেই নেই। (আল ইউত্তয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২)।
(৭) হযরত আল্ আগাররুল মুযানী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত উঁচু করে একথা বলতে বলতে আমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করলেন : হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট ইস্তিগফার কর। অতঃপর তাঁর নিকট তাওবা কর। আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট একশতবার ইস্তিগফার ও তাওবা করি। (সুনানু ত্বাহাভী : খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৬৮)।
এই হাদীসের ব্যাখ্যাকার ওলামাগণ বলেন : বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) একথা বলেছেন, উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। যেন তারা তাওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে গোনাহ থেকে মার্জনা লাভের পথ তালাশ করে। কেননা তিনি গোনাহ হতে পরিপূর্ণ মাসুম ছিলেন। অন্যদের জন্য এটা শোভনীয় নয়। কারণ তারা মাসুম নন। তাদের জন্য গোনাহ হতে তাওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন সম্ভব। এ শিক্ষাই উপরোক্ত হাদীসে বিবৃত হয়েছে।
উস্তাদুনা আল্লামা সাইয়্যেদ মুফতী মোহাম্মাদ আমিনুল ইহসান (রাহ.) : শামসুল ওলামা উস্তাদুনা সফী উল্লাহ মুসা পুরী (রাহ.); উস্তাদ আবু ইসহাক ইসফারায়েনী (রাহ.); উস্তাদ আবুল ফাতাহ শাহরাস্তানী (রহ.); উস্তাদ কাজী আয়াজ (রহ.); উস্তাদ তাক্বী উদ্দিন সুবকী (রহ.) প্রমুখ মোহাক্কেকীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাদেরকে আ’লা ইল্লিয়্যিনে স্থানদান করুন! (আল ইউওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।