বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোনো কাজ ইহসানমণ্ডিত হওয়ার জন্য শর্ত : কোনো কাজ ইহসানমণ্ডিত হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তগুলো বিদ্যমান থাকা জরুরি : ক. কাজটি অবশ্যই হারাম, মাকরূহ বা বেদআতী কাজ না হতে হবে। কারণ কোনো হারাম, মাকরূহ বা বেদআতী কাজ দিয়ে ইহসান হাসিল হতে পারে না। বরং সেটি অবশ্যই কোনো নেককাজ বা অন্তত কোনো মুবাহ (বৈধ) বিষয় হতে হবে। খ. কাজটি যেনতেনভাবে করা যাবে না। বরং সেটিকে সঠিক ও ত্রুটিমুক্ত রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। অন্তত ফরয-ওয়াজিব পর্যায়ের বিষয়গুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করতে হবে। কারণ এটা ইহসানের প্রথম ধাপ, যেটা ছাড়া ইহসান হতেই পারে না। সেজন্য প্রথমে ফরয-ওয়াজিব পর্যায়ের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর কাজটিকে সুন্দর থেকে সুন্দরতম করার জন্য শরীয়তে আরো যেসব বিধান ও বিষয় রয়েছে সেগুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে।
গ. কাজটি করতে গিয়ে অন্য কোনো গোনাহ বা অপছন্দনীয় কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না এবং শরীয়তের অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না। এই শর্তগুলো পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, কাজটি ইহসানের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। এগুলোর কোনও একটি অনুপস্থিত থাকলে ইহসান হাসিল হবে না।
মুহসিন হওয়ার জন্য শর্ত : অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি মুহসিন হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন : ক. ঈমানদার হওয়া এবং আকীদা বিশুদ্ধ হওয়া। ঈমান যদি না থাকে এবং আকীদা যদি সহীহ না হয়, যত ভালো কাজই করুক সে কখনো মুহসিন হতে পারবে না।
ইরশাদ হয়েছে : (হে নবী!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব, কর্মে কারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সেইসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাঁপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে অথচ তারা মনে করে, তারা খুবই ভাল কাজ করছে। এরাই সেইসব লোক, যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহ ও তাঁর সামনে উপস্থিতির বিষয়টিকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের যাবতীয় কর্ম নিষ্ফল হয়ে গেছে। আমি কিয়ামতের দিন তাদের কোনো ওজন গণ্য করব না। (সূরা কাহ্ফ : ১০৩-১০৫)। অতএব মুহসিন হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হল, ঈমানদার হওয়া এবং সহীহ আকীদার অধিকারী হওয়া।
খ. শরীয়তের সকল আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলা। গ. আল্লাহর নাফরমান না হওয়া। কারণ একই ব্যক্তি একইসঙ্গে নাফরমান আবার মুহসিন হতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে : যা-কিছু আকাশম-লীতে ও যা-কিছু পৃথিবীতে আছে তা আল্লাহরই। সুতরাং যারা মন্দ কাজ করেছে, তিনি তাদেরকেও তাদের কাজের প্রতিফল দেবেন এবং যারা ইহসান অবলম্বন করেছে অর্থাৎ ভালো কাজ করেছে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন। সেইসব লোককে, যারা বড়-বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, অবশ্য কদাচিৎ পদস্খলন হলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকের ক্ষমা অপরিসীম। (সূরা নাজম : ৩১-৩২)।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, এক-দুটি ভালো কাজ করে কিংবা এক-দুবার গুনাহ থেকে বিরত থেকে মুহসিন হওয়া যায় না। মুহসিন হওয়ার জন্য ভালো ও নেক কাজ করে যেতে হয়। শরীয়তের সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হয় এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে তাঁর মুহসিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। ইরশাদ হয়েছে : আমার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালায়, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে উপনীত করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের সঙ্গে আছেন। (সূরা আনকাবুত : ৬৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।