পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডিজিটাল যুগে অনেক আগেই প্রবেশ করেছে দেশ। প্রশাসনিক অনেক কিছুই এখন অনলাইনে করা হয়। জমি কেনা-বেচা, রেজিস্ট্রেশন ও নামজারির জালিয়াতি ঠেকাতে ম্যানুয়াল থেকে নামজারি ‘ডিজিটালাইজড’ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ভূমি মালিকদের হয়রানিও দ্বিগুণ বেড়েছে। দুর্নীতির মাত্রাগত বৃদ্ধির পাশাপাশি ভুক্তভোগী মাত্রই শিকার হচ্ছেন ‘ডাবল হয়রানি’র। মানুষ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড, ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিলদারের দফতরে অফিসে ঘুরে ক্লান্ত। ব্যয় যেমন বেড়েছে- তেমনি দ্রুত সেবা দানের পরিবর্তে হচ্ছে বিলম্বিত। রাজধানী এবং আশপাশের কয়েকটি এসিল্যান্ড এবং তহশিল অফিস ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
পরিদর্শনে দেখা যায়, জমির মালিকদের অধিকাংশই ‘অন-লাইন সার্ভিস’র সঙ্গে পরিচিত নন। তাদের টাচ মোবাইল কিংবা কম্পিউটার-ল্যাপটপ নেই। অধিকাংশই ইন্টারনেট চালাতে পারেন না। এ অবস্থায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ‘ই-নামজারি’। এ জন্য জমির মালিকদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে এসিল্যান্ড কিংবা ভূমি অফিস সংলগ্ন আইটি সেন্টারে। প্রায় সব এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিস ঘিরে গড়ে উঠেছে আইটি সেন্টার। সেখানে একটি নামজারির ই-ফাইলিংয়ে খরচ যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। নামজারির ই-ফাইলিং শেষে জমির সর্বশেষ দলিল, খাজনা রশিদ, ডিসিআর, ভায়া দলিল ও আনুষঙ্গিক রেকর্ডপত্রের হার্ড কপিও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে জমা দিতে হচ্ছে। ‘ই-নামজারি’র কারণে অতিরিক্ত ১২০০ টাকা খরচ বেড়েছে। অনেক এসিল্যান্ড অফিসে নামজারি আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে সপ্তাহের নির্ধারিত এক বা দুইদিন। সপ্তাহের কোন্ কোন্ বারে আবেদন জমা নেয়া হবে, অধিকাংশ ভূমি মালিকই সেটি জানেন না। ফলে শুধু আবেদন জমা দিতেই ভুক্তভোগীদের একাধিকবার এসিল্যান্ড অফিসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। হয়রানি এড়াতে অনেকে দালালের মাধ্যমে আবেদন জমা দিচ্ছেন।
নামজারি আবেদন দাখিল করার পর এসিল্যান্ড দফতর থেকে একটি রশিদ দেয়া হয়। সিলমোহরযুক্ত রশিদে এসিল্যান্ড অফিসে শুনানির একটি তারিখ লিখে দেয়া হয়। সেইসঙ্গে একটি ‘কমন’ নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, ‘আগামী ৮ দিনের মধ্যে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কপি কিংবা সার্টিফায়েড কপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে প্রদর্শন করিবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবেদিত ভূমিতে সরেজমিন তদন্ত কার্যসম্পাদন করবেন।’ রশিদে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করার নির্দেশনা রয়েছে।
অন্যদিকে ই-ফাইলিংয়ের পর মোবাইলে পরপর কয়েকটি এসএমএস আসে। প্রথম এসএমএস-এ বলা হয়, ‘আপনার নামজারি এর আবেদন (নং--) ওটিপি (--) কোর্ট ফি ২০ টাকা অফিস ই-ক্যাশ এ জমা দিন। কোর্ট ফি পরিশোধ না করলে আবেদন গ্রহণ হবে না।’ দ্বিতীয় এসএমএস-এ বলা হয়, নামজারি আবেদন (নং--) এর কেস (নং--) ধার্য করা হলো।’ তৃতীয় এসএমএস-এ বলা হয়, ‘সেবা : ই-নামজারি আবেদন (নং--) কেস (নং--) অবস্থা : তদন্তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে। রশিদের নির্দেশনা এবং ই-ফাইলিংয়ের এসএমএস অনুযায়ী জমির মালিক সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কিংবা পৌর ভূমি অফিসে ছুটে যান। কিন্তু গিয়ে দেখেন এসিল্যান্ড অফিস বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে নামজারির কোনো আবেদন ভূমি-সহকারী কর্মকর্তার (তহশিলদার) কাছে আসেনি। তহশিলদার পরে যোগাযোগ করার জন্য আবেদনকারীকে জানিয়ে দেন।
এভাবে এসিল্যান্ড অফিস এবং ভূমি অফিসে অফিসিয়ালি অন্তত : ৬ বার ভুক্তভোগী আবেদনকারীকে যেতে হয়। শুনানির জন্য ধার্যকৃত তারিখে আবেদনকারী হাজির হলেও এসিল্যান্ড নিজেই তার দফতরে অনেক সময় হাজির থাকেন না। ‘অন্য কাজে’ ডিসি অফিসে চলে যান। কখনওবা মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। নানা কারণে এসিল্যান্ড কার্যালয়ে না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধার্যকৃত তারিখে আবেদনের ওপর শুনানি হয় না। এভাবে নির্ধারিত তারিখের বাইরেও এসিল্যান্ড অফিসে ভুক্তভোগীকে কতবার হাজির হতে হয়, তার পরিসংখ্যান নেই। একইভাবে ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসেও নির্ধারিত তারিখের বাইরেও যেতে হয় বহুবার।
ঢাকার শহরতলী সাভারের এক তহশিলদার নাম প্রকাশ না করে জানান, জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়ে অধিকাংশ ভূমি মালিকই অজ্ঞ। জমির রেকর্ডপত্র ঠিক থাকলেও আবেদনে নানা ভুলত্রুটি থেকে যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, যত নির্ভুলভাবেই আবেদন জমা দেয়া হোক না কেনÑ এসিল্যান্ড এবং ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাতে ভুল-চুক আবিষ্কার করেন। ত্রুটি দেখিয়ে আবেদনকারীকে ঘুষ প্রদানে বাধ্য করেন। নামজারিতে সরকার নির্ধারিত ফি ১১৫০ টাকা । কিন্তু অতিরিক্ত ২ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। না হলে দিনের পর দিন ঘুরলেও মেলে না কোনো ভূমিসেবা।
নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি এসিল্যান্ড কার্যালয় পরিদর্শন করে দেখা যায়, ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ লাইন। জানা গেল, এটি সাপ্তাহিক শুনানির লাইন। এসিল্যান্ড একেক করে আবেদনকারীদের ডাকছেন। তারা হাজিরা দিচ্ছেন। লাইনের শেষ দিকে থাকা আব্দুস সোবহান জানান, তার কেনা জমি অন্য একজনের নামে নামজারি হয়ে গেছে। তিনি এসেছেন ‘মিস-কেস’র শুনানিতে হাজিরা দিতে। চার মাস ধরে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। আবেদন অনুযায়ী কবে আদেশ পাবেনÑ তিনি জানেন না। এরই মধ্যে ২১ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে তার।
এসিল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট নারায়ণগঞ্জর একটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেল এখানেও বহু মানুষের আনাগোনা। এদের একজন আবু তাহের জানালেন, নামজারি আবেদনের পর এসএমএস-এ নোটিশ পেয়ে তিনি এসেছেন জমির মূল নথি নিয়ে। কিন্তু এসে দেখেন ৮ দিনের অধিক পেরিয়ে গেলেও এসিল্যান্ড অফিস থেকে তদন্তের জন্য আবেদনটি ভূমি-অফিসে ফরোয়ার্ড করা হয়নি। তহশিলদার জানালেন, ই-নামজারির পদ্ধতিটি অত্যন্ত ভালো। সমস্যা হচ্ছে, এই পদ্ধতি শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকদের যে ধরনের সেবা প্রদান করার কথা সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
আবেদন তদন্ত বা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটি সিরিয়াল নম্বর দেয়া হয়। তবে সিরিয়াল ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হয়। গ্রাহক এসিল্যান্ড অফিস থেকে এসএমএস পেয়ে যাচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে। অর্থ ফরোয়ার্ডিংয়ের হার্ড কপি তহশিল অফিসে আসছে অনেক পরে। এ কারণে গ্রাহককে একাধিকবার তহশিল অফিসে আসতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারে বসে অনেক কথাই বলা যাচ্ছে না। লজিস্টিক সাপোর্টের দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। দু’বছর ধরে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। অথচ অধিকাংশ ভূমি অফিসে অফিসের নিজস্ব কোনো কম্পিউটার নেই। অন-লাইনে সেবা দেয়ার জন্য একটি করে মডেম দেয়া হলেও সেটির ক্রেডিট বহু আগেই শেষ। অনেক ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিগত টাকায় ওয়াইফাই সংযোগ নিয়েছেন। সরকার ইন্টারনেট বিল দিচ্ছে না। অফিস নির্দেশনায় বিল সাবমিট করার কথা বলা হলেও কোনো অফিস এ ধরনের নেট বিল সাবমিট করলেও কর্তা ব্যক্তিরা ‘মাইন্ড’ করেন।
সরকার ভূমি অফিসগুলোকে মাসিক পরিচালন ব্যয় ৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। অথচ এক মাসে একটি ভূমি অফিসে ন্যূনতম ব্যয় রয়েছে ২০ হাজার টাকার উপরে। এ টাকা আমরা কোত্থেকে পাব? তিনি বলেন, অফিসের কম্পিউটার নেই। বাসা থেকে ব্যক্তিগত ল্যাপটপ এনে কাজ করতে হচ্ছে। সারা দেশের ভূমি অফিসগুলোর একই চিত্র। এসিল্যান্ড এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে রয়েছে দ্বৈতপ্রশাসনের কর্তৃত্ব। এটি নামজারিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তবে ভূমির নামজারি প্রক্রিয়া যদি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে শুরু করা যেতো, তাহলে গ্রাহক হয়রানি ও দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে আসত। এ ক্ষেত্রে ফরমাল অনুমোদনের জন্য আবেদনটি তহশিল অফিস থেকে এসিল্যান্ড অফিসে যেতে পারে। নামজারি প্রক্রিয়ার ৯০ ভাগ কার্যক্রমই ভূমি অফিসে সম্পাদন হয়। তাহলে দায়-দায়িত্ব ভূমি অফিসের হাতে রাখতে অসুবিধা কোথায়? ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’র মতো ভূমি অফিসে আবেদন গ্রহণ এবং একই দফতর থেকে পর্চা সরবরাহ করা সম্ভব। দুই অফিসের মাত্র দু’জন কর্মকর্তার স্পর্শেই নামজারি সম্পন্ন হতে পারে।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৫শ’টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ১৩৮টি উপজেলা ভূমি অফিস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা খরচে ১৩৯টি উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ হচেছ। এসব প্রকল্পের আওতায় এর মধ্যেই তহশিল অফিসের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভোগান্তিমুক্ত দ্রুত ভূমিসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ভূমি অফিসগুলো ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় এসব অফিসের মাধ্যমে জমির উন্নয়ন কর বা রাজস্ব আদায়, খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ এবং ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
এছাড়া ভূমি আইন ও বিধি প্রণয়ন, ভূমিহীন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ভূমি জোনিং কার্যক্রম, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ ও মেরামত, ভূমি রেকর্ড আধুনিকীকরণ, জনসাধারণকে স্বল্পতম সময়ে ভূমিসংক্রান্ত তথ্যাদি সরবরাহ করে ভূমি অফিস। অথচ নামজারি, খারিজ, মিস-কেস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ দিয়ে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসনের অধীন। ফলে গ্রাহকের হয়রানি এবং দুর্নীতির দায় নিতে রাজি নয় এসিল্যান্ড তথা জনপ্রশাসন। দু’টি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছেই গ্রাহকরা জিম্মি। সম্প্রতি নামজারি-নাম খারিজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘ই-সেবা’র আওতায় এসেছে বটে। কিন্তু অ্যানালগ হয়রানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘অটোমেশন’ হয়রানি। এক নামজারিতে চলছে দুই দুর্নীতি এবং হয়রানি।
তবে বাস্তবতা নাকচ করে দিয়ে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান (পিএএ) বলেন, দু’য়েকটি এসিল্যান্ড বা ভূমি অফিসে এমনটি হতে পারে। তবে সারাদেশের বাস্তবতা এটি নয়।
আরও দক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ভূমিসেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে সেবাদান প্রক্রিয়া অধিকতর সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এজন্য জনবান্ধব ভূমিসেবা প্রদানে ভূমি অফিসগুলোর জবাবদিহিতা আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, ভূমিসেবা সহজ করতে ভূমিসেবা অটোমেশন সিস্টেমের জন্য কার্যকরী তথ্য ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। ২শ’টির বেশি বিভিন্ন ধরনের ভূমিসেবা পর্যালোচনা করে একই রকম ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলাদা তালিকাভুক্ত সেবা বাতিল ও প্রয়োজনীয় নতুন সেবা অন্তর্ভুক্ত করে গুচ্ছ (ক্লাস্টার) ও শ্রেণী (গ্রুপ) ভিত্তিক একটি কার্যকরী ও পূর্ণাঙ্গ ভূমিসেবা তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।