পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নামজারি এবং বিবিধ মামলায় (মিস কেস) হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে নানা উদোগের কথা বলা হলেও এসব উদ্যোগ ভূমি সেবাগ্রহিতাদের মাঝে কার্যকর ও ইতিবাচক ফল বয়ে আসতে পারেনি। বরং সৃষ্টি করছে নিত্য নতুন জটিলতা। এতে বাড়ছে ভূমি বিরোধ। উদ্ভব হচ্ছে নতুন নতুন দেওয়ানি মামলার। ভূমি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয়রানি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এ অবস্থা উত্তরণে ভূমি বিষয়ক একটি একক অধিদফতর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে ভূমি অফিসের হয়রানি লাঘবে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
কেস স্টাডি (এক) : রাজধানীর মাতুয়াইল মৌজায় সাফকবলা দলিলে ৫ কাঠার প্লট কিনেছিলেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আখতার হোসেন। তার নামে আর.এস. মিউটেশন হয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া তিনি খাজনা খারিজের সময় পাননি। চলে যেতে হয় মধ্যপ্রাচ্যের কর্মস্থলে। ৮ বছর পর নামজারি করতে এসে দেখেন প্লটটি অন্যরা নামজারি করে নিয়ে গেছেন। মাথায় যেন বাজ পড়ে আখতার হোসেনের। কি করে সম্ভব হলো! ভূমি অফিস এবং জয়কালি মন্দির এসি (ল্যান্ড) অফিসে ঘুরে জানতে পারেন তার প্লটের একটি বায়া দলিলের দাতা মনরউদ্দিন ওরফে মনরউদ্দিন। মনরউদ্দিন প্লটটি সাফকবলা বিক্রি করে নি:স্বত্ত¡বান হন। ১৫ দিন পর একই সম্পত্তি তিনি তার স্ত্রী হাজেরা বেগমকে হেবা করেন। ওই দলিল বলে আখতার হোসেনের কেনা জোহরার ছেলেরা নাম খারিজ করে নিয়ে যান। নামজারি হয় ৫ বছর আগে। খরিদকৃত দলিল দেখিয়ে পূর্বতন নাম কেটে নিজ নামে খারিজ করতে জয়কালি এসি (ল্যান্ড) অফিসে যান আখতার হোসেন। আবেদন জমা দেন। নম্বর পড়ে। কিন্তু মাসখানেক পর জানতে পারেন এই অফিসে নামজারি হবে না। আগে জেলা প্রশাসক রাজস্ব (আরডিসি)র কাছে পূর্বতন নামজারি আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। কারো নামে নামজারি হয়ে গেলে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান। ঘটনার ভেদ জানতে তিনি জয়কালি মন্দির এসি (ল্যান্ড)র হাসান মারুফের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। পর পর তিন দিন এসেও সাক্ষাত পাননি তার। সিটিজেন চার্টারে দেয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি)র মোবাইল নম্বরে বহুবার ফোন করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। বাধ্য হয়ে আলাপ করেন ওই অফিসের কানুনগো, সার্ভেয়ার, উমেদারদের সঙ্গে। তারা জানিয়ে দেন ‘এটি বড় জটিল কেস’! নামজারিতে কারো আপত্তি থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। কিন্তু এ মামলায় ‘আপত্তি’ জানানো হয়েছে ৪ বছর পর।
কেস স্টাডি (দুই) : ডেমরা সার্কেলের অধীন উত্তর নন্দীপাড়া মৌজার একটি নামজারি হয় (মিস কেস নং-৪৩৮৫/১৬-১৭)। নামজারির মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন জোত আংশিক সংশোধন এবং বাতিলের জন্য মিস কেস (নং-৩৫৬/২০১৯) করেন মো. কামাল হোসেন গং। এ নিয়ে তিনি ডেমরা এসি(ল্যান্ড) অফিস এবং সবুজবাগ ভূমি অফিসে কয়েক মাস ঘোরাঘুরি করেন। এক পর্যায়ে গত ২২ ডিসেম্বর তার আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়, ‘দ্য স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনেন্সি অ্যাক্ট ১৯৫০-এর ১৫০ ধারামতে এবং কমিশনার, ঢাকা বিভাগ, ঢাকা’র ১৬/১১/২০১৫ ইং তারিখে ৩১.১০.১০০.৬০.১০০.০.১৩. ২০১২-৮৯৮(৩০) নং স্মারকে প্রেরিত সেপ্টেম্বর মাসের রাজস্ব সভার সিদ্ধান্ত নং ১০(ঘ) এর আলোকে নামজারি আদেশের তারিখ থেকে মোকদ্দমা রুজুর তারিখের মধ্যে ৩০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর আদালতে আপিল করার নির্দেশনা রয়েছে বিধায় কেসটি না-মঞ্জুর করা হলো।’ এভাবে একটি মিসকেস করে সংকট নিরসন করতে গেলে ডিসি অফিসে আপিল বাধ্যতামূলক করে তাকে ঠেলে দেয়া হয় আরো একটি মামলায়। অথচ এ জন্য কামাল হোসেন গং দায়ী নয়।
কেস স্টাডি (তিন) : নারায়ণগঞ্জ ভ্ইুগড় মৌজায় ৬ শতকের একটি প্লট কেনেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ওবায়দুল হক। নামজারি শেষে খাজনা পরিশোধ করছেন ৩ বছর আগে। জরুরি টাকার প্রয়োজনে প্লটটি বিক্রির মনোস্থির করেন তিনি। আগ্রহী ক্রেতাপক্ষ ওবায়দুল হকের মালিকানা স্বত্ত¡ যাচাই করতে যান কুতুবপুর ভূমি অফিসে। দেখা যায়, ওবায়দুল হকের প্লট জনৈক সোলায়মান হোসেনের নামে নামজারি হয়ে আছে। খাজনাও দেয়া হয়েছে একই নামের ওপর। ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেন ওবায়দুল। দেখা গেলো, একটি নামজারি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার নাম কেটে সোলায়মানের নাম বসিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি ভুয়া দলিলের ভিত্তিতে নামজারি আবেদনটির ওপর শুনানি নিয়েছে ফতুল্লা এসি(ল্যান্ড) কার্যালয়। ওবায়দুল ভুয়া নামজারির অবিকল নকল উত্তোলন করেন। তাতে দেখা যায়, দলিলটির দাতার নাম আর ওবায়দুল হকের দলিলের দাতার নাম অভিন্ন (মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন)। কিন্তু প্লটের চৌহদ্দি, তফসিল পরিচয়ের কোনো মিল নেই। ভুয়া দলিলে উল্লেখিত প্লটটির অবস্থান অন্তত: ২ কিলোমিটার দূরে। তিনি প্লটের কথিত মালিক সোলায়মানকে খুঁজে বের করেন। তার কাছে জানতে পারেন, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা, ভুইগড় কেন্দ্রিক একটি প্রতারকচক্র তাকে এই দলিল করে দিয়েছে। তারাই দলিলের ফটোকপির ভিত্তিতে এই নামজারি করিয়ে দিয়েছে। বিপরীতে সোলায়মানের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৬০ লাখ টাকা। মিসকেস ও নামজারি আবেদনের ক্ষেত্রে মালিকানা অর্জনের দলিল, বায়া দলিল,পূর্বতন মালিকের পক্ষে নামজারি, খাজনা পরিশোধের রসিদ প্রয়োজন হয়। আবেদনের ওপর শুনানি চলে। শুনানিকালে প্লটটির বিদ্যমান অবস্থা এবং রেকর্ডপত্রের বিষয়ে ভূমি অফিস থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। সার্ভেয়ার ও কানুনগো’র সরেজমিন প্রতিবেদন প্রয়োজন পড়ে। সর্বোপুরি আবেদনকারী কিংবা তার প্রতিনিধির সশরীর উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীকে নোটিস করা হয়। তার বক্তব্য শুনতে হয়। অতঃপর দেয়া হয় আদেশ। কিন্তু প্রকৃত মালিক ওবায়দুল হকের প্লট সোলায়মানের নামে নামজারি জমাভাগ খাজনা করাতে এসবের কিছুই লাগেনি! অথচ ওবায়দুল হক যখন সোলায়মানের নাম কেটে নিজের নামে পুনরায় নামজারি করতে যান-তখন তাকে দেখাতে হয় সকল রেকর্ডপত্র। তিন বার সরেজমিন জরিপও হয়। ভুয়া দলিলে করা নামজারি কেটে আসল দলিলে নামজারি পুনঃবহাল করতে তার লেগে যায় ১৮ মাস।
এমন ঘটনা শুধু একটি-দুটি নয়। এ চিত্র দেশের প্রায় প্রতিটি ভূমি এবং এসি (ল্যান্ড) অফিসের। ভূমি প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে জমি মালিকদের ভোগান্তি লাঘবের নানা গল্প শোনা যায়। জানানো হয় ডিজিটালাইজড, অটোমেশন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ওয়ান আমব্রেলা সার্ভিসের, ডিজিটাল জরিপ প্রকল্পসহ নানা উদ্যোগের কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। মানুষের হয়রানি বাড়ছেই। তৈরি হচ্ছে নিত্য-নতুন জটিলতা। অথচ এই জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার জন্য ভূমি অফিস এবং এসি (ল্যান্ড) অফিসের নেই কার্যকর কোনো জবাবদিতিহা।
হয়রানির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ : মূল দলিল, পরচা একজনের নামে। কিন্তু রেকর্ডে নাম ওঠে অন্যের। দেশের বিশৃঙ্খল ভূমি ব্যবস্থাপনার এটি এক কঠিন বাস্তবতা। কাগজপত্রে মালিকানা জটিলতার উৎসস্থল হচ্ছে ভূমি এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিস। এ দুটি সরকারি দফতরের সিল-স্বাক্ষরেই ভূমির মালিকানা সাব্যস্ত হয়। অথচ জমি সংক্রান্ত কোনো অপরাধের জন্যই তফসিল এবং এসি (ল্যান্ড) অফিসের যেন কার্যকর কোনো জবাবদিহিতা নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র তথ্য মতে, ভূমি প্রশাসন দুর্নীতিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তহসিল অফিস এবং এসি (ল্যান্ড) দুর্নীতি প্রবণ দুটি প্রতিষ্ঠান। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, ভূমি খাতে জন হয়রানি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের ভূমি বিরোধ বাড়ছে। আদালতে মামলা জট সৃষ্টি হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ ও প্রভাবশালীদের যোগসাজশের কারণে প্রকৃত ভূমি মালিকরা আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিদ্যমান আইনি সীমাবদ্ধতা, ভূমি প্রশাস ও ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রমে দুর্বল আনুভূমিক জবাবদিহিতা ভূমি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলি ও স্বল্পকালীন পদায়নও মানুষের হয়রানি এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণ। মাঠপর্যায়ের ভূমি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমি ব্যবস্থাপনার বাইরে বিবিধ দায়িত্ব পালন করতে হয়। সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) পেশাগত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। অপর্যাপ্ত মাঠ পরিদর্শন ও পরীবিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিবেদন সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না হওয়ার কারণেও ভূমি খাতের বিশ্ঙ্খৃলার বড় কারণ। বলতে গেলে ভূমি খাতে জনহয়রানি এবং দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছ। তিনি বলেন, ভূমি নিবন্ধনের আগে ও পরের সব কাজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অথচ শুধুমাত্র ভূমি নিবন্ধন পর্বটি আইনমন্ত্রণালয়ের আওতায়। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি-সংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো পরিচালনার জন্য একটি একক অধিদপ্তর গড়ে তোলা, ডিজিটালাইজেশনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সামগ্রিক ভূমি ব্যবস্থাপনা, রেজিস্ট্রেশন ও জরিপ ব্যবস্থায় সমন্বিত ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা গেলে ভূমি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয়রানি লাঘব হতে পারে বলেও মনে করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক।
এদিকে ভূমি এবং এসি(ল্যান্ড) অফিসে মানুষের হয়রানি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমাদের জনবল সংকটসহ অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও যেকোনো মূল্যে ভূমির দুর্নীতি দূর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিয়কায়নের মাধ্যমে দুর্নীতির পথ-ঘাট বন্ধ করা হবে। এই খাতে মানুষের হয়রানি, ভোগান্তি হয়রানি লাঘবে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষকে সহজে উন্নত সেবা দেয়াই ভূমি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।