বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুমিনের জীবনে সবচেয়ে প্রার্থনীয় বিষয় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। মুমিনের সকল লক্ষ্যের মূল লক্ষ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। কারণ দুনিয়া-আখেরাতের সফলতা ও মুক্তি এর ওপরই নির্ভরশীল।
আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ- তিনি কোরআন মাজীদে তাঁর পছন্দনীয় আমল ও গুণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো যারা অর্জন করবে, তিনি তাদের ভালোবাসবেন। সেসব গুণের মধ্যে একটি বিশেষ গুণ হলো ‘ইহসান’। আর এই গুণের অধিকারীকে বলা হয় মুহসিন। ইহসান আল্লাহ তাআলার অতি পছন্দনীয় একটি গুণ। তিনি বলেন : তোমরা ইহসান অবলম্বন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসান অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা : ১৯৫)।
আরো বলেন : আল্লাহ তাদেরই সাথী, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা ইহসানের অধিকারী হয়। (সূরা নাহল : ১২৮)। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদে মুহসিনদের আরো অনেক ফজিলত ও পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো, এই কোরআন মুহসিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত, সেইসঙ্গে সুসংবাদও। ইরশাদ হয়েছে : এগুলো হেকমতপূর্ণ কিতাবের আয়াত। যা মুহসিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত। (সূরা লুকমান : ২-৩)।
ইহসান আল্লাহ তাআলার গুণ : ইহসান মূলত আল্লাহ তাআলার অতি মহান একটি গুণ। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ তাআলা মুহসিন; তিনি সবকিছুতে ইহসান পছন্দ করেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৮৬০৩)। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন : তিনি যেসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তার প্রত্যেকটিকে করেছেন ইহসানমণ্ডিত। (সূরা সাজদা : ৭)।
ইহসান সকল নবী-রাসূলের বৈশিষ্ট্য : সৈজন্য আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ বান্দা নবী-রাসূলগণ ছিলেন সবচেয়ে বড় মুহসিন। তাঁদের সকলের মাঝে ইহসানের গুণ সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। কোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীগণের প্রশংসায় বহুবার মুহসিন শব্দ উল্লেখ করেছেন। যেমন সূরা আনআমে বলেছেন : এটা ছিল আমার দলীল, যা আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম তার কওমের মোকাবিলায়। আমি যাকে ইচ্ছা উচ্চ মর্যাদা দান করি। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক (-এর মতো পুত্র) ও ইয়াকুব (-এর মতো পৌত্র)। তাদের প্রত্যেককে আমি হেদায়েত দান করেছিলাম। আর নূহকে আমি আগেই হেদায়েত দিয়েছিলাম এবং তার বংশধরদের মধ্যে দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকেও। এভাবেই আমি মুহসিনদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা আনআম : ৮৩-৮৪)।
এমনিভাবে সূরা ইউসুফ, কাসাস ও সাফফাতেও হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত মূসা (আ.), হযরত হারূন (আ.), হযরত ইউসুফ আ. ও হযরত ইলইয়াস আ.-কে মুহসিন বলে প্রশংসা করেছেন। আর সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তো আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তুষ্টি প্রত্যাশীদের জন্য ‘উসওয়াতুন হাসানা’ তথা উত্তম আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অতএব ইহসানের ক্ষেত্রেও উত্তম আদর্শ হলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর আবির্ভাবের পর তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ ব্যতীত মুহসিন হওয়া সম্ভব নয়।
ইহসান অর্থ : ইহসান অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর অর্থবহ একটি শব্দ। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (৮৫২ হি.) রাহ. সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বলেন : ইহসানের দুই অর্থ : এক. কাউকে উপকার পৌঁছানো। দুই. কোনো কাজ যথাযথভাবে সুন্দরভাবে ও সুচারুরূপে আঞ্জাম দেয়া। (ফাতহুল বারী, খ- ০১ পৃষ্ঠা ১৪৬, হাদীস ৫০-এর অধীনে)।
কোরআন-সুন্নাহ্য় ইহসান শব্দটি উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। তবে দ্বিতীয় অর্থে শব্দটি অধিক ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ কোনো কাজ সুন্দর করা ও সুচারুরূপে আঞ্জাম দেয়া। এখানে লক্ষণীয় হলো, হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. দ্বিতীয় অর্থের জন্য প্রতিশব্দ উল্লেখ করেছেন ইতকান এই ইতকান শব্দটিও কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলার প্রশংসায় ব্যবহৃত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে : তোমরা পাহাড়কে দেখে মনে কর তা আপন স্থানে স্থির, অথচ তা সঞ্চরণ করে, যেমন সঞ্চরণ করে মেঘমালা। এসবই আল্লাহর কর্ম-কুশলতা, যিনি সকল বস্তু সুদৃঢ়ভাবে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তোমরা যা-কিছু কর তিনি তা সম্যক অবহিত। (সূরা নামল : ৮৮)। যাহোক ইহসান ও ইতকান উভয়টিরই মূলকথা হলো, সুন্দরভাবে, সুচারুরূপে ও নিখুঁতভাবে কাজ আঞ্জাম দেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।