Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাকিস্তানের সিনেমা খেল খেল মে

পারস্পারিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা

আহমেদ তেপান্তর: | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

১৯৭১ নিয়ে পাকিস্তান বা ভারতে বেশ কিছু সিনেমা, নাটক তৈরি হলেও সেগুলোতে এক ধরনের প্রপাগাণ্ডা ছিলো বলে দাবি করেছেন মুক্তির অপেক্ষায় থাকা পাকিস্তানি সিনেমা ‘খেল খেল মে’র পরিচালক নাবিল কুরেশি। গত সোমবার ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমাটির টিজার মুক্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন তিনি। দেশটির গণমাধ্যম এই সিনেমাকে ‘নাবিলের উচ্চাভিলাষী’ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন। এটি হতে যাচ্ছে করোনা পরবর্তী মুক্তিপ্রতিক্ষীত পাকিস্তানের প্রথম সিনেমা। ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের টিজার প্রকাশের পর গণমাধ্যমের কাছে সিনেমাটির পরিচালক নাবিল আরো জানিয়েছেন, ইতিহাস নির্ভর অনেক সিনেমা বা নাটকে সেনাবাহিনীর হাত থাকলেও আমি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, আমার সিনেমায় এসবের কিছুই ছিলো না। সাধারণত এ জাতীয় সিনেমা নির্মাণের আগে সিনেমার চিত্রনাট্যের ব্যাপারে কলাকুশলীদের মতামত নিতে হয়, কিন্তু এ সিনেমাটি করার সময় তারা কোনো আপত্তি করেননি। বরং সিনেমাটি তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছেন। নাবিল কুরেশি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তান বা ভারতে অনেক সিনেমা হয়েছে। সেগুলোতে সত্যিকারের ইতিহাস উপেক্ষিত ছিলো। তারা কেবল শক্তিমত্তার বিচারে ইতিহাস বিচার করে হিরোইজম দেখাতেই কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করেছেন। কিন্তু এই প্রথম ইতিহাসের সত্যান্বেষণে আমরা কিছু করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, ইসলামাবাদ বা ঢাকার তরুণরা আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত হবেন। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সজল আলি এবং বিলাল আব্বাস ছাড়াও প্রবঢু অভিনেতা মেরিনা খানের পাশাপাশি শেহেরিয়ার মুনাওয়ার, জাভেদ শেখ এবং মানজার সেহবাই অভিনয় করেছেন। প্রকল্পের নেতৃত্বে পরিচালক-প্রযোজক জুটি নাবিল কোরেশি এবং ফিজ্জা আলী মির্জা রয়েছেন। পরিচালক জানান, ১৯৭১ সালে ঢাকার পতনের পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক মূলত ‘উড়ো খবরে’ অবিশ^াসের শক্ত পারদে গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম পারস্পারিক সেই অবিশ^াসের শেকল ভাঙতে চায়। এমন গল্প ভাবনা থেকেই একদল কলেজ ছাত্রের সত্যান্বেষণের মিশন সেলুলয়েডের ফিতায় ধারণ করা হয়েছে। নাবিল আরো দাবি করেন, আমরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধ সম্পর্কে যা শুনেছি তা পশ্চিমা বা ভারতীয় প্রচার থেকে এসেছে। আমি চেয়েছিলাম চলচ্চিত্রটি সত্যকে সামনে রাখুক, প্রচার নয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ একটি ‘জটিল’ বিষয় কারণ এটি একাধিক বর্ণনার মাধ্যমে বোঝা যায়। পাকিস্তানের অনেকের কাছে যা ঢাকার পতন, তা বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা মনে করে। তবে সিনেমাটির নির্মাতা নাবিল কুরেশি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ‘জেনেশুনে বুঝেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছি, কেবল ‘সত্য’কে জানতে; কোনো ধরনের ‘বিতর্ক’ বা ‘বিরোধ’ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়। কোরেশির মতে, ‘খেলা খেল মে’ থেকে মানুষের বিতর্ক সৃষ্টি করার উপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও, এটি মূলত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়ার পাশাপাশি এগিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়কে বোঝানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সিনেমাটির প্রযোজক ফিজ্জা আলী মির্জা প্রত্যাশা করে বলেন, আশা করছি, বাংলাদেশী দর্শকরা সিনেমাটির বক্তব্য বুঝতে পারবেন এবং এর যথার্থতা নিয়ে ভাববেন। ‘খেল খেল মে’ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করার দিকে একটি পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে কুরেশি তার সিনেমায় ১৯৭১-কে ‘উভয় পক্ষই ভুল’ বলে ইঙ্গিত করেছেন। ‘আমাদের অতীতকে ছেড়ে দিতে হবে, একে অপরকে ক্ষমা করতে হবে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে’, বলে মন্তব্য করেন এই নির্মাতা। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৯ নভেম্বর করোনা পরবর্তী পাকিস্তানজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘খেল খেল মে’। সিনেমাটি বিশ^ব্যাপী মুক্তির উদ্দেশ্যে ইংরেজি এবং আরবী ভাষায় সাবটাইটেল জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মুক্তি প্রতিক্ষিত এ সিনেমার ব্যাপারে ঢাকা থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খেল খেল মে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ