Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যশোরে তিন সরকারি স্কুলে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ

শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সারা দেশে এক নিয়ম, যশোরে ভিন্ন!

যশোর ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

যশোরের তিনটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সারা দেশে এক নিয়মে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হলেও শুধুমাত্র যশোরের তিনটি স্কুলে তা মানা হয়নি। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কৃষিশিক্ষা শিক্ষকদের সিনিয়রিটি দেয়ায় অন্য শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে বঞ্চিত শিক্ষকরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, যশোরের তিনটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়-যশোর জিলা স্কুল, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ৫ জন কৃষিশিক্ষা শিক্ষক রয়েছেন। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই পাঁচজনকে জ্যেষ্ঠতা দেয়ায় ২২ জন শিক্ষকের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে অভিযোগকারীদের দাবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১৯৯৫ সালে ৩৭৮ জন কৃষি শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা হয়। টেকনিক্যাল শিক্ষক হিসেবে তারা ১৪তম বেতন স্কেলে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। আর সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ ১০ম বেতন গ্রেডে যোগদান করে থাকেন। কৃষিশিক্ষার এই ৩৭৮ জন শিক্ষককে ২০০৪ সালের ১৪ জুন ১৪তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। ৯৫ সালে যোগদান করলেও ২০০৪ সালে ১০ম গ্রেড পাওয়ায় কৃষি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে পরবর্তীতে জটিলতা দেখা দেয়। বঞ্চিত শিক্ষকদের অভিযোগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই অনুশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশের পর সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো সে অনুযায়ী কৃষিশিক্ষা শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে দেন। শুধুমাত্র যশোরের তিনটি সরকারি বিদ্যালয় ওই নির্দেশনা মানেনি। যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১৩ জন শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কৃষি’র দুই শিক্ষককে সিনিয়রিটি প্রদান করা হয়েছে। যশোর জিলা স্কুলে ৮ জন শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে দু’জন শিক্ষককে সিনিয়রিটি প্রদান করা হয়েছে। আর মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষককে সিনিয়রিটি দিয়ে একজন শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
যশোর জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান জানান, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের অফিস অর্ডার হয়েছে, গেজেট হয়েছে। কিন্তু তারপরও সেটি’র লঙ্ঘন হচ্ছে। কাগজপত্র দেখলে যে কেউ সেটি বুঝতে পারবেন। কিন্তু কেন হচ্ছে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক কাজী শায়লা নার্গীস শাওন জানান, কৃষিশিক্ষকগণ ৯৫ সালে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। তারা সহকারী শিক্ষক হয়েছেন ২০০৪ সালে। আমরা সহকারী শিক্ষক হিসেবেই ২০০২ সালে যোগদান করেছি। সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতির গেজেটেও আমাদের সিনিয়রিটি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও স্কুলে এটি মানা হচ্ছে না। যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষিশিক্ষার সিনিয়র শিক্ষক গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, কৃষি শিক্ষকগণ ১৯৯৫ সালে যোগদান করেছেন। মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক ভুলের কারণে তাদের সহকারী শিক্ষক পদায়ন নিয়ে জটিলতা হয়েছে। ২০০৪ সালে মন্ত্রণালয় সেটি সংশোধন করেছে। কিন্তু এরপর মন্ত্রণালয় নতুন নির্দেশনা দেয়ায় এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতে গিয়েছি। উচ্চ আদালত সেটি খারিজ করে দিলেও পরবর্তীতে আপিলের পর্যায়ে রয়েছে।
যশোর জিলা স্কুল ও যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান জানান, জ্যেষ্ঠতা নিয়ে বিরোধে যদি স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, তাহলে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করবে। সিনিয়রিটি নিয়ে সমস্যা থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে সেটি অধিদফতর বা মন্ত্রণালয় নিরসন করবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ঢাকার সরকারি ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভুঁইয়া বলেন, জ্যেষ্ঠতা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা রয়েছে। মাওশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি জ্যেষ্ঠতার এই বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে। একই নিয়ম বহাল রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অফিস আদেশও দিয়েছে। ফলে ওই বিধি মেনেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে হবে। যদি আদালত বা মন্ত্রণালয় অন্যকোনো আদেশ জারি করে তাহলে এই বিধি পরিবর্তিত হতে পারে। তার আগে এটি লঙ্ঘনের সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাওশি) দপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক এ এস এম আব্দুল খালেক বলেন, জ্যেষ্ঠতা নিয়ে কোনো কোনো স্কুলে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এটির নিরসন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিন সরকারি স্কুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ