Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাইনালে চোখ পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চোখ পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। ম্যাচ জিতে তৃতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে চায় পাকিস্তান। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলা।

এবারের বিশ্বকাপে শেষ চারের লড়াইয়ে ফেভারিটের তকমাটা পাকিস্তানকেই দেয়া যায়। কারণ এবার তারা দূর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। দলের সব খেলোয়াড়ই রয়েছেন সেরা ফর্মে। সুপার টুয়েলভ পর্বে গ্রুপ-২ এর পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতে জয় পেয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে শতভাগ সাফল্য একমাত্র পাকিস্তানেরই। সুপার টুয়েলভে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করা, হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ কেড়ে নেয়া এবং অপরাজিত থাকা- বিশ্বসেরার তকমা পেতে যা যা করা প্রয়োজন এখন পর্যন্ত তার সবই করেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপ মঞ্চে প্রথমবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে এবারের আসর শুরু করে পাকিস্তান। সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাবর আজমরা ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেন বিরাট কোহলির দলকে।

ভারতকে সহজে হারালেও নিউজিল্যান্ড ও আফগনিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসের শেষদিকে চমক দেখিয়ে জয় পায় পাকিস্তান। প্রতিপক্ষের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেয় তারা। ওই দুই ম্যাচেই টর্নেডো ইনিংস খেলেন পাক ব্যাটার আসিফ আলি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে অপরাজিত ২৭ এবং আফগানদের বিপক্ষে ৭ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন আসিফ। আফগানিস্তান ম্যাচের ১৯তম ওভারে চার ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে চমক দেখান তিনি। এ দুই অসাধারণ ইনিংসের সুবাদেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ এ অক্টোবরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন আসিফ। টানা তিন ম্যাচ জিতে উড়তে থাকা পাকিস্তানের সামনে শেষ দুই ম্যাচে পুচকে নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ড পড়লে তাদেরকে হারাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি মোহাম্মদ হাফিজদের। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের শতভাগ সাফল্যের পেছনে বড় রহস্য ব্যাটার-বোলারদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক বাবর আজম। অধিনায়কত্ব ছাড়াও ব্যাট হাতে সফল তিনি। পাঁচ ইনিংসের ৪টিতে হাফসেঞ্চুরি করে এবারের আসরের সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের মালিক বাবর। এছাড়া বাবরের ওপেনিং পার্টনার মোহাম্মদ রিজওয়ানও আছেন তুখোড় ফর্মে। দুই হাফসেঞ্চুরিতে ২১৪ রান করেছেন তিনি। অন্যান্য ম্যাচে দুই বুড়ো মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের ভেল্কি তো ছিলই। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ১৮ বলে ৫৪ রানের টনের্ডো ইনিংস খেলে শোয়েব মালিক বুঝিয়ে দেন ‘পুরান চাল ভাতে বাড়ে’। বল হাতে দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হাসান রউফ আছেন সেরা ফর্মে। রউফ ৮ ও আফ্রিদি ৬ উইকেট শিকার করেছেন ইতোমধ্যে। দুই স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান রান আটকে প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টির কাজটি করেছেন ভালোভাবেই। সেমির আগ পর্যন্ত শাদাব ৫ ও ইমাদ ৪টি উইকেট শিকার করেছেন।

২০০৭ সালে টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় পাকিস্তানের। তবে ২০০৯ সালে ঠিকই শিরোপা ঘরে তোলে তারা। এরপর চার আসরে দু’বার সেমিফাইনাল খেললেও, ফাইনালের টিকিট পায়নি তারা। এবার ফাইনালে উঠার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না পাকিস্তানীরা। গতকাল তাই বললেন রিজওয়ান, ‘এখন পর্যন্ত যা পারফরম্যান্স, তাতে স্পষ্ট যে ফাইনালে ওঠার যোগ্য দল আমরাই। এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না।’

তবে সেমিতে পাকিস্তানের মতো ফেভারিট না হলেও অস্ট্রেলিয়াকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারাও ভালো খেলেই শেষ চারে এসেছে। সুপার টুয়েলভে ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও বাকি চার ম্যাচ জিতে ৮ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপ-১ এর রানার্সআপ দল হিসেবেই সেমিফাইনালে জায়গা পেয়েছে অজিরা। অবশ্য গ্রুপে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্টও সমান ৮ ছিলো। কিন্তু নেট রান রেটে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় সেমিতে উঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবারই ফাইনাল খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১০ সালের আসরে ইংল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হেরে শিরোপার কাছে গিয়েও তা স্পর্শ করা হয়নি অজিদের। তবে এবার শিরোপা খড়া কাটাতে চায় দলটি।

সুপার টুয়েলভে সুবিধা করতে পারেননি অজি ব্যাটাররা। শুধুমাত্র ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চই ব্যক্তিগত রান তিন অংকের ঘরে নিতে পেরেছেন। দুইটি হাফসেঞ্চুরিতে ৫ ইনিংসে ১৮৭ রান করেন ওয়ার্নার। হাফসেঞ্চুরি ছাড়াই ৫ ইনিংসে ১৩০ রান ফিঞ্চের। ওয়ার্নার-ফিঞ্চের পর তিন ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮০ রান করেন মিচেল মার্শ। পাকিস্তানকে হারাতে হলে জ্বলে উঠতে হবে অজি ব্যাটারদের। বিশেষভাবে স্টিভেন স্মিথ, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের। ওয়ার্নার রানের মধ্যে ফিরলেও, এখন কথা বলেনি ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট। পাঁচ ইনিংসে মাত্র ২৯ রান সর্বশেষ আইপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ম্যাক্সওয়েলের। তবে প্রতি ম্যাচেই জ্বলে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা। বিশেষভাবে স্পিনার এডাম জাম্পা। পাঁচ ইনিংসে ১১ উইকেট তার ঝুঁলিতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯ রানে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার জাম্পার। তার সঙ্গে তিন পেসার জশ হ্যাজেলউড ৮ টি, মিচেল স্টার্ক ৭ টি ও প্যাট কামিন্স ৪ উইকেট নিয়েছেন।

শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারাতে হলে খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে বলে স্বীকার করলেন ওয়ার্নার। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে হবে আমাদের। সুপার টুয়েলভে কেমন করেছে পাকিস্তান, তা সবাই জানে। তাই ফাইনালে খেলতে হলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন বিভাগেই জ্বলে উঠতে হবে আমাদের।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের পাল্লা ভারী পাকিস্তানের। ২৩ লড়াইয়ে পাকিস্তানের জয় ১৩ টি। অজিদের ৯টি। ১টি পরিত্যক্ত হয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে ছয়বারের দেখায় তিনটি করে সমান জয় পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি২০ কাপ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ