Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মুমিনদের প্রকৃত স্বরূপ কী?

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

একটি সমীক্ষা হতে জানা যায় যে, বর্তমানে গোটা বিশ্বে দেড় শত কোটির অধিক মুসলমান বসবাস করছে। এত অধিক সংখ্যক মুসলমানের মধ্যে যারা প্রকৃত মুমিন, তাদের জীবন চলার পথ কেমন হওয়া উচিত তা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। তবে এ পর্যায়ে জানা দরকার যে, মুমিন বলতে কাদের বোঝায়? আসুন, এবার এদিকে নজর দেয়া যাক। ‘মুমিন’ শব্দটি আরবী। এটা আরবী ‘আমনুন’ শব্দ হতে উৎসারিত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, যে বিশ্বাস করে, স্বীকৃতি দেয়, অথবা যে স্বীকার করে।

আর এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপনকারী। মহান রাব্বুল আলামীনের তরফ হতে নবী এবং রাসূলগণ যে হেদায়েত, পথ নির্দেশনা ও জীবনবিধান নিয়ে আগমন করেছেন, তা আন্তরিকভাবে সত্য বলে গ্রহণ করা, মুখে এই সত্যতার স্বীকৃতি প্রদান করা এবং তদনুযায়ী আমল করাকে ঈমান বলে। আর যে এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়, তাকেই মুমিন নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহতায়ালা এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর রাসূল, ফিরিশতা, আসমানী কিতাব, আখিরাত দিবস, তাকদীর এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপনকারীকে মুমিন বলা হয়।

যারা প্রকৃত মুমিন তাদের স্বরূপ আল্ কুরআনে এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যথা : (ক) মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, অতঃপর কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজেদের ধন সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সূরা হুজুরাত : আয়াত-১৫)।

(খ) মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের প্রতিপালকের ওপর একান্তভাবে ভরসা করে। (সূরা আনফাল : আয়াত-২)।

(গ) যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা হতে (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে। (৮ নং সূরা আনফাল : আয়াত-৩)। (ঘ) তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক। (সূরা আনফাল : আয়াত-৪)।

(ঙ) মুমিনদের বক্তব্য শুধু একথাই, যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদের আহ্বান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম, তারাই সফল কাম। (সূরা নূর : আয়াত-৫১)।

আর একথা স্বীকৃত সত্য যে, মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না। পরিবার, প্রতিবেশী, দেশ ও জাতির সঙ্গে মিলেমিশেই তার জীবন পরিক্রমা অনাগত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হয়। এ জন্য প্রয়োজন পরিবেশ ও অবস্থা অনুসারে পরস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, যা মুমিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এদের সম্পর্কে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা (নিরাশ্রয়কে) আশ্রয় দিয়েছে ও (অসহায়কে) সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক। (সূরা আনফাল : আয়াত-৭৪)।

(খ) নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় যে, তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। (সূরা হুজুরাত : আয়াত-১০)।

(গ) মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া অবিশ্বাসী কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যে এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোনো সম্পর্কই থাকবে না। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোনো ভয়ের আশঙ্কা থাকে (সে কথা আলাদা)। আর আল্লাহ তোমাদের তাঁর নিজের সম্পর্কে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই ফিরে যেতে হবে। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-২৮)।

মুমিনগণ ভাই ভাই হয়ে জীবন অতিবাহিত করে। পারস্পারিক শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রেখে চলে। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) হে ঈমানদারগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরকে নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দনাম কতই না নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না তারাই তো জালেম। (সূরা হুজুরাত : আয়াত-১১)।



 

Show all comments
  • তরিকুল ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৩৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না।’যিনি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করেন তিনিই মুমিন। মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালা কোরআনে জানিয়ে দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজমুল হাসান ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৩৭ এএম says : 0
    প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করেনি। তারপর প্রাণ ও অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী। -(সূরা আল হুজুরাতঃ ১৫)
    Total Reply(0) Reply
  • Mulla Tashfin ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৩৮ এএম says : 0
    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidul Islam ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৪০ এএম says : 0
    মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মোকদ্দমার ফায়সালা করেন, তখন তারা বলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। এ ধরনের লোকেরাই সফলকাম হবে। -(সূরা আন্ নূরঃ ৫১)
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rashadujaman ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৪০ এএম says : 0
    কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মুমিনের বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন