চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে হাটহাজারী পৌর এলাকার পশ্চিম দেওয়ান নগর রঙ্গিপাড়া ফজল হক সওদাগরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে ৬ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, আবু তাহের, শাহ আলম, মাবিয়া খাতুন, নুরুল আলম বাবুর্চি, নুর নাহার বেগম, ফোরক আহমদ। এসময় ৬ মাস বয়সী রোহান নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে নিহতের মা বৃষ্টি আক্তার, আনোয়ারা বেগম, ছনোয়ারা বেগম, লাকি আক্তার ও জানে আলম। আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তবে বৃষ্টি আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন। অগ্নিকাণ্ডে ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়।

সরেজমিনে জানা যায়, গত মঙ্গলবার আবু তাহেরের বসতঘরের একটি রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। শুষ্ক মৌসুম আর টিনসেড হওয়ায় আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যেই আসবাবপত্রসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক কাপড়ে সবাই বের হতে পারলেও আহতরা ঘরের ভেতর আটকে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠালেও শিশু রোহানকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আগুন লাগার পর পরই হাটহাজারী পিডিবিকে বার বার ফোন দিলেও তাঁরা রিসিভ করেনি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় বিদ্যুৎ চালু থাকায় স্থানীয়রা শুরুতে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবের নির্বাহী প্রকৌশলী নেওয়াজ আহাম্মেদ খাঁন জানান, আমাদের ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় পাবলিক ভুয়া খবর ছড়িয়ে ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতি করে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও এলাকাবাসী জানান, বাড়ির সামনের সরকারি রাস্তা (প্রবেশ পথ) অনেক প্রভাবশালীরা দখলে নেয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে আসতে পারেনি। এ জন্যেও ক্ষতির পরিমান বেড়েছে।

এসময় হঠাৎ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে এসকান্দর নামে এক ব্যক্তি বলেন, এখানে জায়গা দখলের কথা কেন আসছে? জায়গা দখল নিয়ে সাংবাদিকের কাজ কি? ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে দেখা গেছে প্রবেশ পথে ওই নেতার বিশাল বাড়ি। স্থানীয় অনেকে বলেন, মূলত এ জন্যই উনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথটি একেবারে সরু হওয়ায় চারশ ফুট দুর থেকে পানির ব্যবস্থা করতে হয়েছে। দুটি ইউনিট প্রায় দু’ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এদিকে সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় নিহত শিশুর দাফন কাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা এবং প্রতি পরিবারে দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন, নগদ ছয় হাজার টাকাসহ খাদ্য সহায়তা এবং ৫ টি করে কম্বল বিতরণ করেন।