পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারির কারণে সব ধরণের পেশাজীবীর অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে। এখন তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলা হচ্ছে। আগেই চাল-ডাল-তেল-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। নতুন করে তেলের দাম বৃদ্ধির আগুন নতুন করে আছড়ে পড়বে পণ্যমূল্যে। জীবন যাত্রাও বাড়বে ব্যয়। এ অবস্থায় বিরোধী দলের রাজনীতি যারা করছেন সেই দলগুলোর নেতাদের কানে কি গণমানুষের হাহুতাশ যাচ্ছে না? নাকি বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যেই তাদের দেশপ্রেম সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে?
চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে যখন সাধারণ মানুষের ‘চিড়ে-চেপ্টা’ অবস্থা তখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই দায় সারছে। জনস্বার্থে সরব হওয়ার ঘোষণা দিয়েও নেই কোন কার্যকর কর্মসূচি। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি তো দূরের কথা বিবৃতি দিতে দুই দিন সময় নিয়েছে বিএনপি। স্মরণসভা, সেমিনার, আলোচনা সভায় অন্যান্য বক্তব্যের সাথে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করছেন বিএনপি নেতারা। দেশের মানুষ যখন পরিবহন ধর্মঘটে জিম্মি, বিরোধী দলীয় নেতা যখন সিঙ্গাপুরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন জাতীয় সংসদের ‘বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টির নেতারা কক্সবাজারে ব্যস্ত সমুদ্র দর্শণে। এ যেন ‘রোম পুড়ে যায় আর নিরোর বাঁশি বাজানোর’ গল্প। বক্তৃতা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণফোরাম, বাম দলসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও। যদিও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি তারা বিবৃতি দিয়ে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন।
জনস্বার্থে বিএনপির কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা জীবন ঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাধারণ মানুষও বিএনপির কাছ থেকে এটিই আশা করে। তাদের দাবি স্বাভাবিক, কিন্তু আমাদের বিষয়টাও তাদেরকে বুঝতে হবে। ৭শ’ নেতাকর্মী গুম-খুন হয়েছে, ৩৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। এই অবস্থায় আমরা ফ্যাসিবাদের সাথে লড়াই করছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, জনগণের দল হলে এবং নির্বাচনের প্রতি বিশ্বাস থাকলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সরব হতে হবে। জনগণের সাথে সম্পৃক্ত এমন ইস্যুতে মাঠে থাকতে হবে, তাদেরকে বোঝাতে হবে আমরা তোমাদের কষ্টে সমব্যাথী, তোমাদের জন্য মাঠে নেমেছি। একই সাথে প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে ক্ষমতার পালাবদল হলে এসব ইস্যুর সমাধান করা হবে।
মৌলিক দাবিগুলো নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। গতকাল রোববার রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ে সাইদুল নামে এক রিক্সাচালক বলেন, সরকার সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছে কিন্তু অন্যদলগুলো কিছুই করছে না। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে কয়দিন পর মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। তিনি বলেন, এরশাদ মারা গেছে জাতীয় পার্টিও আর নেই। এখন বিএনপিকে একাই যা করার করতে হবে।
শাহজাদপুরে চায়ের দোকানে কয়েকজন মানুষ বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারাদেশে বিএনপির এত সমর্থন কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছে না। সরকার একের পর এক জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে কিন্তু এগুলো নিয়ে তাদের কোন আন্দোলন নেই। তাদের একজন বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে যত ইস্যু দিয়েছে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে এর একটি পেলেই বিএনপির খবর করে দিত।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মিটিংয়ে আমরা দ্রব্যমূল্য-জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। জাতীয় পার্টি জনগণের ইস্যুতে নিরব ভূমিকা পালন করে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবাদের ভাষা একেক ক্ষেত্রে একেক রকম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করলে প্রতিবাদ হয় না। আমরা প্রেসক্লাব, প্রেসব্রিফিংয়ে, সংসদে কথা বলছি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা তো কর্মসূচির মধ্যেই আছি। দূর্গাপূজায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় আমাদের কর্মসূচি ছিল। এরপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে প্রায় প্রতিদিনই কর্মসূচি হচ্ছে। গত ১৪-১৫ দিন ধরেই এসব হচ্ছে। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিগুলো শেষ হলে আগামীকাল বা পরশু ডিজেল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
বর্তমান বাস্তবতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গণতন্ত্রের আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এগুনো যাবে না, এটা নিশ্চিত। আন্দোলন করতে হলে জনগণের নিত্যদিনের দাবি নিয়েই মাঠে নামতে হবে। সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র আর ভোটাধিকারের জন্য খুব একটা উদগ্রীব নয়। ন্যূনতম বেঁচে থাকার দাবি আছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের, সমস্যা আছে সাধারণ মানুষদের। শিক্ষায়-চিকিৎসায়-যোগাযোগে কিংবা কোটি বেকারত্বের চিহ্নিত সমস্যা আছে। বিগত দশ বছরে ক’বার নেমেছে বিএনপি জনগণের এসব মৌলিক দাবি নিয়ে। গণতন্ত্র ভোটাধিকারকে মানুষ এখন ক্ষমতার পালাবদল হিসেবেই দেখছে।
তিনি বলেন, সরকার পতনের ডাক দিলেও কাজ হবে না। জনসংযোগ না বাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন আর বিবৃতি দিয়ে কোনো আশাব্যঞ্জক ফলাফল নিযে আসতে পারবে না তারা। ভারতের মতো লাল পতাকার মিছিলে বাংলাদেশ ছেয়ে দিতে পারবে না বামপন্থি দলগুলো হয়তো, তাদের মিছিল দিয়ে বাংলাদেশ অচলও করে দিতে পারবে না। কিন্তু বামদলগুলো অন্তত জ্বলছে টিম টিম করে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিংবা ঐক্যফ্রন্টসহ অন্যান্য যে জোটগুলো আছে তারা একত্রিত হয়ে জ্বলে উঠতে পারত, কিন্তু তারা তা করছে না।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দাবি এখন আন্দোলন দাঁড় করাতে হলে জনগণের মৌলিক দাবি নিয়েই আগাতে হবে, কারণ ক্ষমতার পালাবদলের রাজনীতিতে মানুষের আস্থা নেই। টিকে থাকতে হলে বিএনপিকে সে পথেই আগাতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরপরই বিবৃতি দিয়ে আমাদের দলের মহাসচিব তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এছাড়া আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন সভায় জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কথা বলছি, বক্তব্য দিচ্ছি। জনস্বার্থের ইস্যুতে বিএনপির কর্মসূচি দিতে দেরি হয় এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনটিতেই দেরি হয় না। আমরা আগামীকাল জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করবো। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।