বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হুযুর আকরাম (সা.)-এর গর্দান শরীফের বর্ণনায় ইবনে আবি হালা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, হুযুর আকরাম (সা.)-এর গর্দান মোবারক রৌপ্যের মতো স্বচ্ছ-উজ্জ্বল ও পুতুলের মতো ছিল।
নবী কারীম (সা.)-কে পুতুলের মতো শিল্পিত গঠনের সাথে উপমা দেওয়াটা বাহ্যত আদবের খেলাফ বলে মনে হয়, কিন্তু পুতুলের মধ্যে যে নিপুণতা ও শৈল্পিক দিক ফুটে ওঠে, সেদিকে লক্ষ করে এ তুলনা উপস্থাপন করা হয়েছে। নেহায়া কিতাবে এরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। শামায়েলে তিরমিযীর টীকায় বর্ণনা এসেছে : ‘দুময়াতুল গযালী’- ‘দুময়াত’ হরিণকে বলা হয়। অন্য বর্ণনা অনুসারে ‘দুময়াত’ হরিণের বাচ্চাকে বলা হয়। তবে অভিধানের গ্রন্থসমূহে এরকম উল্লেখ নেই। আল্লাহ পাক এ ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত।
হাদীস শরীফে ব্যবহৃত ‘ফি ছফায়িল ফিদ্দতি’ বাক্যটি দ্বারা গর্দান মোবারকের গুণাবলি প্রকাশ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়ার অন্য এক বর্ণনায় উক্ত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গর্দান মোবারক এমন শুভ্র ছিল, যেন তা রুপা দিয়ে তৈরি। এ সমস্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, হুযুর আকরাম (সা.) এর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে এটি ছিল একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
বাজু ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী স্থানকে কাঁধ বলা হয়। হুযুর পাক (সা.)-এর কাঁধ মোবারকের বর্ণনায় এসেছে : ‘বায়িদুন মা বাইনাল মানকিবাইনি’ অর্থাৎ, তাঁর স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যে দূরত্ব ছিল। আবার এ ‘বায়িদুন’ শব্দটিকে ‘বুয়াইদুন’ তথা ‘তাছগীর’ পড়া যায় (ক্ষুদ্র অর্থবোধক বিশেষ্য) হিসাবেও পড়া হয়- অর্থাৎ, অল্প দূরত্ব ছিল। কেউ কেউ আবার উক্ত বর্ণনার ব্যাখ্যা করেছেন, প্রশস্ত বক্ষের অধিকারী। বস্তুত বক্ষের প্রশস্ততা, সে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যার বর্ণনা এরকম এসেছে- বক্ষ প্রশস্ত ও দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব। এ দু’টি বৈশিষ্ট্যই একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেহেতু এ দু’টি বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন দু’খানি অঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত, সেহেতু তার বর্ণনা আলাদাভাবে পেশ করা হয়েছে।
হুযুর আকরাম (সা.)-এর বক্ষ মোবারক প্রশস্ত এবং দর্শনীয় ছিল। এই যে বর্ণনা, এটা হুযুর আকরাম (সা.) এর বাহ্যিক দৈহিক কাঠামোর বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত; তাই এরূপ বর্ণনা এসেছে। অন্যথায় তাঁর অভ্যন্তরীণ যে হৃদয়, তার বর্ণনা তো পবিত্র কালামে এরকম প্রদান করা হয়েছে : ‘আলাম নাশরাহ লাকা সাদরাকা’ অর্থাৎ, হে আমার বন্ধু, আমি কি আপনার বক্ষ সম্প্রসারিত করিনি?
মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে হুযুর পাক (সা.)-এর পবিত্র কলবের বর্ণনাও দেওয়া হয়েছে। যেহেতু কলব হচ্ছে একটি বাতেনি অঙ্গ। আর এখানে তাঁর জাহেরি সুরত নিয়ে আলোচনা উদ্দেশ্য নয়। তাই গবেষণা ও চিন্তার মাধ্যমে তা বুঝতে হবে। কেননা, কোনো বর্ণনায় কলব সম্পর্কে এরূপ বর্ণনা এসেছে : ‘আযিমু মাশাশীল মানকিবাইনি ওয়াল কাতিদী’।
‘আল কাতিদী’ শব্দটির কাফ বর্ণে যবর ও তা বর্ণে যের দিয়ে পড়লে অথবা তা বর্ণে যবর দিয়ে পড়লে তার অর্থ হয়- ওই স্থান, যেখানে স্কন্ধদ্বয় এসে মিলিত হয়েছে। আর ‘মুশাশ’ শব্দটির মিম বর্ণে পেশ দিয়ে পড়লে অর্থ হবে ঘাড়ের হাড়, যা মাথার সঙ্গে মিলিত। তখন বর্ণনার অর্থ দাঁড়ায়, হুযুর পাক (সা.) বিশাল স্কন্ধের অধিকারী ছিলেন।
এ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, হুযুর আকরাম (সা.) এর পেট ও বক্ষ উভয়ই সমান ছিল- অর্থাৎ, বক্ষ পেটের চেয়ে উঁচু ছিল না, আবার পেটও বক্ষ থেকে স্ফীত ছিল না- উভয় অঙ্গই সমান সমান, স্বাভাবিক ছিল। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) এর বর্ণিত হাদীসে যে বর্ণনা এসেছে, তার ব্যাখ্যা হচ্ছে, প্রশস্ত উদর। আর এ বৈশিষ্ট্যটি চওড়া বক্ষর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে কোনো কোনো ব্যাখ্যাকার উদর ও বক্ষ সমান হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। হুযুর আকরাম (সা.)-এর পেট মোবারকের বর্ণনায় হযরত উম্মে হানী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পেট মোবারক দর্শন করেছি। তাঁর পেট মোবারক ছিল সুবিন্যস্ত কাগজের মতো- অর্থাৎ, খুব মসৃণ ও সুন্দর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।