Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শোষণের শিকার জেলেরা

দুবলারচর শুঁটকিপল্লী বিশাল জলরাশিতে কান্না শোনার কেউ নেই

সাখাওয়াত হোসেন, দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে ফিরে : | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বঙ্গোপসাগরের পাড়ে সুন্দরবনের মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া চরগুলোকে সম্মিলিতভাবে দুবলার চর বলা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলেরা সেখানে জড়ো হয়েছেন সমুদ্র মোহনা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ শেষে তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করনে। এতে প্রায় ৬ হাজার জেলেসহ সম্পৃক্ত হয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার কর্মজীবী মানুষ।

দুবলার চরে গড়ে উঠা বিশাল শুঁটকিপল্লিতে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, খলিসা, ইছা, ভেদা, পোঁয়াসহ অন্তত ১০০ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি করা হয়। গত তিন বছর ধরে দুবলার চরের শুঁটকিপল্লিতে নৌদস্যুদের চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। অনেকটা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে দুবলার চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হচ্ছে। তবে প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তিদের চাঁদা আদায় এবং জেলেদের নানাভাবে শোষণের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই। বিশাল জলরাশির মধ্যে তাদের কান্না শোনার কেউ নেই। অথচ এই মাছ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি বিদেশেও বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদী-খাল রয়েছে। এবার শুঁটকি তৈরিতে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমে আহরিত হয়েছিল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন এবং তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা। এখানকার শুঁটকি নিয়ে যান চট্টগ্রামের আড়ৎদাররা।

দুবলার চর ঘুরে ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, র‌্যাবের কাছে নৌদস্যুদের আত্মসমর্পণে পর থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে এখন আর বড় কোনো সমস্যা নেই। তবে বিশাল এই জলরাশি নৌদস্যুমুক্ত হলেও প্রভাবশালীদের হাত থেকে মুক্ত হয়নি। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে অনেকটাই বন্দি জেলেরা। সাগরে মোহনার অনেক অংশের চাঁদা না দিলে সাধারণ জেলের মাছ ধরার সুযোগ নেই। এমনকি প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিদের বাইরে অন্য কারো কাছে মাছ বা শুঁটকি বিক্রি করাও বেশ কঠিন এদের নির্দেশের বাইরে। এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যতম ‘ক‘ অধ্যাক্ষরের এক ব্যক্তি। পারিবারিক পরিচিতি এবং সমাজের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের নাম ভাঙিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চর এবং এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধিসহ অনেকের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পান না জেলেরা।
আব্দুল গফুর নামে একজন জেলে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা নৌদস্যুমুক্ত হলেও এখন গডফাদার মুক্ত হতে পারেনি। মৎস্যজীবীর পাশে তেমন কেউ নেই। গডফাদাররা নানা কায়দায় জেলেদের শোষণ করছে। ‘ম’ ও ‘ট’ অধ্যাক্ষরের গডফাদাররা আমাদের নানাভাবে নির্যাতন করছে। আমাদের যে মাছ বাজারে ৭৫০ টাকা কেজি, সেই মাছ ওই গডফাদারদের নির্ধারিত মাহাজনের কাছে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। বাজারে যে মাছ বিক্রি হয় ৫০০ টাকা তা ওই চক্র দেয় ২০০ টাকা। আমাদের নানাভাবে মহসিনুল হাকিম সাহায্য করেছেন।
সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খালে এখন জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে জাল ফেললেই দাঁতনে, কাইন, তাইরেল, ভেটকি, রয়না, পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এতে জেলেরাও খুশি। জোয়ার-ভাটার সাথে সম্পৃক্ত মাছ ধরার বিষয়টি। সুন্দরবনের আশপাশে বাংলাদেশের জলসীমানায় রয়েছে মাছের বিশাল আধার। বিশেষ করে নীলবাড়ি এলাকায় জালে ধরা পড়ে অনেক মাছ। এখানে মাছ ধরাও অনেকটা সহজ। আর এতে চোখ পড়েছে বিদেশি জেলেদের। মাঝে মধ্যে বিদেশি জেলেরা এদেশের জলসীমায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বিদেশি জেলেদের এসব অপতৎপরতা দমনে সদা জাগ্রত রয়েছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

দুবলার চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. সুলতান মাহমুদ পিন্টু গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ চরের শুঁটকি ও কাঁচা মাছ ব্যবসায়ীরা কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে এক ধরনের জিম্মি হয়ে আছেন। ওই প্রভাবশালী চক্র কাঁচা মাছ বিক্রিসহ নানা কৌশলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। তদন্ত করে এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ী মো. সুলতান মাহমুদ পিন্টু। তিনি আরো বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে অনেক সময় আমি নিজেও নানা সমস্যা মোকাবিলা করেছি এবং এখনও করছি।

এদিকে দুবলার চরের শুঁটকিপল্লীতে গড়ে উঠেছে ‘নিউমার্কেট’। চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও জেলেদের নিত্যদিনের বাজার, বিনোদন আর অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান এই ‘নিউমার্কেট’। দুবলার চরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা জেলে পল্লীর একটু ভেতরের দিকে শতাধিক দোকান নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট।

এ চরে ফার্মেসির দোকান ও ডাক্তারও সেখানে আছেন। আগে প্রতিটি দোকানের জন্য নৌদস্যুদের কাছ থেকে টোকেন নিতে হতো। আর এই টোকেনের জন্য ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হতো। নইলে উঠিয়ে নিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করতো দস্যুরা। গত তিন বছর ধরে সেই পরিবেশ আর নেই। এখন নৌদস্যুদের উৎপাতমুক্ত এলাকা এটি। তবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এ জন্য টাকা দিতে হয়।
জেলেরা জানান, ২৬ অক্টোবর নৌকা ও ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনের দুবলারচরের শুঁটকি পল্লীর উদ্যেশে রওনা দিয়ে ২৭ অক্টোবর পৌঁছে যান। দুবলার চরে পল্লীতে জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করেছেন। খুলানা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, সাতক্ষীরার তালা, শ্যামনগর, আশাশুনি, পিরোজপুর, বরগুনার বিভিন্ন এলাকা থেকে শুঁটকি পল্লীতে এসে অস্থায়ী বসতি গড়েছেন। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বাছাই করে জাত অনুযায়ী মাছগুলো শুঁটকি করে থাকে।

রামপালের সুন্দরপুর গ্রামের জেলে আফতাব উদ্দিন মীর বলেন, শুঁটকি পল্লীতে পুরো দমে কাজ শুরু হয়েছে। মরা গোনের মধ্যেও ভালো মাছ পেয়েছি।


রূপচাঁদা, লইট্টা, তেলো পাইস্সা, ছুরিসহ নানা রকমের মাছ পেয়েছি। গোন যদি এসে ধরতে পারতাম তাহলে আরও বেশি মাছ পাওয়া যেত। চরে আসা অধিকাংশ জেলেরা লোন নিয়ে এখানে এসেছেন। মাছ না পেলে তাদের লোকসান শুনতে হবে। আমাদের দাবি পাস পারমিট অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে দেওয়া হোক। তাহলে আমরা গোন ধরতে পারব। মাছও বেশি পাব।
শুঁটকি ব্যবসায়ী কবির হোসেন মিন্টু বলেন, এখানে জেলেদের থাকতে কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় জেলেদের থাকার নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। সাইক্লোন সেল্টার থাকলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। শুঁটকি ব্যবসায়ী আল মামুন বলেন, বঙ্গোপসাগর অনেক সুন্দর একটা জায়গা। এখানে হাজার হাজার মানুষ আসে অর্থ উপার্জনের জন্য। তারা এখানের মাছের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। এই দুবলার চরে যারা আসেন তারা নিজেদের মতো পরিশ্রম করেন। যার কারণে এখানে কোনো প্রকার ঝগড়া বিবাদ এমনকি হাতাহাতিও নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুবলারচর শুঁটকিপল্লী

৭ নভেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->