বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঝড় জলোচ্ছ্বাস আর ভিনদেশি জেলেদের আগ্রাসনের শঙ্কা মাথায় নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সাগরগামী জেলেরা। গত মঙ্গলবার ভোর রাতে হাজারও জেলে মোংলার পশুর নদীর চিলা মোহনা থেকে একত্রে জাল-নৌকা ও শুঁটকি তৈরির উপকরণ নিয়ে সাগর পাড়ের দূর্গম চরাঞ্চল ও সমুদ্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। এ শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এ বছরও সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে অন্তত ত্রিশ হাজার জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদী বনবিভাগ। সেই সাথে বাড়বে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ খাতে বনবিভাগের রাজস্ব আয়ও। তবে সুন্দরবন এলাকায় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবার কিছুটা সময় পিঁছিয়ে শুরু হলো সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের মৌসুম। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির জন্য সাগর পাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবে। এছাড়া বৃহত্তম চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও পৌঁছাবে দুবলার চর অঞ্চলে।
পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মো. মহসিন হোসেন (ডিএফও) এবং পূর্ব সুন্দরবনের ডিএফও মো. বেলায়েত হোসেন জানায়, মৌসুমের শুরুতেই রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ। মোংলা থেকে নদী পথে দুবলার জেলে পল্লীর দূরত্ব প্রায় ১২০ কি.মি.। সুন্দরবন সংলগ্ন এ পল্লীর সব কর্মকাণ্ড জেলে ও মৎস্যজীবীদের ঘিরে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৩টি মৎস্য আহরণ প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলার জেলে পল্লী। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সূত্রে আরো জানা যায়, মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির জন্য এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোর কোল, মেহেরখালী এবং শ্যালারচরসহ বেশ কয়েকটি চরে তারা পরিদর্শনসহ স্থান নির্ধারণ করেছেন।
অপরদিকে জেলেদের অভিযোগ, পূর্বে দুবলার চরে যাওয়ার পথে এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে হতো তাদের। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় এখন দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা থাকলেও ভিনদেশি জেলে নামের দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। তারা সরাসরি জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ বা জেলে বহরে মারধর, লুটপাট না করলেও যে আশায় দেশি জেলেরা সমুদ্রে যাত্রা করেছে তা আগের থেকেই লুটে নিচ্ছে ভারতীয় জেলেরা। গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌসুম। তাই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এখানে দেশি জেলেরা সাগরে বা সাগরের গহীনে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা বসে ছিল না। তারা ভারতীয় সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে শত শত ফিশিং ট্রলার এ দেশের ইলিশ ধরে নিয়েছে হরহামেশা। তারপরেও দেশি জেলেরা শুটকি আহরণের জন্য সমুদ্রে যাত্রা করছে গত ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে। চলতি মৌসুমে জেলেরা যাতে সাগরে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার ও শুটকি তৈরি করতে পারে সে জন্য প্রশাসনকে নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জেলে ও মহাজনেরা।
মৎস্যজীবীদের বৃহৎ সংগঠন দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন জানান, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভিন্নদেশি জেলেদের উৎপাতের সংখ্যা ও দেশি মৎস্য ভান্ডার লুটের আতঙ্ক মাথায় নিয়েই উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমী জেলেরা জাল, নৌকা ও মাছ আহরনের উপকরণ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছেন। কোস্টগার্ড পশ্চিমজনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফ্টেন্যান্ট কমান্ডার শেখ মেছবাহ উদ্দীন আহমেদ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় সব সময় দস্যুদমন, বনজ সম্পদ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অভিযান অব্যাহত থাকে।
অপরদিকে শরণখোলা রেঞ্জের ককিলমুনি ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ সালেহীন মিঞা ওরফে কিবরিয়ার অবৈধ ব্যবসা চলছে। তিনি রামপালের পেরি এলাকার মাছ ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়ে সুন্দরবনের টিআর চর, আদা গুড়ড়ুড়ি, গাববাড়িয়া, খেজুরার চর (অভয়ারণ্য) মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আরো জানা যায়, ঐ ক্যাম্পের মাঝি মো. আলী এলাকা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকায় তার মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেহেতু প্রতিমাসে কোস্টগার্ড পরিবর্তন হয় কিন্তু মাঝি পরিবর্তন হয় না। সেই সুবাদে মাঝিই সব অপকর্মের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেন। উল্লেখ্য, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় বিশেষ করে কালিরচর, সিচখালী, নীলকোমল, পাটকোষ্টা, ভোমরখালী এলাকায় দিদারছে কাঠি জালের মাধ্যমে (চরঘেরা) অবৈধভাবে মাছ শিকার অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি পশ্চিম সুন্দরবনের ডিএফও ড. আবু নাসের মো. মহসিন হোসেন ও পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেনের মাধ্যমে অবৈধ মাছ শিকার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সুন্দরবন অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।